Ajker Patrika

ব্যবহারের আগেই অকেজো তিন কোটি টাকার হাজিরা মেশিন

নীলফামারী (ডিমলা) প্রতিনিধি 
আপডেট : ১০ আগস্ট ২০২৩, ১৩: ১৩
ব্যবহারের আগেই অকেজো তিন কোটি টাকার হাজিরা মেশিন

শিক্ষক ও কর্মচারীদের বায়োমেট্রিক হাজিরা নিশ্চিত করতে নীলফামারীর ডিমলার ২১৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কেনা হয় মেশিন। তিন বছর পার হলেও হাজিরা মেশিনগুলোয় দেওয়া হয়নি কোনো সফটওয়্যার। দীর্ঘদিন অলস পড়ে থাকায় ইতিমধ্যে অনেক মেশিন নষ্ট হয়েছে। বাকিগুলোও অচল হওয়ার পথে। ফলে জলে গেছে সরকারের বিপুল অর্থ। এ ছাড়া এসব মেশিন কেনা নিয়েও রয়েছে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ।

শিক্ষা অফিস সূত্র বলেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর উন্নয়ন-সংস্কার (স্লিপ ফান্ড) তহবিল থেকে প্রতিটি বিদ্যালয়ের জন্য বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন কিনতে বলা হয়েছিল। তবে মেশিন কেনা হলেও দীর্ঘ সময়ে চালু করা যায়নি সেগুলো।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, তৎকালীন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা স্বপন কুমারের পছন্দের প্রতিষ্ঠান থেকে এসব মেশিন কেনা হয়। শিক্ষকেরা বিদ্যালয়ের স্লিপ ফান্ড থেকে চেকের মাধ্যমে মেশিন কেনার টাকা কোম্পানিকে পরিশোধ করেন। প্রতিটি মেশিন ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা মূল্যে কেনা হয়। যদিও বাজারে এ মেশিনের দাম ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। নিয়ম রয়েছে, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাজার যাচাই করে নিজেদের পছন্দমতো সাশ্রয়ী মূল্যে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন কিনে বিদ্যালয়ে স্থাপন করবে। নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে মেশিন ক্রয়ের বাধ্যবাধকতা নেই। নির্দেশনা উপেক্ষা করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কেনা এসব মেশিন কিছুসংখ্যক বিদ্যালয়ে চালু হলেও কিছুদিনের মধ্যে তা অকেজো হয়ে পড়ে।

শিক্ষকদের ভাষ্য, শিক্ষা অফিস থেকে চাপ প্রয়োগ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে তাঁদের হাজিরা মেশিন কিনতে বলা হয়েছিল। তখন তাঁরা বাজারমূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ দামে কিনতে বাধ্য হয়েছিলেন। শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশে নির্ধারিত কোম্পানি ও চক্রের কাছ থেকে মেশিন কেনায় বাজার যাচাইয়ের সুযোগ পাননি তাঁরা।

ঠাকুরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা স্লিপ ফান্ডের টাকা দিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে হাজিরা মেশিন কিনেছিলাম। কিন্তু সংযোগ না থাকায় ব্যবহার করা হয়নি। মেশিনটি এখন নষ্ট।’

ছোটখাতা তিস্তা-চর শিশু কল্যাণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবুল হোসেন বলেন, ‘১৫ হাজার টাকা দিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন কিনেছিলাম। মেশিনটি প্যাকেটবন্দী হয়ে পড়ে আছে।’ একই কথা বলেছেন অন্তত ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকেরা। 
ডিজিটাল হাজিরা মেশিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী স্বাধীন সরকার বলেন, ‘তৎকালীন শিক্ষা কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাসের মাধ্যমে ডিমলার ১৪৬টি বিদ্যালয়ে হাজিরা মেশিন সরবরাহ করেছি। প্রতিটি মেশিনের দাম ৮ হাজার টাকা। অন্যান্য খরচ (সিম, সফটওয়্যার ও সংযোগ) বাবদ ধরা হয়েছিল ২ হাজার। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী এ টাকা দেওয়া হয়নি।’

তৎকালীন শিক্ষা কর্মকর্তা স্বপন কুমার তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘শিক্ষকদের হাজিরা মেশিন কেনার নির্দেশনা দিয়েছিলাম। তাঁরা কার কাছ থেকে কিনেছেন, তা তাঁদের ব্যাপার। এ বিষয়ে আমি জানি না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত