Ajker Patrika

হাসপাতালে রোগীর ভিড়

নুরুল আমীন রবীন, শরীয়তপুর
আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২: ২৯
হাসপাতালে রোগীর ভিড়

শরীয়তপুর সদর হাসপতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা হঠাৎ করে বৃদ্ধি পেয়েছে। ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি রোগী ভর্তি থাকায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

গত তিন দিনে হাসপাতালটিতে মোট ভর্তি হয়েছেন ২৫৬ জন রোগী। প্রতিদিন গড়ে রোগী ভর্তি হচ্ছেন ৮৫ জন করে। যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। ভর্তি হওয়াদের মধ্যে নারী রোগীর সংখ্যাই বেশি।

১০০ শয্যার শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে বর্তমানে সাধারণ রোগীদের জন্য ৮০ শয্যার চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে। বাকি ২০ শয্যা করোনা রোগীদের জন্য আইসোলেশ ওয়ার্ড করা হয়েছে। এই ৮০ শয্যার বিপরীতে বর্তমানে হাসপাতালে রোগী ভর্তি রয়েছেন ১৬৫ জন।

শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল সূত্র জানায়, পুরুষ বিভাগের মেডিসিন, সার্জারি, অর্থোপেডিক, মহিলা বিভাগের গাইনি, অর্থোপেডিক, মেডিসিন, সার্জারি ওয়ার্ডের পাশপাশি শিশু, ডায়রিয়া ওয়ার্ডসহ ৯টি ওয়ার্ডের মোট ১০০ শয্যায় চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে হাসপাতালটিতে। তবে করোনা মহামারি শুরু হওয়ায় ২০২০ সালের মার্চের শেষের দিকে করোনা রোগীদের জন্য ১০০ শয্যা থেকে ২০ শয্যার করোনা ওয়ার্ড চালু করা হয়। তখন থেকেই আন্তঃবিভাগের রোগীদের ৮০ শয্যায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

গত এক সপ্তাহ যাবৎ হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০ সেপ্টেম্বর ৮৯ জন, ২১ সেপ্টেম্বর ৭৮ জন ও ২৩ সেপ্টেম্বর ৮৯ জন রোগী চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালটি থেকে ৩৯০ জন রোগী বর্হিবিভাগের চিকিৎসা নিয়েছেন।

প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতালে শয্যা সংকট তৈরি হয়েছে। অনেক জরুরি রোগীদের শয্যা বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে অনেক রোগীকেই হাসপাতালের বারান্দা বা ওয়ার্ডের করিডোরের মেঝেতে অস্থায়ীভাবে চিকিৎসা সেবা প্রদান করছেন চিকিৎসকেরা। এতে করে অনেক মহিলা বা গাইনী ওয়ার্ডের রোগীদের নানামুখী বিড়ম্বনায় পরতে হয়।

হটাৎ শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেওয়ায় ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রুমা আক্তারকে গত বুধবার সকাল ১০টার দিকে শরীয়তপুর সদর হাসপতালে নিয়ে আসের স্বামী জনি হোসেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় ছুটাছুটি করেও স্ত্রীর জন্য একটি ছিট মেলাতে পারেননি জনি। অবস্থার অবনতি হতে থাকায় রাত ৮টার দিকে একটি কক্ষের ভিতর কোনো রকমের মেঝেতে রাত্রি যাপনের অনুমতি মিলে রুমা আক্তারের।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত স্ত্রীর জন্য শয্যার ব্যবস্থা করতে না পেরে হতাশ জনি বলেন,২ দিন ছুটাছুটি করেও একটি সিট পাইনি। আমার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্ব। গতকাল থেকে পানি ভাঙতে শুরু করায় জরুরি হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। তাকে আরও কিছুদিন হাসপাতাল রাখতে হবে। অথচ সিটের অভাবে তাকে নিয়ে খুবই ভোগান্তি আর দুশ্চিন্তায় আছি। আমার মত অনেক মানুষই একই সমস্যায় পরেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বুকের ব্যাথা নিয়ে হাসপাতালে আসেন রিমা আক্তার। অবস্থার অবনতি দেখে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন চিকিৎসকেরা। সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হাসপাতালে কোনো সিট পাননি রিমার স্বজনেরা। নারী ওয়ার্ডের সামনে ময়লা ফেলার ডাস্টবিনের পাশে মেঝেতে শুয়ে কোনো রকমের চিকিৎসা নিচ্ছেন রিমা।

রিমার স্বামী শাহ আলম মৃধা জানান, হাসপাতালে রোগীর জন্য পা ফেলার জায়গা নেই। সকাল থেকে স্ত্রীকে নিয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডে যোগাযোগ করেও একটি সিট পাইনি। স্ত্রীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় বাড়ি নিয়ে যেতে পারছি না। বাধ্য হয়েই কোনো রকমের ময়লা আবজর্না ফেলার ডাস্টবিনের পাশে একটু ফাঁকা জায়গা পাওয়ায় মেঝেতে চাদর বিছিয়ে স্ত্রীকে শুইয়ে রেখেছি।

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সুমন কুমার পোদ্দার আজকের পত্রিকাকে বলেন, হাসপাতালে আসা রোগীদের মধ্যে শরীর, হাত ও পা ব্যাথা এবং ঠাণ্ডা জনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাই বেশি। হঠাৎ করে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় চিকিৎসাসেবা দিতে বেগ পেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও সেবিকাদের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বৈপ্লবিক পরিবর্তন করার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেছে

ব্যাংকের চাকরি যায় জাল সনদে, একই নথি দিয়ে বাগালেন স্কুল সভাপতির পদ

৬৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ: ডেলটা গ্রুপের চেয়ারম্যান ফারুকসহ ১৫ জনের নামে মামলা

১ লাখ ৮২২ শিক্ষক নিয়োগ: যোগ্য প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা চলতি সপ্তাহে

‘মুসলিম ফ্রন্টগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করুন, ইন্টেরিম ভেঙে দিন’

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত