Ajker Patrika

বন্যা ও বাস্তবতা

সম্পাদকীয়
আপডেট : ২২ জুন ২০২২, ১০: ০৯
Thumbnail image

এবারের বন্যা বিপজ্জনক হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বিচ্ছিন্ন এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে, যেদিকে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। বন্যা দ্রুত ছড়িয়ে যাচ্ছে। সিলেট অঞ্চল ছাপিয়ে উত্তরবঙ্গকেও বিপর্যস্ত করে তুলছে। দেশের বেশ কয়েকটি অঞ্চলের মানুষ আজ অসহায় জীবন যাপন করছে। এ অবস্থায় সবচেয়ে জরুরি ত্রাণকাজে মানুষের পাশে দাঁড়ানো। কীভাবে বন্যা উপদ্রুত অঞ্চল থেকে মানুষকে উদ্ধার করা হবে, কীভাবে বিপৎকালীন তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে, কী উপায়ে তাদের বাঁচার প্রেরণা দিতে হবে, সেটাই এখন সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। উপদ্রুত অঞ্চলে যেসব অমানবিক ঘটনার বর্ণনা আমরা শুনেছি, তাতে বোঝা যায়, আমাদের দেশের কিছু মানুষের মানবিক বোধের জায়গাটাও ধূসর হয়ে গেছে। এই সব দিক বিবেচনা করেই এ মুহূর্তে উপদ্রুত মানুষের পাশে দাঁড়ানো সবচেয়ে জরুরি ব্যাপার। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ মানুষেরও সেই প্রচেষ্টায় শরিক হওয়া জরুরি।

পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধার করার জন্য নৌকার মাঝিদের যখন বলা হয়েছে, তখন পাহাড় পরিমাণ অর্থের জন্য কেউ কেউ লালায়িত হয়েছেন বলে খবর প্রকাশ করা হয়েছে। আবার হাঁড়ির ভেতর শিশুদের ফটোশপ করে বসিয়ে দেওয়া একটি ছবি সিলেটের বন্যার ছবি বলে চালিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করা হয়েছে, যাতে বিভ্রান্ত হয়েছেন অনেক হৃদয়বান মানুষও। তাঁরা নিজ উদ্যোগে ফেসবুকসহ নানা সামাজিকমাধ্যমে সেই ছবি ছড়িয়ে দিয়েছেন। বিপদের সময় কেউ কেউ এভাবে ‘দাঁও’ মেরে থাকেন। ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কহীন কোনো বিষয়কে সেই ঘটনা বলে চালিয়ে দিতে চান। নৌকায় বিশাল ভাড়া আদায় করার পাশাপাশি এ ধরনের অপপ্রচার পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে। একটি হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির এ রকম অমানবিক প্রকাশ কারও কাম্য হতে পারে না। অবস্থা খানিক স্বাভাবিক হয়ে এলে এ ঘটনাগুলো মূল্যায়ন করা সম্ভব হবে।

পাশাপাশি মূল বিষয়টি থেকে আমরা যেন সরে না যাই, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। মনুষ্য বসতিতে থাকা খাল-নালা ইত্যাদিকে খাসজমি হিসেবে ভরাট করার কাণ্ডজ্ঞানহীন বর্বরতা চালানো হয়েছিল বলেই অনেক ক্ষেত্রে ওপর থেকে নেমে আসা বন্যার পানি সমুদ্রে যাওয়ার পথটা বন্ধ হয়ে গেছে। উন্নয়নের নামে হোক কিংবা নিজের পকেট ভারী করার জন্য হোক, কোনো কোনো অসাধু মানুষের সম্মিলিত চেষ্টায় এই অঘটন ঘটেছে। সড়ক নির্মাণ করলেই হয় না, তা প্রকৃতিকে বাধাগ্রস্ত করে তুলছে কি না, সেটাও বিবেচনায় থাকা উচিত। ঢলের পানি নামার সময় বাধাগ্রস্ত হলে প্রকৃতি নিজের মতো করেই এগিয়ে যাবে। কৃত্রিম যেকোনো কিছুই প্রকৃতির নিয়ম মেনে না চললে প্রকৃতি তার প্রতিশোধ নেয়। এ কথাটি জানেন সবাই, কিন্তু নিজ লাভালাভের হিসাব মেলাতে গিয়ে বিপদে ফেলে দেন তাঁরা। যার ফলে হাজার হাজার মানুষ নিতান্ত অসহায় হয়ে ভিটাছাড়া হয়। যাঁরা খাসজমি, খাল-নালা ভরাট করে ‘উন্নয়ন’ করেন, তাঁদের কাজের জবাবদিহি চাইতে হবে। গুটিকয় মানুষের সর্বগ্রাসী লিপ্সার কারণে ব্যাপক জনগোষ্ঠীর অসহায়ত্ব মেনে নেওয়া যায় না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত