Ajker Patrika

মজুরি না পেয়ে বিপাকে কর্মসৃজনের শ্রমিকেরা

বদরগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ০৮ মার্চ ২০২২, ২০: ৩৮
Thumbnail image

রিকশার প্যাডেলে ভর করে পাঁচ সদস্যের সংসার চালাতেন আব্দুল হাকিম (৪০)। যাত্রী তেমন না পাওয়ায় ঊর্ধ্বমুখী দ্রব্যমূল্যের বাজারে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তিনি। পরে রিকশা ছেড়ে দৈনিক ৪০০ টাকা মজুরি পাওয়ার আশায় ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচির আওতায় কাজ করেন আব্দুল হাকিম। উৎসাহ নিয়ে মাটি কাটার কাজ শুরু করেন তিনি। কাজ করার সময়ে জানতেন, এক সপ্তাহ পর পর রকেটের মাধ্যমে মোবাইলে টাকা পাবেন। এ আশায় চাল, ডালসহ অন্যান্য কাঁচাবাজার কিনতেন বাকিতে। টাকা পেলেই দোকানের বাকি পরিশোধ করার কথা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কাজের টাকা না পাওয়ায় কথা রাখতে পারেননি আব্দুল হাকিম। এ কারণে তাঁকে আর কেউ বাকিতে পণ্য দিচ্ছেন না। এ অবস্থায় পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তিনি।

আব্দুল হাকিমের বাড়ি বদরগঞ্জ উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের বিলের পাড় গ্রামে। তিনি কর্মসৃজন কর্মসূচির আওতায় কাজ করছেন। গতকাল সোমবার তাঁর কাজের ৩৮ দিন অতিবাহিত হয়েছে। আর মাত্র দুই দিন কাজ করলে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। এখনো মজুরির এক টাকাও পাননি তিনি। গতকাল সোমবার কথা হয় আব্দুল হাকিমের সঙ্গে।

তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘হামরা গরিব মানুষ, দিন করি দিন খাই। তাই কোথাও টাকা ধার পাই না। বাকিতে খরচও পাই না। মাটি কাটার কাজ করার কারণে ৫-৭ দিন বাকিতে খরচ পাইছি। সময় মতন টাকা দিবার না পারায় আর বাকিতে খরচ পাচ্ছি না। পরিবারকে নিয়ে কষ্টে আছি।’ শুধু আব্দুল হাকিমেই নয়, তাঁর মতো উপজেলার এক হাজার ৫৭১ জন শ্রমিকের একই অবস্থা।

উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে এক হাজার ৫৭১ জন শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ৪০০ টাকা। এতে দুই কোটি ৫১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কর্মসৃজনের ৯০টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। গত ৮ জানুয়ারি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। শ্রমিকেরা সকাল নয়টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত প্রকল্পের আওতায় মাটি কাটার কাজ করেন।

আমরুলবাড়ি বালাপাড়া গ্রামের মছুদা বেগম (৪৫) কাজ করছেন ওই প্রকল্পে। তিনি জানান, তাঁর তিন ছেলে মেয়ে। স্বামী শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় ভারী তেমন কাজকর্ম করতে পারেন না। লজ্জা ফেলে মাটি কাটার কাজ নেন মছুদা। তিনি বলেন, ‘কাজের শুরু থেকে শুনছি, মোবাইলে টাকা ঢুকবে। দিন শেষে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকি কিন্তু টাকা পাচ্ছি না। অনেকটাই না খেয়ে মাটি কাটার কাজ করছি।’

লোহানীপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ডলু শাহ বলেন, ‘লোহানীপাড়া ইউনিয়নে ১৬২ জন শ্রমিক কর্মসৃজনের আওতায় কাজ করছেন। এবার টাকার পরিমাণ দ্বিগুণ হওয়ায় শ্রমিকেরা প্রথমে উৎসাহ নিয়ে মাটি কাটার কাজ শুরু করেন। কিন্তু দীর্ঘদিন কাজ করেও টাকা না পেয়ে তাঁরা অনেকটাই উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন। প্রকল্প তদারকি করতে গেলে শ্রমিকেরা টাকার জন্য ঘিরে ধরেন। টাকা না পাওয়ায় তাঁরা পরিবার নিয়ে কষ্টে আছেন, তাঁদের দিকে তাকালে নিজেরও খারাপ লাগছে।’

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) বাবুল চন্দ্র রায় বলেন, ‘আগে শ্রমিকদের ব্যাংক হিসাব নম্বরে টাকা দেওয়া হতো। তাঁরা প্রত্যেক সপ্তাহে ব্যাংক থেকে তা তুলতে পারতেন। কিন্তু এখন আর সেই বিধান নেই। এবার নতুন করে শ্রমিক নিয়োগ করা হয়েছে। তাঁরা বাড়িতে বসে রকেটের মাধ্যমে মোবাইলে টাকা পাবেন। আমরা শ্রমিকদের যাবতীয় তথ্যসহ মোবাইল নম্বর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দিয়েছি।’

ইউএনও আবু সাঈদ বলেন, ‘শ্রমিকেরা বাড়িতে বসে মোবাইলে কাজের টাকা পাবেন। প্রথমে এ প্রক্রিয়া চালু করতে একটু সময় লাগে। একবার হয়ে গেলে আর তাঁদের হয়রানি হতে হবে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত