Ajker Patrika

চেয়ারম্যান ও চেয়ারম্যানপুত্র

সম্পাদকীয়
আপডেট : ১৭ আগস্ট ২০২৩, ০৭: ৩০
চেয়ারম্যান ও চেয়ারম্যানপুত্র

একঘেয়ে কৈফিয়তগুলো মোটেই আশ্বস্ত করে না মানুষকে। যে কেউ বুঝে যায়, এই কৈফিয়তগুলোর মধ্যে সত্য থাকে না। একটা সাজানো গল্পের জন্ম দেন চেয়ারম্যান  বা চেয়ারম্যানপুত্ররা। এখানে পুত্র না বলে স্বজনেরা বলাই সংগত। চেয়ারম্যানের দাপট ছড়িয়ে পড়ে পরিবারের সব সদস্যের মধ্যে।

যে দুটো ঘটনায় এই চেয়ারম্যান ও চেয়ারম্যানপুত্রের কথা এসেছে, তাঁদের একজন সাতক্ষীরার শ্যামনগরের মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, অন্যজন বরগুনার বেতাগী উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের পুত্র। প্রথমজন জেলেকার্ড থাকা সত্ত্বেও বরাদ্দ চাল না দিয়ে মেরেছেন জেলে সমিতির সভাপতিকে। আর চেয়ারম্যানপুত্র চাঁদা দাবি করে না পেয়ে পিটিয়েছেন এক স্কুলশিক্ষককে। ঘটনার বিবরণে না গিয়ে শুধু এইটুকুই বলা যায়, দুই পিটুনিবিদই নিজের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। তাঁরা নিজেরা যে ‘ফুলের মতো পবিত্র’, সেটা জানিয়েছেন সাংবাদিকদের।

সাতক্ষীরার ঘটনায় ওই চেয়ারম্যান আত্মপক্ষ সমর্থন করে চাল পরিবহনের খরচ ওঠানোর জন্য চাঁদা আদায়ের কথা স্বীকার করলেও, বলেছেন, মারপিটের মতো ঘটনা ঘটেনি। অন্যদিকে চেয়ারম্যানপুত্র চাঁদা চাওয়ার কথা একেবারে অস্বীকার করেছেন। এটা নাকি স্কুল কমিটির সভাপতি কে হবেন, তা নিয়ে একটা কোন্দলের কারণে চেয়ারম্যানপুত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র! স্কুল কমিটির সহসভাপতি আবার এই চেয়ারম্যানপুত্রই। আর শিক্ষক মহাশয় তাঁর চেনা একজনকে সভাপতি করতে চেয়েছিলেন, তাই দ্বন্দ্ব ছিল দুজনের মধ্যে। অথচ শিক্ষককে মারধর করার সময় সেখানে স্কুল কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন!

সম্পূরক একটি তথ্য দেওয়া সংগত হবে। এই পুত্রের বাবা চেয়ারম্যান সাহেব একসময় ১০ টাকা কেজি চালের সুবিধাভোগীদের তালিকায় তাঁর পুত্রের নাম লিখিয়েছিলেন। তাতে এলাকার মানুষ চেয়ারম্যানের ওপর খুব বিরক্ত। কিন্তু তাতে চেয়ারম্যানের কিছু আসে-যায় না। ফল হয়েছে এমন, ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে এই ছেলে নানা জায়গা থেকে চাঁদা উঠিয়ে বেড়ান।

ক্ষমতা ও মানুষে-মানুষে সম্পর্ক নিয়ে একটা কৌতুক বলা যাক। পাকিস্তানে সামরিক শাসন এত ঘন ঘন এসেছে এবং সেনাবাহিনী এমনভাবে দেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেছে যে, তা নিয়ে বহু কৌতুকের জন্ম হয়েছে। সে রকমই একটা কৌতুক হলো, এক বাসে যাচ্ছেন এক যাত্রী। তিনি আসন পাননি। দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন। বাসভর্তি যাত্রী। পাশের যাত্রীকে এই যাত্রী জিজ্ঞেস করলেন, ‘ভাইসাহেব মনে হয় জেনারেল সাহেবের আত্মীয়?’ অন্যজন বললেন, ‘না।’ ‘তাহলে মনে হয় ব্রিগেডিয়ার সাহেবের আত্মীয়?’ 
‘না।’ ‘তাহলে মেজর সাহেবের?’ ‘আরে না!’ ‘তাহলে কি আপনি সেপাই সাহেবের আত্মীয়?’ এবার রেগে গেলেন উত্তরদাতা। বললেন, ‘কী শুরু করেছেন আপনি? আমার সাতজন্মে কেউ সেনাবাহিনীতে ছিল না!’ এ কথা শুনে প্রশ্নকর্তা এতক্ষণে মারমুখী হয়ে উঠলেন, ‘তবে শালা! আমার পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে আছিস কেন?’ এ হয়তো নিছক গল্প। কিন্তু এই গল্পগুলো বাস্তবের স্পর্শ ছাড়া গড়ে ওঠে না। চেয়ারম্যানদের দাপট বাড়লে সাধারণ মানুষকে তো বাসের ওই অসহায় যাত্রীর ভূমিকাই পালন করতে হবে!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পদোন্নতি দিয়ে ৬৫ হাজার সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা: ডিজি

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

সমালোচনার মুখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের নিয়োগ বাতিল

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

মির্জা ফখরুলের কাছে অভিযোগ, ১৬ দিনের মাথায় ঠাকুরগাঁও থানার ওসি বদলি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত