Ajker Patrika

৬০ টাকার ‘উমেদারের’ রাজধানীতেই জমিদারি

সৈয়দ ঋয়াদ, ঢাকা
আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১৩: ২১
Thumbnail image

পদ তাঁর ‘উমেদার’। দৈনিক মজুরি ৬০ টাকা। রাজধানীর মোহাম্মদপুর সাবরেজিস্ট্রি অফিসের অস্থায়ী এই পদে চাকরি করা ব্যক্তির ‘নুন আনতে পান্তা ফুরানোর’ কথা। তবে আব্দুস সোবহানের গল্পটা ভিন্ন। এই মজুরিতে ১০ বছর চাকরি করা সোবহান ও তাঁর পরিবার রাজধানীতে বাড়ি, একাধিক প্লট-ফ্ল্যাট ও গাড়ির মালিক। তাঁর গৃহিণী স্ত্রী ও মায়ের আয়কর নথিতে উল্লেখ আছে ১৫ কোটি টাকাসহ বিপুল স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের।

ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সোবহান, তাঁর স্ত্রী ও মায়ের নামে ১০টির বেশি বাড়ি-প্লটের তথ্য পেয়েছে আজকের পত্রিকা। অভিযোগ রয়েছে, ‘উমেদার’ পদটিই সোবহানের আলাদিনের চেরাগ। এ পদ ব্যবহার করে তিনি মোহাম্মদপুর সাবরেজিস্ট্রি অফিসে ঘুষ, তদবির-বাণিজ্যের একটি চক্র গড়ে তুলেছেন। মালিক হয়েছেন জানা আয়ের বাইরে বিপুল সম্পদের। তাঁর কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নেন প্রশাসন ও গণমাধ্যমের কয়েকজন কর্মীও।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে সোবহানের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বক্তব্য না দিয়ে চা পানের আমন্ত্রণ জানান। 
দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, এ ধরনের অভিযোগ পেলে দুদক যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদক সোচ্চার।

মোহাম্মদপুর সাবরেজিস্ট্রি অফিস সূত্র জানায়, আব্দুস সোবহান ২০১৪ সালে এই অফিসে দৈনিক হাজিরা-ভিত্তিক অস্থায়ীভাবে উমেদার পদে যোগ দেন। দৈনিক মজুরি ৬০ টাকা। ১০ বছর পর তাঁর ও তাঁর পরিবারের সম্পদের পরিমাণ শতকোটি টাকা।

অভিযোগ রয়েছে, সোবহানের সম্পদশালী হওয়ার পেছনে আছে মোহাম্মদপুর সাবরেজিস্ট্রি অফিসে গড়ে ওঠা ঘুষের বিনিময়ে তদবির-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অপকর্ম। একাধিক তদন্তেও তাঁর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।

আব্দুস সোবহান, তাঁর স্ত্রী হালিমা ও মায়ের আয়কর নথিসহ দলিলে দেখা যায়, রাজধানীর আদাবরে সড়কের পাশে ২৪/৩ হোল্ডিং নম্বরের একটি সাততলা বাড়ির মালিক আব্দুস সোবহান। তাঁর আয়কর নথিতে স্থাবর সম্পদ হিসেবে আদাবরের ১০ নম্বর সড়কে ৭১২/১৯/৬৬ নম্বর হোল্ডিংয়ে ৩ দশমিক ৫৯ কাঠা জমিতে ২৪টি ছাপরাঘর, ১০৩৪/৩/বি মোহাম্মদপুর সড়কের ১৭/বি, বি/এফ-এতে ৫ শতাংশ জমিতে ১৮টি ছাপরাঘর (আরএস নং ২৪০, এসএ খতিয়ান নং-৫৯), বাড্ডার সাঁতারকুলে ৫০ শতাংশ অংশীদারত্বে একটি ২ কাঠার প্লট (সিএস খতিয়ান নং ২৯) এবং ৬ শতাংশ জমির (এসএ নং ২৯৩) উল্লেখ রয়েছে।

নথি থেকে জানা যায়, আদাবরের বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটির ১১ নং সড়কের ৬১৭ নং হোল্ডিংয়ের ভবনটিতে সোবহানের তিনটি ফ্ল্যাট, বছিলা সিটিতে ১৫ কাঠার একটি প্লট, মোহাম্মদপুরের রামচন্দ্রপুর মৌজায় ২০ কাঠার ও কাঁটাসুর মৌজায় ৯৬৫৪ নং দলিলমূলে ১৮ কাঠার একটি প্লট রয়েছে। আদাবরের ৩ নম্বর সড়কের ৩২২ হোল্ডিংয়ের সিলিকন নামের ভবনের তৃতীয় তলায় একটি ফ্ল্যাটের মালিক আব্দুস সোবহান। ওই ফ্ল্যাটে থাকেন তাঁর এক আত্মীয়, যিনি রাজধানীর অন্য একটি সাবরেজিস্ট্রি অফিসে কর্মরত।

আব্দুস সোবহানের নামে তিনটি মাইক্রোবাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। সোবহানের স্ত্রী ও মা আয়কর নথিতে তাঁদের ১৫ কোটি টাকা ও বিপুল স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন। অথচ তাঁরা দুজনেই গৃহিণী।

এ ছাড়া শাশুড়ি ও আত্মীয়দের নামেও সম্পদ গড়ার অভিযোগ রয়েছে সোবহানের বিরুদ্ধে। এসব বিষয়ে ও অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে আব্দুস সোবহানের ব্যক্তিগত মোবাইলে ফোন দেওয়া হলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভাই বক্তব্য দিতে পারব না।

আপনি একদিন এসে চা খেয়ে যান।’ সম্পদের বিষয়ে এটাই আপনার বক্তব্য? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা আমার বক্তব্য নয়। আমার বক্তব্য নাই, আপনি ভাই হিসেবে চা খেয়ে যাবেন।’

জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোনো জবাবদিহি নেই। এসব বিষয়ে দুদকের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নারীদের খেলায় আর নাক গলাবে না, দেশ ও বিশ্ববাসীর কাছে ক্ষমা চাইল ভাঙচুরকারীরা

বিয়ে করলেন সারজিস আলম

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লড়ছে শ্রীলঙ্কা, ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচ কোথায় দেখবেন

ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় ফরিদপুরের ২ জনকে গুলি করে হত্যা

সাবেক শিক্ষার্থীর প্রাইভেট কারে ধাক্কা, জাবিতে ১২ বাস আটকে ক্ষতিপূরণ আদায় ছাত্রদলের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত