Ajker Patrika

ঘোড়ায় হালচাষ, তাতেই সংসার

অভিজিৎ সাহা, নালিতাবাড়ী (শেরপুর)
আপডেট : ৩০ জানুয়ারি ২০২৩, ১০: ৪৯
ঘোড়ায় হালচাষ, তাতেই সংসার

কারণ যা-ই হোক, বদলটি দারুণ। চীন দেশের শ্যালো মেশিন এ দেশে যেমন জমিতে সেচ দেয়, তেমনি নৌকা ও রিকশাভ্যান চালানোর কাজও করে! এই আশ্চর্য পরিবর্তনের চিন্তা যে দেশের মানুষের উর্বর মস্তিষ্কে সম্ভব হয়েছে, সে দেশে ঘোড়া দিয়ে হালচাষ হবে, সেটা অসম্ভব কিছু নয়! হয়েছেও তাই।

অথচ একটা সময় হালচাষ মানেই ছিল গরু ও মহিষ। কার বাড়িতে কত জোড়া হালের বলদ বা মহিষ আছে, তা দিয়ে নির্ধারিত হতো গৃহস্থ হিসেবে তিনি কতটা সম্পন্ন। অবশ্য এখন গরু বা মহিষ দিয়ে জমি চাষের কথা বললেও অনেকের হাসি পায়। উদাস কণ্ঠে বলেন, অত সময় কই।

কিন্তু শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় ঘটেছে উল্টো ঘটনা। সেখানে গরু বা মহিষ নয়, হালচাষের কাজ হচ্ছে ঘোড়া দিয়ে!

নালিতাবাড়ী উপজেলার বালুঘাটা গ্রামের বাসিন্দা শামসুদ্দীন। দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তাঁর পাঁচ সদস্যের পরিবার। তাঁদের আয়ের একমাত্র উৎস ঘোড়া। এই ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে বছরের কিছু সময় মালপত্র আনা-নেওয়ার কাজ করেন তিনি। আবার ইরি-বোরো ও আমন মৌসুমে চারা রোপণের আগে ঘোড়া দিয়ে জমিও চাষ করেন। এতে দিনে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত আয় করেন শামসুদ্দীন।

নালিতাবাড়ী উপজেলায় শুধু শামসুদ্দীনই নন, কলসপাড় ইউনিয়নের ঘোনাপাড়া, গোল্লারপাড় ও বালুঘাটা গ্রামের অর্ধশতাধিক মানুষের আয়ের উৎস ঘোড়া দিয়ে হালচাষ। এ ঘটনায় কৌতূহল তৈরি হয়েছে এলাকায়।

শাসসুদ্দীন জানিয়েছেন, ঘোড়া যেন তাঁর পরিবারেরই হাল বইছে। ঘোড়া দিয়ে জমি মই দিলে একরপ্রতি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা পান তিনি। আবার জমি চাষ দিয়ে কাঠাপ্রতি পান ২০০ টাকা। প্রতিদিন এই ঘোড়া দিয়ে তিনি প্রায় এক হাজার টাকা উপার্জন করেন। এতে ঘোড়ার খাবারসহ যাবতীয় খরচ বাদেও অনায়াসে তাঁর সংসার চলে যায়।

কলসপাড় ইউনিয়নের গ্রাম তিনটির স্থানীয় কৃষক ও ঘোড়ার মালিকদের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানিয়েছেন, গরু ও মহিষ পালনের চেয়ে ঘোড়া পালনে খরচ অনেক কম। ঘোড়ার রোগবালাইও কম হয়। তা ছাড়া ঘোড়া চুরি যাওয়ার ভয় কম। প্রতিদিন ঘোড়া দিয়ে অনায়াসে দুই থেকে তিন একর জমি মই দেওয়া যায়। জমিতে হালচাষে একরপ্রতি ১ হাজার ৬০০ টাকা পাওয়া যায়। তাই দিন দিন ঘোড়া পালন ও ঘোড়া দিয়ে হালচাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে কলসপাড় ইউনিয়নে।

শামসুদ্দীনের মতো ঘোড়া দিয়ে জমি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন আশরাফ আলী। তিনি জানিয়েছেন, ঘোড়ার দাম কম হওয়ায় ঘোড়া দিয়ে জমি চাষাবাদ করছেন অনেকে। তবে শুধু চাষাবাদ নয়, মালপত্র আনা-নেওয়ার কাজেও ঘোড়া ব্যবহার করেন তিনি।

ঘোনাপাড়া গ্রামের ঘোড়ার মালিক দুদু মিয়া। জমির আলে দাঁড়িয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। দুদু মিয়া ইরি, বোরো ও আমন মৌসুমে বাড়তি রোজগারের জন্য ঘোড়া দিয়ে হালচাষের কাজ করেন। গোল্লারপাড় গ্রামের কৃষক মারুফ জানালেন কিছুটা ভিন্ন কথা। এলাকায় হাল চাষের উপযোগী কোনো গরু বা মহিষ নেই। তাই ঘোড়া দিয়ে জমিতে মই দিতে হয়। এতে কাজও দ্রুত হয়, খরচও তুলনামূলক কম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত