Ajker Patrika

ঝুঁকিতে পশু স্বাস্থ্য, প্রতারিত খামারি

রেজা মাহমুদ, সৈয়দপুর (নীলফামারী)
আপডেট : ১৯ মে ২০২২, ১৭: ৪৯
ঝুঁকিতে পশু স্বাস্থ্য, প্রতারিত খামারি

নীলফামারীর সৈয়দপুরে বেড়ে গেছে নিবন্ধনহীন পশু চিকিৎসকের সংখ্যা। এঁদের অনেকেই রেজিস্ট্রেশনহীন কোম্পানির ওষুধ বিক্রি করছেন। তা ছাড়া পশুর জন্য অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন। এতে একদিকে হুমকিতে পড়েছে পশু স্বাস্থ্যসেবা, অন্যদিকে প্রতারিত হচ্ছেন খামারিরা। তাঁরা জানান, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের কিছু কর্মকর্তার সঙ্গে এসব চিকিৎসকের যোগসাজশ রয়েছে। এ কারণে কর্তৃপক্ষ জেনেও তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না।

তবে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শ্যামল কুমার আজকের পত্রিকাকে বলেন, যাঁরা নিবন্ধন ছাড়া চিকিৎসা কার্যক্রম করছেন, ইতিমধ্যে তাঁদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। মানবিকতার কারণে কাজের অনুমতি পেলেও তাঁরা শুধু ভিটামিন দিতে পারবেন। অ্যান্টিবায়োটিকসহ অন্য কোনো ওষুধ ব্যবহার করতে পারবেন না। যদি কেউ এর ব্যতিক্রম করেন, তাহলে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে পশুর চিকিৎসায় উপজেলা ভেটেরিনারি কার্যালয়ের চিকিৎসকদের পরামর্শ নেওয়ার জন্য খামারিদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

জানা গেছে, উপজেলায় নিবন্ধনধারী পশু চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র নয়জন। বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল ২০১৯ সালের আইনের ১৭ ধারা অনুযায়ী নিবন্ধন ও সনদ ছাড়া কেউ পশু চিকিৎসাসেবা দিতে পারবেন না। একই আইনের ৩৫ ধারায় আইন অমান্যকারীকে তিন বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং দুই লাখ জরিমানা করার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল প্রাণী চিকিৎসা-সম্পর্কিত একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে। এতে নিবন্ধনহীন পশু চিকিৎসকদের চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধসহ তাঁদের আইনে সোপর্দ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ আইনকে উপেক্ষা করে নিবন্ধন ছাড়াই উপজেলায় তিন শতাধিক চিকিৎসক বিভিন্ন এলাকায় পশু চিকিৎসা দিচ্ছেন।

বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলায় প্রতিটি পাড়া ও মহল্লায় ছোট-বড় ৫ থেকে ২০টি গরু-ছাগল কিংবা হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে। এসব খামারকে টার্গেট করে বিভিন্ন গ্রাম ও হাট-বাজারে ভেটেরিনারি কলেজ কিংবা সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতার সনদ ছাড়াই পশু চিকিৎসা কার্যক্রম চালান অনেকেই। এসব হাতুড়ে পশু চিকিৎসকের কেউ কেউ ফার্মেসিও দিয়েছেন।

যেখানে মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিম্নমানের ওষুধ বিক্রি করছেন তাঁরা। বড় বড় সাইনবোর্ডে নিবন্ধনহীন পশু চিকিৎসকদের নাম। তাঁদের কেউ কেউ প্যাড ও ভিজিটিং কার্ডে নামের আগে ‘ডাক্তার’ শব্দও ব্যবহার করছেন। যা প্রাণী স্বাস্থ্যসংক্রান্ত আইনের লঙ্ঘন।

উপজেলার খাতামধুপুর গ্রামের রোকসানা খাতুন নামে এক খামারি বলেন, ‘আমি এ বছর তিনটি গাভি নিয়ে ছোট আকারে খামার শুরু করেছি। গত সপ্তাহে আমার একটি গাভির পাতলা পায়খানা হয়। আমাদের গ্রামের এক পশু চিকিৎসককে দেখাই। তিনি যে ওষুধ দেন, তা খাওয়ানো শুরু করি। কিন্তু দুই দিন পরই গাভিটি মারা যায়।’

শহরের গোলাহাট এলাকার আব্দুর রশিদ নামে একজন জানান, তাঁর খামারে ৬টি গাভি ও ১০টি ছাগল রয়েছে। পশু হাসপাতালের চিকিৎসকদের সময়মতো পাওয়া যায় না। তাই যখনই গরু-ছাগল অসুস্থ হয়, তখন এলাকার এক পশু চিকিৎসকের কাছে ছুটে যান। তিনি আরও বলেন, ‘ওই চিকিৎসকের নিবন্ধন কিংবা ভেটেরিনারি সনদ আছে কি না, তা আমার জানা নাই।’

সৈয়দপুর ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাঈদ আজিজ বলেন, উপজেলা ভেটেরিনারি কার্যালয়ের পশু চিকিৎসকদের নিয়মিত খামার পরিদর্শনের কথা থাকলেও তাঁরা করেন না। এ সুযোগে সার্টিফিকেট ছাড়া পশু চিকিৎসকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ওই চিকিৎসকেরা অপ্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করছেন। এতে পশুর স্বাস্থ্যসেবা হুমকিতে পড়ছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১০০ বছর পর জানা গেল, ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস মোয়াজ্জেমকে অব্যাহতি

ঘন ঘন নাক খুঁটিয়ে স্মৃতিভ্রংশ ডেকে আনছেন না তো!

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত