Ajker Patrika

এক সড়কে অনিরাপদ বনশ্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮: ৪৫
এক সড়কে অনিরাপদ বনশ্রী

রাজধানীর বনশ্রীতে অছিম পরিবহনের একটি বাসের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকসহ দুজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও দুজন গুরুতর আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার বেলা ১১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন অটোরিকশাচালক স্বপন (৩৫) এবং যাত্রী ফাতেমা আক্তার (৪০)। এ ঘটনায় ফাতেমার দুই সন্তান শাকিব (১৭) ও শাকির (৮) গুরুতর আহত হয়েছে।

ঘটনাস্থল থেকে হতাহতদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসেন আরিফ নামের এক অ্যাম্বুলেন্সচালক। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘বনশ্রীর ফেমাস হাসপাতালের সামনে বাস ও অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। পরে স্থানীয়রা হতাহতদের উদ্ধার করে আমার অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেয়। ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার পর চিকিৎসকেরা অটোরিকশাচালক স্বপনকে মৃত ঘোষণা করেন। গুরুতর আহত ফাতেমাকে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এক ঘণ্টা পর তিনিও মারা যান।’

স্বজনদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, নিহত ফাতেমার স্বামী শাহ আলম দুবাইপ্রবাসী। ছেলেদের নিয়ে সানারপাড় থেকে অটোরিকশায় করে উত্তরায় বোন আমেনার বাসায় যাচ্ছিলেন ফাতেমা। নিহত অটোরিকশাচালক স্বপন ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার গঙ্গাপুর গ্রামের মৃত শহীদের সন্তান। স্ত্রী ও এক সন্তান নিয়ে তিনি কাফরুলের ইব্রাহিমপুরে থাকতেন।

খিলগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুজিত কুমার সাহা বলেন, অটোরিকশাকে চাপা দেওয়া বাসটি জব্দ করা হলেও চালক পালিয়ে গেছেন। তাঁর নাম-পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। তাঁকে গ্রেপ্তারে কয়েকটি টিম কাজ করছে। এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। নিহতদের স্বজনেরা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও জানান, ফাতেমার দুই ছেলের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। তাদের মধ্যে একজন ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন, অন্যজনকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

এদিকে বনশ্রী এলাকার প্রধান সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের বেপরোয়া গতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ জানিয়ে আসছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা বলছেন, ব্যস্ত এই সড়কে দিনরাতে যাত্রীবাহী যানবাহন থেকে শুরু করে পণ্যবাহী ট্রাক-লরিও চলাচল করে। যে সংখ্যক যানবাহন চলাচল করে, সেই তুলনায় সড়কটি বেশ সরু। এর মধ্যে আবার এই রাস্তা ঘেঁষে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তাই এই সড়কে নিত্যদিনই দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে বনশ্রী হাউজিং সোসাইটির মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল কালাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, বনশ্রী আধুনিক একটি আবাসিক এলাকা। কিন্তু বর্তমানে আমাদের হাউজিংয়ে পাশের প্রধান সড়কের কারণে অনিরাপদ বোধ করছি। তিনি জানান, বনশ্রী হাউজিংয়ের নকশা করার সময় এই রাস্তা হাউজিংয়ের প্রধান সড়ক হিসেবে ব্যবহার করার কথা। কিন্তু পরে রাস্তাটি সরকার নিয়ে নেয়। তখন বলা হয়েছিল, এই রাস্তায় সাধারণ গণপরিবহন এবং ছোট যানবাহন চলাচল করবে। কিন্তু পরে এই রাস্তা ঢাকার অন্যতম প্রবেশপথ হয়ে ওঠে। বিভিন্ন জেলার পণ্যবাহী ভারী যানবাহন এই রাস্তা ব্যবহার করে ঢাকায় ঢুকছে। আবার ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টারের গাড়িগুলোও এখন এই রাস্তায় আসে। এমন অবস্থায় পরিবার-পরিজন নিয়ে এই রাস্তায় চলাচল করতে অনিরাপদ বোধ করেন বলেও জানান মালিক সমিতির এই নেতা।

এ ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে জানতে চাইলে আবুল কালাম বলেন, বিষয়টি নিয়ে সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সঙ্গে বেশ কয়েকবার কথা বলেছি। তাঁরা জানিয়েছেন, এটি সরকারি রাস্তা। তাই এ নিয়ে তাঁদের কিছু করার নেই। আজ দুজনের মৃত্যু হয়েছে, যেকোনো সময় আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বিষয়টি নিয়ে তাই ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানান কালাম।

ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের মতিঝিল বিভাগের রামপুরা জোনের সহকারী কমিশনার তানভির রহমান আজকের পত্রিকাকে জানান, বনশ্রীর এই রাস্তা নিরাপদ রাখতে তাঁরা কাজ করছেন। বিভিন্ন পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা কাজ করছেন। ওই রাস্তায় যেহেতু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল রয়েছে, তাই স্পিডব্রেকার বসানোর চেষ্টা চলছে।

পণ্যবাহী ভারী যান চলাচল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই রাস্তায় ভারী যানবাহন চলাচল করে রাতে। ওই সময় সাধারণ পথচারীদের জন্য রাস্তাটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। তবে সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত কোনো পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করতে পারবে না। কেউ এ নিয়ম ভাঙলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত