Ajker Patrika

লক্ষ্যমাত্রার ৫ শতাংশ ধানও সংগ্রহ হয়নি

সাইফুল আরিফ জুয়েল, নেত্রকোনা
লক্ষ্যমাত্রার ৫ শতাংশ ধানও সংগ্রহ হয়নি

সরকার গত বোরো মৌসুমে নেত্রকোনায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধান কিনতে ব্যর্থ হয়েছে। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বাজারে ধানের দাম বেশি থাকায় গত মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার পাঁচ শতাংশ ধানও সংগ্রহ করতে পারেনি। তবে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা সঠিকভাবেই অর্জিত হয়েছে বলে জানা গেছে। জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের কারিগরি খাদ্য পরিদর্শক হিমেল সরকার গত বৃহস্পতিবার আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বোরো মৌসুমে সরকারিভাবে ১ হাজার ৮০ টাকা মণ (৪০ কেজি) দরে কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করে। জেলার ১০ উপজেলায় গত ২৮ এপ্রিল থেকে শুরু করে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ধান ক্রয় করে খাদ্যগুদামগুলো। বোরো মৌসুমে জেলায় ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২৪ হাজার ৪৮৪ টন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ধান সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ১ হাজার ২৬৯ টন, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার পাঁচ শতাংশেরও কম।

সরকারি নির্ধারিত দামের চেয়ে কৃষকেরা বাজারে বেশি দামে ধান বিক্রি করতে পারায় সরকার লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধান কিনতে ব্যর্থ হয়।

জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে আরও জানা গেছে, ৪০ টাকা কেজি দরে সেদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৬ হাজার ২২ টন। সংগ্রহ হয়েছে ৫১ হাজার ১৬৪ টন। আর ৩৯ টাকা কেজি ধরে আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৩৭ টন।  সংগ্রহ হয়েছে ৭৩৬ দশমিক ৯৩০ টন।  সরকারিভাবে ধান ও চাল দুটোই ১৪ শতাংশ আর্দ্র কেনা হয়।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খেত থেকেই আড়তদারেরা ভেজা ধান বেশি দামে কৃষকদের কাছ থেকে কিনে নিয়েছেন। সরকারি গুদামে শুকনো ও চিটামুক্ত ধান ক্রয় করা হয়। আবার খেত থেকে গুদামে নিয়ে যেতে পরিবহন খরচও অনেক। সব মিলিয়ে দাম বেশি পেয়ে খোলাবাজারে ধান বিক্রি করেছেন কৃষকেরা।

নেত্রকোনা সদর উপজেলার সিংহের রৌহী গ্রামের কৃষক শহীদ মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গুদামে ধান বিক্রি করলে লোকশান। কারণ, একই সময়ে খোলাবাজারে বেশি দামে ধান বিক্রি করতে পেরেছি। আড়তদারেরা তাঁদের নিজস্ব গাড়িতে করে খেত থেকে ভেজা ধান নিয়ে গেছে। দামও সরকারি দরের চেয়ে বেশি পেয়েছি।

 আর গুদামে শুকনো ধান দেওয়া লাগে। সামান্য চিটা থাকলেও তারা নিতে চায় না, দামও কম। আবার নিজেদের খরচে গাড়িতে করে গুদামে নিয়ে যেতে হয়। এতে খরচ আরও বেড়ে যায়। এ কারণে আমাদের এলাকার কৃষকেরা খেতেই ভেজা ধান বিক্রি করেছে।’

জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের কারিগরি খাদ্য পরিদর্শক হিমেল সরকার বলেন, ‘লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়াটা কোনো সমস্যা নয়। সরকারের মূল লক্ষ্য হলো কৃষক যেন ধানের ন্যায্যমূল্য পান।

 সরকারিভাবে ধানের একটা দাম নির্ধারণ না করে দিলে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের জিম্মি করে কম দামে ধান কিনবেন। কৃষকেরা ধানের ন্যায্যমূল্য পাবেন। এটাই সরকারের মূল লক্ষ্য। কৃষকেরা বেশি দামে ধান বিক্রি করতে পেরেছেন। এটাও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনই বলা যেতে পারে।’

হিমেল সরকার আরও জানান, সরকারিভাবে ধান সংগ্রহের একটা নিয়ম আছে। যেমন ধান-চাল দুটোর ক্ষেত্রেই ১৪ শতাংশ আর্দ্রতা থাকতে হবে। ধানের বেলায় চিটা ও ভিন্ন জাতের মিশ্রণের একটা পরিমাণ নির্ধারণ থাকে। তবে কৃষকেরা এবার সরকারি দামের চেয়ে অধিক দামে খেত থেকে ভেজা ধান বিক্রি করেছেন ব্যবসায়ীদের কাছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত