Ajker Patrika

কাতারের ফুটবল উৎসব সফলে শামিল প্রবাসীরাও

ফারুক মেহেদী, কাতার থেকে
কাতারের ফুটবল উৎসব সফলে শামিল প্রবাসীরাও

বাংলাদেশ বিশ্বকাপ ফুটবল খেলছে না, তাতে কী? কাতারজুড়ে বিশ্ব ফুটবলের এই মেগা উৎসব বাংলাদেশের সরব উপস্থিতি রয়েছে। খেলাকেন্দ্রিক যাবতীয় আনন্দ আয়োজনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা যেন সামনের সারিতে। উৎসবকে নানাভাবে রাঙিয়ে দিচ্ছেন তাঁরা। প্রায় সাড়ে ৪ লাখ প্রবাসী কাতারে। তাঁদের প্রাত্যহিক কাজই এর সাক্ষ্য দিচ্ছে।

কাতারে ২২ বছর ধরে আছেন ব্যবসায়ী সোহেল আহমেদ। নির্মাণ খাতের সেবা, উপকরণ সরবরাহ ও রেস্টুরেন্ট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তিনি। তাঁর প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের অনেক কর্মী কাজ করেন। বিশ্বকাপ খেলা উপলক্ষে এরই মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তাঁর পরিচিত শুভাকাঙ্ক্ষী, বন্ধু ও আত্মীয়স্বজন কাতারে এসেছেন অন্তত ১০ জন। ২০ নভেম্বর থেকে এই অতিথিরা তাঁর তত্ত্বাবধানে কাতারে এসে খেলা দেখছেন। তাঁদের কেউ কেউ আবার ফিরে গেছেন, পরে আবার আসবেন। অতিথিদের হায়া কার্ড প্রক্রিয়াকরণ থেকে শুরু করে তাঁদের আবাসনের ব্যবস্থা, বিমানবন্দর থেকে নিয়ে আসা, খেলার মাঠে পৌঁছে দেওয়া, আপ্যায়ন—সবই সোহেল আহমেদ একা সামাল দিচ্ছেন। আলাপকালে বললেন, ‘খেলাটাকে আমরা বিশাল সুযোগ হিসেবে দেখছি। বিশ্বকাপ ফুটবল কাতারে হয়তো আর কোনো দিন নাও আসতে পারে কিংবা আমরা নাও থাকতে পারি। দুর্লভ আয়োজনের আনন্দ তাই সবাই মিলে উপভোগ করছি।’

কাতারের রাজধানী দোহা, আল ওকারা, নাজমা, মাইজার, আজিজিয়াসহ বিভিন্ন স্থানের আরও অনেক প্রবাসীর সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা উপলক্ষে তাঁরা সকাল সকাল কাজ শেষ করছেন। কাজ শেষ হলে আত্মীয়স্বজনদের নিয়ে খেলা দেখতে বেরিয়ে পড়ছেন। যাঁদের টিকিট রয়েছে, তাঁরা স্টেডিয়ামে বসে সরাসরি খেলা দেখতে পারছেন। আর যাঁদের টিকিট নেই, তাঁরা শহরের বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত বড় স্ক্রিন বা ফ্যান কর্নারে গিয়ে খেলা দেখতে পারছেন। সাধারণত যাঁদের কাতার সরকার অনুমোদিত হায়া কার্ড রয়েছে, তাঁরা অবাধে কাতারে ঘোরাঘুরিসহ সংশ্লিষ্ট সব সেবা পাচ্ছেন। তাঁদের জন্য ফ্রি বাস ও মেট্রো ট্রেনে চলাচলের সুবিধা রয়েছে।

যাঁদের নিজের গাড়ি রয়েছে, তাঁরা স্বজনদের নিজের গাড়ি করে স্টেডিয়ামে যাওয়াসহ ঘোরাঘুরিতে সহায়তা করতে পারছেন। কাতারে খেলা উপলক্ষে প্রায় ১৫ লাখ পর্যটক ও সমর্থক আসার কথা রয়েছে। তাঁদের জন্য যেসব হোটেলের ব্যবস্থা রয়েছে, প্রয়োজনের তুলনায় তা সীমিত। হায়া কার্ডের মাধ্যমে একজন সচ্ছল প্রবাসী তাই একাধিক দর্শককে পৃষ্ঠপোষক করার সুযোগ রয়েছে। এ সুযোগের কারণে বাংলাদেশ থেকে অনেকেই খেলা দেখতে এসেছেন কাতারে।

গতকাল মাইজারের বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকায় সরেজমিনে বিভিন্ন ব্যবসায়প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশি মালিকদের সঙ্গে কথা হয়। স্থানীয় রেস্তোরাঁর ম্যানেজার আবদুল কুদ্দুছ বলেন, ‘খেলাটি সফলভাবে শেষ করতে কাতার সরকার কিছু জায়গায় কড়াকড়ি আরোপ করেছে, কাজের ক্ষেত্রেও কিছু কড়াকড়ি আছে; কিন্তু এতে আমাদের কাজে খুব একটা প্রভাব পড়েনি।’

জানা যায়, কাতার সরকার বিরাট এই আয়োজনটি সফলভাবে শেষ করতে কাজ করছে। এসব কাজে বাংলাদেশিরা নানাভাবে যুক্ত রয়েছেন। খেলা ৩২ দেশের হলেও এটা মনে হওয়ার কোনো কারণ নেই যে বাংলাদেশ কোনোভাবেই এ খেলার সঙ্গে নেই। বরং কাতারের খেলাটি প্রবাসীরা নিজের উৎসব মনে করে ব্যস্তজীবনে আনন্দ, বিনোদন ও প্রশান্তির উপলক্ষ হিসেবেই দেখছেন। পছন্দের দেশ বা সমর্থন ভিন্ন হলেও উৎসব-আয়োজনে সবাই কাতারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত