Ajker Patrika

সিরাজদিখানের পাতক্ষীর ইউরোপ-আমেরিকায়

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, সিরাজদিখান (মুন্সিগঞ্জ)
সিরাজদিখানের পাতক্ষীর ইউরোপ-আমেরিকায়

মুন্সিগঞ্জের মিষ্টিজাতীয় খাবারের সুনাম ছড়িয়ে আছে দেশের খাদ্যপ্রেমী মানুষের মধ্যে। এই অঞ্চলের মিষ্টি খাবারের মধ্যে অন্যতম পাতক্ষীর। এই সুস্বাদু মিষ্টি তৈরি করে সিরাজদিখান উপজেলার রশুনিয়া ইউনিয়নের সন্তোষপাড়া গ্রামের ঘোষ পরিবারগুলো।

সম্প্রতি সন্তোষপাড়া গ্রামে পাতক্ষীর তৈরি দেখতে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, আনুমানিক ২০০ বছর আগে পুলিন বিহারী দেব ও তাঁর স্ত্রী প্রথম নিজ বাড়িতে পাতক্ষীর তৈরি করেন। এরপর ধীরে ধীরে সেটি বাজারে বিক্রি শুরু করেন পুলিন বিহারী।

মৃত্যুর পর এখন তাঁর উত্তরসূরিরা পাতক্ষীর তৈরি করছেন। মূলত দুধ জ্বাল দিয়ে প্রথমে ক্ষীর তৈরি করা হয়। এই ক্ষীর কলাপাতায় মুড়িয়ে পরিবেশন করা হতো বলে প্রথম দিকে এর নামকরণ করা হয় পাতাক্ষীর। পরে পরিচিতি পায় পাতক্ষীর হিসেবে।

পাতক্ষীরের এখনকার কারিগরেরা জানান, প্রথমে সামান্য আঁচে দুধ গরম করে ঢালা হয় বড় কড়াইয়ের মতো দেখতে তাফালে। এরপর এক ঘণ্টা সেই দুধ জ্বাল দিয়ে কিছুটা ঘন করে মেশানো হয় হলুদগুঁড়া। আবারও আধা ঘণ্টা ধরে জ্বাল দেওয়ার পর যোগ করা হয় চিনি।

দুধ, হলুদ আর চিনির মিশ্রণ ঘন হয়ে এলে অনবরত নাড়তে নাড়তে প্রস্তুত করা হয় ক্ষীর। এরপর তাফাল থেকে সুবিধাজনক পাত্রে ঢেলে মাটির পাতিলে গরম-গরম ক্ষীর তুলে রাখা হয়। এগুলোর ওজন হয় প্রায় আধা কেজি করে। ঘণ্টাখানেক পর ঠান্ডা হলে ক্ষীরের পাতিলগুলো নেওয়া হয় দোকানে। সেখানে পাতক্ষীর কলাপাতায় মুড়িয়ে বিক্রি করা হয়। বর্তমানে এর দাম ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা।

রশুনিয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জয়ন্ত ঘোষ বলেন, সন্তোষপাড়া গ্রামে একমাত্র তাঁদের পরিবার এই ঐতিহ্যবাহী খাবার তৈরি ও বাজারজাত করে আসছে। তাঁর পূর্বপুরুষেরা রাত জেগে মাটির চুলায় মণে মণে দুধ জ্বাল দিয়ে এটি তৈরি করতেন। সিরাজদিখান বাজারে তাঁদের প্রতিষ্ঠান রাজলক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভান্ডারে বিক্রি হয় পাতক্ষীর; বিশেষ করে শীত মৌসুমে প্রবাসীদের কাছ থেকে অনেক ক্রয়াদেশ আসে তাঁদের কাছে। জয়ন্ত ঘোষ জানান, ইউরোপ-আমেরিকার বাঙালি কমিউনিটির অনেক বিখ্যাত মিষ্টিপণ্যের দোকান বা সুপারশপেও বিক্রি করা হয় পাতক্ষীর। তা ছাড়া শীতকালে নতুন জামাইকে পিঠা-পুলির সঙ্গে এ ক্ষীর খেতে দেওয়া এই অঞ্চলের দীর্ঘদিনের চল।

সিরাজদিখান বাজারের রাজলক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভান্ডারে বর্তমানে তিন ভাই ব্যবসা পরিচালনা করছেন। তাঁরা হলেন শরৎ ঘোষ, মাধব ঘোষ ও খোকন ঘোষ। মাধব ঘোষ বলেন, তাঁর ভাই প্রয়াত সুনীল ঘোষ মিষ্টির দোকানটি চালু করেছিলেন। তিনি ছিলেন পাতক্ষীর তৈরির প্রধান কারিগর। ভাইয়ের কাছ থেকে তাঁদের ক্ষীর বানানোর হাতেখড়ি। বংশপরম্পরায় পাতক্ষীর তৈরির প্রক্রিয়া ও প্রচলন চলে গেছে সেই পরিবারের তিন ভাই ও তাঁদের সন্তানদের কাছে। বর্তমানে ঘোষ পরিবার ছাড়াও উপজেলার আরও কয়েকটি পরিবার পাতক্ষীর তৈরি ও বিক্রি করেন।

মহাগুরু মিষ্টান্ন ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী সুশান্ত ঘোষ জানিয়েছেন, সিরাজদিখানের পাতক্ষীরের আলাদা সুনাম ও কদর রয়েছে। তাঁদের নিজস্ব কারখানায় কারিগরেরা এটি তৈরি করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশকে ভেঙে ফেলার আহ্বান ত্রিপুরার রাজপরিবার প্রধানের

পরিবারের সামনে পুলিশ কর্মকর্তা লাঞ্ছিত, স্বেচ্ছাসেবক দলের ৩ নেতা-কর্মী আটক

নয়াদিল্লি হাসিনা আমলের দৃষ্টিভঙ্গিই ধরে রেখেছে: ভারতীয় গণমাধ্যমকে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

বিমসটেক সম্মেলনে ড. ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদি বৈঠক হচ্ছে

গ্রেপ্তার আসামিকে ছিনিয়ে নিতে পুলিশের ওপর হামলা, বিএনপির ১৭ নেতা-কর্মী আটক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত