Ajker Patrika

দুশ্চিন্তায় ঝিনাইদহের বাগান মালিকেরা

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
আপডেট : ২৫ মার্চ ২০২২, ১৬: ১৫
Thumbnail image

নির্ধারিত সময় পেরোলেও ঝিনাইদহের বিভিন্ন উপজেলার আমবাগানগুলোতে আসেনি কাঙ্ক্ষিত মুকুল। এতে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বাগান মালিকেরা। তাঁরা বলছেন, বাগানের ৩০ শতাংশ গাছে আসেনি মুকুল। কৃষি বিভাগ বলছে, এ গাছগুলোতে আর মুকুল আসবে না।

সাধারণত বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আমগাছে মুকুল আসে। মুকুলের ম ম গন্ধে ভরে যায় আশপাশ। জেলায় হিম সাগর, আম্রপালি, ল্যাংড়া জাতের আম বেশি চাষ হয়ে থাকে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের পরও যেমন মুকুল আসেনি, তেমনি কিছুদিন আগের শিলাবৃষ্টিতে ঝরেছিল গাছের মুকুল। এ ছাড়া গত বছর মেলেনি আমের কাঙ্ক্ষিত দাম, যা কৃষকের চিন্তাকে বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত বছর জেলায় ৬ হাজার ৯৩৭টি বাগান থেকে ৩৩ হাজার ৫১১ মেট্রিক টন আম সংগ্রহ করা হয়েছিল। জেলার গান্না, চণ্ডীপুর, কোটচাঁদপুরের মঙ্গলপুরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, যে বাগানের গাছগুলোতে মুকুল এসেছে তাঁর অবস্থা অনেক ভালো। সেখানে সকাল থেকে বিকেল অবধি পরিচর্যায় রত রয়েছেন বাগান মালিকেরা। কেউ মুকুলে ওষুধ ছিটাচ্ছেন, কেউ বা গাছের গোড়ার মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখতে পরিষ্কার করে দিচ্ছেন আগাছা। কেউ বা ঘুরে ঘুরে দেখছেন বাগানের মুকুলের সর্বশেষ অবস্থা। কোথাও মুকুলের পরিবেশ খারাপ দেখলে কিংবা পোকার সংক্রমণের লক্ষণ দেখলে ছিটাচ্ছেন প্রয়োজনীয় কীটনাশক।

ঝিনাইদহ সদরের চণ্ডীপুর গ্রামের আমবাগানে কাজ করা শ্রমিক নয়ন হোসেন জানান, গাছের গোড়া থেকে নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করছেন। আগাছা না থাকলে গাছের গোড়ার মাটি শুকাবে না। চণ্ডীপুর গ্রামের আমবাগান মালিক আব্দুস সামাদ জানান, এবার বাগানের মুকুলের অবস্থা আশানুরূপ না। এর কারণ, আবহাওয়া খারাপ। তাঁর ৪টি বাগানের চার শতাধিক গাছ রয়েছে। এর মধ্যে সন্তোষজনক মুকুল আছে ৫০ ভাগ গাছে। আর মুকুল এবার শেষের দিকে এসেছে। শেষের দিকে মুকুল আসলে তা টিকতে চায় না। তবুও মুকুল রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি আরও জানান, গত বছর আমের বাজারদাম একেবারেই কম ছিল। ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি বা তারও কম দামে আম বিক্রি করেছিলেন। গত বছর অনেকেরই উৎপাদন খরচ ওঠেনি।

কাশিপুর এলাকার বাগান মালিক আমির হামজা বলেন, ‘সাধারণত একটি মৌসুমে বাগানে পরিচর্যা বাবদ ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়। আর ফলন ও দাম ভালো পেলে খরচের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি লাভ হয়। এবার মুকুল কিছুটা কম এসেছে। যদি আবহাওয়া খারাপ না হয়, তাহলে কিছুটা লাভ আসবে।’ 
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জুনায়েদ হাবিব বলেন, ‘আমে সাধারণত দেখা যায়, এক বছর ফলন ভালো হলে পরের বছর ফলন কম হয় বা একেবারেই হয় না। এখনো যেসব গাছে মুকুল আসেনি, নতুন করে সেসব গাছে মুকুল আসার সম্ভাবনা নেই। বর্তমানে যে গাছগুলোতে মুকুল রয়েছে, সেখানে ভালোভাবে পরিচর্যা করলে ফলনের কোনো ঘাটতি হবে না।’ যে গাছগুলোতে মুকুল রয়েছে সেখানে কীটনাশক স্প্রে না করে মুকুলে আমের ছোট ছোট গুটি আসলে তখন কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেন এ কর্মকর্তা।

জুনায়েদ হাবিব জানান, আমগাছের গোড়া থেকে ৪-৫ হাত দূরে দূরে ২০ থেকে ২৫ দিন পর পর সেচ প্রয়োগ করে মুকুলে গুটি আসলে, সেখানে এমওপি, টিএসপি ও বোরন প্রয়োজনীয় অনুপাতে প্রয়োগ করতে হবে। তাহলে ফলনের হার অনেক বৃদ্ধি পাবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত