Ajker Patrika

রাত হলেই ডাকাতের ভয় পাঁচ সড়কে

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, সিরাজদিখান (মুন্সিগঞ্জ)
রাত হলেই ডাকাতের ভয় পাঁচ সড়কে

মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার পাঁচটি সড়কে অনেক বছর ধরে ডাকাতের আতঙ্ক নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে গাড়িচালক, যাত্রী ও পথচারীদের। এসব সড়কে শীত মৌসুমে ছিনতাই, ডাকাতিসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেশি হয়। আতঙ্ক থাকলেও এসব সড়কে নিয়মিত পুলিশি টহল থাকে না বলে অভিযোগ রয়েছে। ভুক্তভোগীরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে জানালেও আশানুরূপ প্রতিকার পাচ্ছেন না।

স্থানীয় বাসিন্দা ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, ২ জানুয়ারি ভোরে সিরাজদিখান-নিমতলা সড়কের রশুনিয়া টানা সেতুর সামনে অন্তত ২০টি গাড়িতে ডাকাতি হয়। মুখোশ পরা ৮-১০ জনের একটি দল দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ভয় দেখিয়ে টাকা ও মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। এ সময় অনেককে মারধর করা হয়। এর আগেও এই সড়কে একাধিকবার ডাকাতি হয়েছে।

উপজেলার ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের কেয়াইন ইউনিয়নের চালতিপাড়া এলাকা, কুচিয়ামোড়া ধলেশ্বরী নদীর ওপর দুই সেতু এলাকা, কুচিয়ামোড়া-সৈয়দপুর সড়ক, ঢাকা-নবাবগঞ্জ সড়কের তুলসীখালী ও মরিচা সেতু এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ডাকাতি হচ্ছে। এতে এই সড়কগুলোতে চলাচলরত গাড়ির চালক, যাত্রী ও পথচারীরা আতঙ্কিত।

ডাকাতের কবলে পড়া সিরাজদিখান বাজারের সবজি ব্যবসায়ী শেখ মাহবুব জানান, প্রতিদিন টঙ্গিবাড়ী আর সিরাজদিখানের মাছ ও সবজি ব্যবসায়ীরা ঢাকার কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী ও শ্যামবাজারে সবজি ও মাছ কিনতে যান। ভোরে ঢাকা থেকে ফেরার পথে রশুনিয়া এলাকায় দা ও রড নিয়ে তাঁদের গাড়ির গতিরোধ করে ডাকাতেরা। তাঁর কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা, দুটি মোবাইল ও গাড়ির চালকের একটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। এ ছাড়া সেদিন আরও প্রায় ২০ থেকে ২৫টি গাড়িতে ডাকাতি হয়, অনেককে মারধর করে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিরাজদিখানের এক সরকারি কর্মকর্তা জানান, তিনি কিছুদিন আগে ঢাকা থেকে সিরাজদিখান যাচ্ছিলেন। কুচিয়ামোড়া দুই সেতুর মাঝামাঝি পৌঁছালে কয়েকজন মুখোশ পরা লোক গাড়ি থামিয়ে তাঁকে মারধর করে, সঙ্গে থাকা টাকা ও ফোন নিয়ে যায়। এর পর থেকে তিনি এই পথে চলতে ভয় পান।

উপজেলার কেয়াইন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আশ্রাফ আলী বলেন, চালতিপাড়া এলাকায় ডাকাতির বিষয়টি তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনেকবার জানিয়েছেন। তা ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদেও এ বিষয়ে কয়েকবার আলোচনা হয়েছে, উপজেলার মাসিক সভায় আলোচনা করেছেন। তাঁরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন, যাতে ডাকাতি বন্ধ করা যায়।

রাজানগর ইউপি চেয়ারম্যান মো. মজিবুর রহমান বলেন, কুচিয়ামোড়া-সৈয়দপুর সড়কে অনেক বছর ধরে ডাকাতি হয়ে আসছে। শীত মৌসুমে একটু বেশি হয়। তাঁরা ডাকাতি বন্ধ করার চেষ্টা করছেন। এ জন্য প্রতিদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং গ্রাম পুলিশের সদস্যরা এখানে ডিউটি করেন। যেদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও গ্রাম পুলিশ না থাকে, সেদিনই এ সড়কে ডাকাতি হয়। সে জন্য গ্রাম পুলিশ এবং পুলিশের সদস্যরাও রাতের ডিউটি বৃদ্ধি করেছেন।

হাসাড়া হাইওয়ে থানার ট্রাফিক ইন্সপেক্টর শামীম আল-মামুন বলেন, চালতিপাড়া এলাকায় ডাকাতি হয়েছিল। এরপর থেকে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে সন্ধ্যা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত পুলিশ সদস্যরা ডিউটি করেন। এক্সপ্রেসওয়ের ৪০ কিলোমিটার এলাকায় তাঁদের কাজ করতে হয়। তাই বিভিন্ন এলাকায় আলাপ-আলোচনা এবং তাঁদের ফোন নম্বর দিয়ে এসেছেন, ঘটনা ঘটার আগেই যেন মানুষ তাঁদের জানান। এ ছাড়া টহল বৃদ্ধি করেছেন।

সিরাজদিখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মিজানুল হক বলেন, কয়েক দিন আগে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে একটি ডাকাতি হয়েছিল। এ ঘটনায় হওয়া মামলায় গ্রেপ্তারও রয়েছে। এ ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে তাঁরা কথা বলেছেন, তাঁরা যেন অন্ধকার এলাকাগুলোতে আলোকসজ্জা করেন। এ ছাড়া তাঁরা টহল জোরদার করেছেন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত