Ajker Patrika

বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত জনজীবন

যশোর প্রতিনিধি
আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০২১, ১৮: ৩৪
বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত জনজীবন

টানা চার দিনের বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে যশোরের জনজীবন। রোজগার কমেছে খেটে খাওয়া মানুষের। পানি জমেছে জেলা শহর ও গ্রামের নিচু এলাকায়।

সাধারণ মানুষের পাশাপাশি এতে বিপাকে পড়েছেন কৃষিজীবীরাও। এদিকে নিত্য দিনের কাজে বের হওয়াদের বেশির ভাগকেই ভিজতে হয়েছে বৃষ্টিতে। তার ওপর হিমেল হাওয়া কাঁপন ধরিয়েছে বাইরে আসা মানুষের শরীরে।

গত শুক্রবার সকাল থেকে টানা চার দিন সূর্যের দেখা মেলেনি যশোরে। এরই মাঝে শনিবার থেকে শুরু হয় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি।

সেই সঙ্গে ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বয়ে চলে হিমেল হাওয়া। এ সময়ে প্রায় সারা দিনই কুয়াশার চাদরে ঢেকে ছিল প্রকৃতি। গতকাল সোমবার বিকেল পর্যন্ত যশোরে এ অবস্থা বিরাজ করছিল।

যশোর বিমানবাহিনীর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রোববার সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় যশোরে ১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আর সোমবার সকাল ৬টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ২২ দশমিক ২ মিলিমিটার।

আবহাওয়া অফিস আরও জানিয়েছে, আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময়ে মেঘ কেটে গেলেও জেঁকে বসতে পারে শীত। এদিকে গতকাল যশোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস; যা আগের দিনের থেকে শূন্য দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।

শীতের শুরুতে হঠাৎ করেই বৃষ্টি আর হিমেল বাতাসে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হতে পারছেন না মানুষ। এতে আয় কমেছে সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের। বিপাকে পড়েছেন ধান কাটতে আসা দিনমজুরেরাও।

বৃষ্টি আর বিরূপ আবহাওয়া উপেক্ষা করে দিনভর কাজ করেও কাঙ্ক্ষিত আয় ঘরে নিতে পারেননি তাঁরা।

রিকশা চালক আমিনুর রহমান বলেন, ‘সকালে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বাড়িত্তন বের হইছি। অহন দুপুরেও বৃষ্টি হইচ্ছে। ভাড়া বেশি হয়নি। পাইছি মাত্র ৪০ ট্যাকা। যা পাইছি তা দিয়া চাইলইতো কেনা যাইবো না। আগের দুদিনও এরাম গেছে।’

চা দোকানি আরমান হোসেন বলেন, ‘বৃষ্টিতে মানুষ বাইরে আসছেন না বেশি। যেখানে প্রতিদিন ৪–৫ শ টাকার বেচাকেনা হয়, সেখানে ২ শ টাকাও হচ্ছে না।’

চাকরিজীবী শুভ রহমান বলেন, ‘মার্কেটিংয়ে কাজ করি। বৃষ্টিতে ভিজলাম, নাকি শীতে পড়লাম, সেটা অফিস দেখতে চায় না। তাঁরা চান কাজ। সুতরাং বাধ্য হয়ে ভিজে ভিজেই কাজ করছি।’

যশোর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা আলেয়া বেগম বলেন, ‘ডাক্তার দেখাতে আইছি। টিকিটের জন্যি লাইনে দাঁড়াই রইছি। এর মধ্যি বৃষ্টি শুরু হইছে। টিকিট না নিয়ে তো যাতি পারছি না।’

যশোর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. আরিফ আহমেদ জানিয়েছেন, আবহাওয়া পরিবর্তন আর হঠাৎ বৃষ্টিতে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই। গত কয়েক দিনে যশোর সদর হাসপাতালে এসব রোগে আক্রান্ত রোগীর চাপ বেড়েছে। বিশেষ করে বহির্বিভাগে গড়ে প্রতিদিন শতাধিক মানুষ ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা নিচ্ছেন।’

এদিকে টানা বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ায় কিছুটা শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা। বিশেষ করে মসুর, সরিষাসহ শীতকালীন সবজির আবাদকারীরা রয়েছেন উৎকণ্ঠায়।

তবে এখনই আতঙ্কিত না হতে কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছে কৃষি বিভাগ।

যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘যে বৃষ্টিপাত হয়েছে তা মাটিতে শুষে নিয়েছে। ফলে আপাতত শঙ্কার কিছু নেই।’

তিনি বলেন, ‘যদি আরও দু’একদিন এ অবস্থা থাকে তাহলে মসুর, সরিষা, ফুল কপি, বাঁধা কপিসহ মাটিতে থাকা ফসলগুলোর কিছুটা সমস্যা দেখা দিতে পারে।’

কৃষি কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘বৃষ্টির পানি যদি মাঠে উঠে যায়, তাহলে ড্রেনেজ লাইন তৈরি করে তা সরিয়ে ফেলতে হবে। এ সময় কোনো সমস্যা দেখা দিলে প্রয়োজনীয় সার কিংবা কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের ৪ বিচারকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিল যুক্তরাষ্ট্র

প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণার পর যা বলল ইইউ

আপনাদের সঙ্গে হাত মেলাব না, বিস্ফোরক তামিম

কাগজে-কলমে মেয়র হওয়ায় দায়িত্ব পালন করলাম: জাতীয় ঈদগাহ পরিদর্শন শেষে ইশরাক

এপ্রিলে নির্বাচন ঘোষণায় বিএনপি ও জাতির প্রত্যাশা পূরণ হয়নি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত