Ajker Patrika

কীটনাশকে কমছে দেশি মাছ

অষ্টগ্রাম (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৬ অক্টোবর ২০২১, ১০: ১০
কীটনাশকে কমছে দেশি মাছ

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কিশোরগঞ্জের বিশাল হাওরকে মিঠাপানির মৎস্য সম্পদের আড়ত বলা হয়। তবে এই অঞ্চল থেকে দিন দিন কমে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির সুস্বাদু সব মাছ। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, নদ-নদীর নাব্যতা হ্রাস, খাল-বিল ও জলাশয় শুকিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে অসাধু জেলেরা অবাধে কীটনাশক প্রয়োগ করছে। এ ছাড়া কোণাবেড় ও কারেন্ট জাল দিয়ে নিষিদ্ধ উপায়ে মাছ শিকারের কারণে কমছে মিঠাপানির মাছ।

স্থানীয় মৎস অধিদপ্তর ও মৎস্যজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাওরাঞ্চলে একসময় প্রায় ২৬০ প্রজাতির মিঠাপানির মাছ ও ২৪ প্রজাতির সুস্বাদু চিংড়ির আবাসস্থল ছিল। এ অঞ্চলের আহরিত মাছ নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে প্রতিবছর বিদেশে রপ্তানি করা হতো। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন ও মানব সৃষ্ট নানা কারণে বিস্তীর্ণ মৎস্য ভান্ডার এখন হুমকি মুখে। ইতিমধ্যে প্রায় অর্ধশতাধিক প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। অনেক প্রজাতি বিলুপ্তির পথে। সংকটাপন্ন মাছের সংখ্যাও বহু। দেশি প্রজাতির মাছের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন হাওরের স্থানীয় মৎস অধিদপ্তর। গেল দু দশকে ২০ প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে দেশীয় প্রজাতির বিলুপ্ত মাছ পুনরুদ্ধারে কাজ করছে মৎস্য অধিদপ্তর।

কিশোরগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কুমার পাল বলেন, নিষিদ্ধ জাল জাল ব্যবহার, নির্বিচারে মাছ ধরা ও জেলেদের অসচেতনতার কারণে দেশি প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হচ্ছে। জেলা মৎস্য অধিদপ্তর জেলেদের প্রশিক্ষণ দান, মাছের অভয়াশ্রম সৃষ্টি ও আইন প্রয়োগের মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়া মাছের বংশবিস্তারে কাজ করছে।

স্থানীয় মৎস্যজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিলুপ্ত প্রজাতির মিঠাপানির মাছের মধ্যে রয়েছে গুংঙ, আখশ, পান, মাশূল, কোরাল, বাশপাতি, এলং, রান্দীন, বৈছা, হিলইন, ডেলা, পিলুশৈল, চেলাপাতা, নেফতানি, নাপিতকৈ, বাঘাগুতুম, লাঙ্গাটালু, গোলা কাঙলা, কাশিখয়রা, দাড়কিনা, লালচান্দা, তিতপুটি, মধু, বিষতারা, মধুপাবদা, কানি পাবদা, রয়না কৌটাকুমিরের খি ওবানদি কৈসহ প্রভূতি।

আর প্রকৃতির বিরুপ প্রভাবে হারিয়ে যাওয়া পথে, কাতলা, বামশ, কৈইল্শা, কালবাউশ, চিতল, নাণীত, রিডা, গাগলা, পাবদা, বাছা, গাউড়া, বাঘাই, পোমা, কাইকখা, পাংগাস, মৃগেল, শিং, মাগুর, কৈ, রুপচান্দা, ট্যাকা, লাচু, কাজলি, কান্লা, ভেদা, বালিগড়া, টেংড়া, বাতাই, তিলাশৈল, চেনুয়া, গজার সরপুটি, মহাশূলসহ প্রভূতি।

মেঘনা তীরের ইকুরদিয়া গ্রামের জেলে অনিল চন্দ্র দাস (৭৪) বলেন, ‘এক সময় সময় গাঙ্গে যেম্নে হুথ (স্রোত) আছিন তেম্নে মাছ আছিন। এহন হুথও নাই, মাছও নাই। হাউরে বন্ (জলজ উদ্ভিদ) আছিন হেই বনে মাছ ঝাক্ ঝাক্ থাকত্। ছুডো (ছোট) ও ডিমাওলা মাছ ধরা হয়ত কম। তহন (তখন) এতো জাল ছিলনা। এহনত বিষ দিয়্যা মাছ ধরে জাইল্ল্যারা (জেলে) মাছ থাকব্ কৈত্তে।’

পূর্ব অষ্টগ্রামের সত্যবান দাস (৭৭) বলেন, ‘হেই (সেই) দিনের কথা কইয়্যা কি হইব। কত জাতের মাছ আচিল (ছিল)। ছুডো (ছোট) মাছ আমরা খায় নাই ধরি নাই। এহন জাইল্ল্যারা পেডের (পেঠ) লাইগ্যা সব মাছ ধরে। সরকার যদি ডিম ছাড়নের সময় জাইল্ল্যারারে নদীত নামতে (মাছ ধরতে) না দিয়্যা খাউনের বন্দোবস্ত করত তাইলেও দেশি মাছ গুলান বাঁচত।’

মাছ ব্যবসায়ী মতিন মিয়া দেশি প্রজাতির মাছ রক্ষায় সরকারি তৎপরতা হতাশাজনক মন্তব্য করে বলেন, নদী ভরাট হওয়ায় মাছের বিচরণ ও প্রজনন স্থান সংকুচিত হচ্ছে। প্রজনন স্থানে মা মাছের অভয়ারণ্য করে নির্দিষ্ট সময় মাছ ধরা বন্ধ রাখতে হবে, বর্ষাকালে উজানে পোনা ছাড়তে হবে। ইজারাদারদের হাত থেকে নদী, মা মাছ ও পোনা রক্ষা জরুরি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত