Ajker Patrika

আবার বাজবে নাকাড়া

শাকিলা ববি, সিলেট
Thumbnail image

দুই বছর পর হজরত শাহজালালের (রহ.) দরগা প্রাঙ্গণে আবার বাজবে ঐতিহ্যবাহী ‘নাকাড়া’। ‘শাহজালাল বাবা কী জয়’, ‘৩৬০ আউলিয়া কী জয়’, ‘লালে লাল শাহজালাল’, ‘নারায়ে তকবির-আল্লাহু আকবার’ স্লোগানে দরগা প্রাঙ্গণ প্রকম্পিত করবেন হাজার হাজার ভক্ত। এরপর খোলা তলোয়ার ও কুড়াল হাতে দরগা প্রাঙ্গণ থেকে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে শাহজালাল ভক্তরা মিছিল করে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে লাক্কাতুরা চা বাগানের পাহাড় থেকে লাকড়ি সংগ্রহ করবেন।

আজ ২৮ মে, ২৬ শাওয়াল ঐতিহাসিক লাকড়ি তোড়া উৎসব। বাদ জোহর উদ্‌যাপন করা হবে সাত শ বছরের পুরোনো লৌকিক উৎসব লাকড়ি তোড়ার মিছিল বা লাকড়ি তোড়ার উড়শ। করোনার কারণে গত দুই বছর শাহজালাল ভক্তরা এই উৎসব উদ্‌যাপন করতে পারেননি। তাই এবার উদ্‌যাপনে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা ভক্ত আশেকানদের মধ্যে।

প্রাচীন এই উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সুলতানুল বাঙাল হজরত শাহজালালের (রহ.) স্মৃতি। প্রায় সাত শ বছর ধরে ২৬ শাওয়াল এই ‘লাক্কাতোড়ার মেলা’ উদ্‌যাপিত হয়ে আসছে। এই দিন অত্যাচারী রাজা গৌড় গোবিন্দকে পরাজিত করে শ্রীহট্ট রাজ্য হজরত শাহজালালের (রহ.) পদানত হন। তাই দিনটি সিলেট বিজয় দিবস নামেও পালিত হয়। 
কথিত আছে, রাজা গৌর গোবিন্দকে পরাজিত করার পর হজরত শাহজালাল (রহ.) প্রায় প্রতি বছর বিজয় দিবস উদ্‌যাপন করতেন। এক বছর বিজয় দিবস উদ্‌যাপনের কিছুদিন আগে হজরতের কাছে এক নওমুসলিম কাঠুরে ফরিয়াদ নিয়ে এল। তার বিয়ের যোগ্য ৫ মেয়ে আছে। কিন্তু সে অত্যন্ত দরিদ্র ও নিচু জাতের বলে মেয়েদের জন্য কোনো বিয়ের সম্বন্ধ আসে না। হজরত কিছুদিন পর সিলেট বিজয়ের দিন-এর প্রতিকার করবেন বলে কাঠুরেকে আশ্বস্ত করেন। সিলেট বিজয়ের দিন বরাবরের মতো সবাই সমবেত হলে সঙ্গীসহ হজরত শাহজালাল (রহ.) জোহরের নামাজ আদায় করলেন। নামাজ শেষে তিনি কুড়াল হাতে  পাহাড়-টিলাবেষ্টিত (বর্তমান লাক্কাতুরা চা বাগানের নির্ধারিত টিলা) গভীর জঙ্গলের দিকে যেতে থাকলেন। সঙ্গীরা তাঁকে অনুসরণ করতে থাকেন। এক জায়গায় এসে তিনি নিজ হাতে লাকড়ি সংগ্রহ করতে লাগলেন। মুর্শিদের অনুসরণ করতে থাকলেন ভক্তরা।

এরপর লাকড়ি কাঁধে নিয়ে সঙ্গীসহ ফিরে আসেন নিজ আস্তানায়। লাকড়ি স্তূপ করে সমবেতদের নিয়ে আসরের নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে তিনি সমবেতদের কাছে ইসলামের সাম্যের বাণী ও শ্রমের মর্যাদার কথা তুলে ধরেন এবং গরিব কাঠুরের ফরিয়াদের কথা জানান। তখন সমবেতদের মধ্য থেকে অনেকেই কাঠুরের মেয়েদের বিয়ে করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।

এই বিজয় উৎসব উদ্‌যাপনের ২১ দিন পর হজরত শাহজালালের (রহ.) ওফাত হয়। মুর্শিদের দেহান্তরের সংবাদে দূরদূরান্ত থেকে মুরিদ ও ভক্তরা সমবেত হতে থাকেন। সমবেত মানুষের খাবার রান্নায় এই লাকড়ি ব্যবহার করা হয়। সেই স্মৃতির ধারাবাহিকতায় শ্রমের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ও আভিজাত্যের গৌরব ধ্বংস করার জন্য এই লাকড়ি ভাঙার প্রথা পালন অব্যাহত থাকে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত