Ajker Patrika

দুর্নীতির দায়

সম্পাদকীয়
দুর্নীতির দায়

বুধবারের আজকের পত্রিকার তৃতীয় পৃষ্ঠায় দুটি খবর বেরিয়েছে। একটি খবরে দেখা যাচ্ছে, পুলিশের মহাপরিদর্শক বা আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, বাংলাদেশ পুলিশ কখনো কোনো ব্যক্তির দায় বাহিনী হিসেবে নেবে না। অন্য খবরটিতে দেখা যাচ্ছে, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেছেন, দুর্নীতিবাজদের বয়কট করুন সামাজিকভাবে।

আইজিপি ঠিকই বলেছেন, ব্যক্তির দুর্নীতির দায় কেন একটি বাহিনী নেবে? কিন্তু এখানে যে প্রশ্নটি এখনো উত্তরহীন হয়ে রয়েছে তা হলো, পুলিশের উচ্চপদে থাকাকালে কেউ যদি কোনো দুর্নীতি করে থাকেন, তাহলে চাকরিরত অবস্থায় কেন তাঁকে শনাক্ত করা যায় না? বেশ কিছু প্রামাণ্য ঘটনা রয়েছে, যেখানে উচ্চপদে থাকা কর্মকর্তারা পদের প্রভাব খাটিয়েই দুর্নীতি করে থাকেন। যখন ক্ষমতাবান ব্যক্তি দুর্নীতি করেন, তখন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অন্যরা একেবারে অন্ধকারে থাকেন, এটা মেনে নেওয়া কঠিন। যদিও আইজিপি বলেছেন, ব্যক্তির দুর্নীতির দায় বাহিনী নেবে না, কিন্তু চাকরিরত অবস্থায় কেন সেই পদস্থ ব্যক্তির দুর্নীতির খবর প্রকাশিত হয় না, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা যদি আইজিপি বলতেন, তাহলে ভালো হতো। দুর্নীতি এখন যেভাবে ডালপালা মেলে প্রকাশিত হচ্ছে, তাতে নৈতিক জায়গাটা ভেঙে পড়েছে, এর দায় শুধু ব্যক্তিকে দিলে চলে না। এই অনাচার যেন না চলে, তার প্রতিকারের যথাযথ ব্যবস্থা বাহিনী বা প্রতিষ্ঠানের মধ্যেও থাকা দরকার।

অন্যদিকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান যে কথা বলেছেন, তাতে তাঁকে সাধুবাদ জানাতে হয়। একই সঙ্গে প্রশ্ন করতে হয়, যাদের সামাজিকভাবে বয়কটের কথা বলা হচ্ছে কিংবা যাদের জবাবদিহির আওতায় এনে শাস্তির কথা বলা হচ্ছে, তারা কি ধরাছোঁয়ার ভেতরের মানুষ? দেখা যাচ্ছে, একসময় দুর্নীতিবাজেরা প্রকাশ্যে আসতে লজ্জা পেত, সামাজিকভাবে তাদের ব্যাপারে ঘৃণা বলবৎ থাকত, পরিবারের কাছে তারা নিজের দুর্নীতির কথা লুকিয়ে রাখত। এখন কিন্তু যার হাতে ক্ষমতা থাকবে, সে দুর্নীতি করলে তা জায়েজ হয়ে যাবে—এ রকম একটা গোপন নৈতিকতা স্খলনের ঘটনা ঘটে গেছে। ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে শুধু দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি আখের গুছিয়ে নেন না, সেই আখের গোছানোর কথা পরিবার জানে এবং সেই দুর্নীতির সঙ্গে পরিবারের লোকজনও যুক্ত হয়ে পড়ে। এটি খুবই ভয়াবহ ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দেয়।।

আমরা দেখতে পাচ্ছি, দুর্নীতি দমন কমিশন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ এবং তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়েকে সম্পদের হিসাব দাখিলের জন্য নোটিশ জারি করেছে। একইভাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আলোচিত কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদেরও সম্পদ বিবরণী বা হিসাব দাখিল করতে বলেছে তারা। এই দুজন ক্ষমতাধর ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগমতে তাঁদের পরিবারও তাঁদের দুর্নীতির অংশ হয়েছে। এটা কি শুধু এ দুই পরিবারের ক্ষেত্রে সত্য? আরও অনেক পরিবার কি এই রেসে শামিল হয়নি?

এ কথাও সত্য, ওপরমহলে সদিচ্ছা থাকলে যেকোনো অন্যায়ের রাশ টেনে ধরা সম্ভব। আমরা দুর্নীতিহীন সমাজের প্রতীক্ষায় থাকব। কিন্তু সে জন্য মানসিকতার পরিবর্তন খুবই প্রয়োজন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শ্বশুরকে জামাতার ফোন: ‘আপনার মেয়েকে মাইরা ফেলছি, লাশ নিয়ে যান’

টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ দিতে ব্যর্থ দুদক: আইনজীবী

স্ত্রীকে হত্যার পর লাশ সেপটিক ট্যাংকে ফেলে গেলেন ইমামতি করতে

ঢাবির সিন্ডিকেটে সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের চূড়ান্ত অনুমোদন

ঐতিহাসিক শিমলা চুক্তি বাতিল করল পাকিস্তান, এর প্রভাব কী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত