Ajker Patrika

ফেসবুকের বিরুদ্ধে ১৫ হাজার কোটি ডলারের মামলা

রয়টার্স, লন্ডন
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১০: ৩৯
ফেসবুকের বিরুদ্ধে ১৫ হাজার কোটি ডলারের মামলা

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সংঘটিত সহিংসতার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের পক্ষে ১৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের মামলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় গত সোমবার মামলাটি করেছে আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এডেলসন পিসি এবং ফিল্ডস পিএলএলসি। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, মিয়ানমারে ফেসবুকের প্ল্যাটফর্মে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ঠেকাতে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি। ফলশ্রুতিতে রোহিঙ্গা নিপীড়নের মতো ঘটনা ঘটেছে।

মামলাটি মূলত করা হয়েছে ফেসবুকের মালিক প্রতিষ্ঠান মেটার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তার মালিক প্রতিষ্ঠানের নতুন নাম দেয় মেটা। যুক্তরাষ্ট্রে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার সময়ই যুক্তরাজ্যের কয়েকজন আইনজীবী লন্ডনে ফেসবুকের কার্যালয়ে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন।

মামলা দায়ের ও আইনি নোটিশের ব্যাপারে বক্তব্য জানতে ফেসবুকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এর আগে ফেসবুক স্বীকার করেছিল, মিয়ানমারে নিজেদের প্ল্যাটফর্মে তারা গুজব ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রতিরোধে পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে তারা অত্যন্ত ধীর ছিল। এ বছরের ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানে অং সান সু চির সরকারের পতনের পর ফেসবুক কর্তৃপক্ষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটির প্ল্যাটফর্ম ও তাদের মালিকানাধীন ছবি-ভিডিও শেয়ারের প্ল্যাটফর্ম ইনস্টাগ্রামে মিয়ানমারের সেনাপ্রধানসহ সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে নিষিদ্ধ করেছে।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ২০১৭ সালের আগস্টে বেশ কয়েকটি নিরাপত্তাচৌকিতে হামলার জেরে সেখানে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। এরপর প্রাণ বাঁচাতে সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে চলে আসে। ২০১৮ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার অনুসন্ধানকারীরা বলেছিলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রচারে ফেসবুক প্ল্যাটফর্মের বিশেষ ভূমিকা ছিল, যা সহিংসতাকে উসকে দিয়েছে। ওই বছরই বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক অনুসন্ধানে উঠে আসে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা ও অন্যান্য মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর হামলায় উসকানি দিতে পোস্ট, মন্তব্য ও ছবির এক হাজারের বেশি উদাহরণ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে দায়ের মামলায় এই বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া রাখাইনে সহিংসতার ঘটনায় আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে মামলা চলমান রয়েছে।

ফেসবুক ওই বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রতিরোধে ধীর পদক্ষেপের কথা স্বীকার করলেও ওইসব বক্তব্যের দায়দায়িত্ব নেয়নি। তারা বলেছে, সেকশন ২৩০ নামে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারনেট আইনের আওতায় ব্যবহারকারীর পোস্টের দায়দায়িত্ব ফেসবুকের নয়। যুক্তরাষ্ট্রের ওই আইনে বলা আছে, অনলাইন প্ল্যাটফর্মে তৃতীয় পক্ষের আধেয়র (কনটেন্ট) জন্য ওই প্ল্যাটফর্ম কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। তবে ক্যালিফোর্নিয়ায় দায়ের মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সেকশন ২৩০ আইনকে যদি ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তাহলে ফেসবুকের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের আইনে মামলা পরিচালনা করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে বিদেশি আইনেও মামলা করা যায়, যদি মার্কিন কোনো কোম্পানি বা ব্যক্তির বিদেশের মাটিতে কার্যক্রম থাকে এবং ওই কোম্পানি বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিদেশের মাটিতে ক্ষতিকর কিছু করার অভিযোগ ওঠে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সেকশন ২৩০ যেখানে সুরক্ষা দিচ্ছে, সেখানে বিদেশি কোনো আইনের আশ্রয় নিয়ে কতটা সফল হওয়া সম্ভব, সে ব্যাপারে তাঁরা নিশ্চিত নন। যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি ল সেন্টারের অধ্যাপক অনুপম চন্দর বলেন, মিয়ানমারের আইনের আশ্রয় নেওয়া অযৌক্তিক নয়। তবে তা কতটা সফল হবে, তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের প্রচলিত আইনকে আপাত রহিত করে বিদেশি আইনে মামলা পরিচালনার অনুমোদন দেওয়া মার্কিন কংগ্রেসের জন্য অস্বস্তিকর হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত