Ajker Patrika

অশনি-আতঙ্কে উপকূলবাসী

কামাল হোসেন, কয়রা
আপডেট : ১০ মে ২০২২, ১২: ৩৯
অশনি-আতঙ্কে উপকূলবাসী

দক্ষিণ মধ্য বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’ শক্তি বাড়িয়ে ধেয়ে আসছে বাংলাদেশ উপকূলের দিকে। আবারও বেড়িবাঁধ ভাঙার আতঙ্কে দিন কাটছে আইলা, আম্ফান ও ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্ত খুলনার কয়রার মানুষের। এরই মধ্যে বেড়িবাঁধের বাইরে এবং বাঁধের কাছাকাছি বসবাসরত মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় অশনি কিছুটা উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে শক্তি বাড়িয়ে ক্যাটাগরি ১ ক্ষমতাসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে এখন দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গড় গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার, যা সর্বোচ্চ দমকা হাওয়ার আকারে ১৪৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে সাগর উত্তাল রয়েছে।

এটি গতকাল সোমবার দুপুর পর্যন্ত মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৯৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮০৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড়ের বাইরের দিকের মেঘমালা ইতিমধ্যে দেশের মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত চলে এসেছে। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই মেঘমালা দেশের সব এলাকায় বিস্তার লাভ করতে পারে।

১২ বা ১৩ মে ভারতের দক্ষিণ ওডিশায় ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় আঘাত করার আশঙ্কা রয়েছে।

উপজেলার কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীতীরবর্তী যেসব এলাকায় এখনো টেকসই বেড়িবাঁধ হয়নি, সেসব গ্রামে বসবাসকারী পরিবারগুলোর মধ্যে ‘অশনি’ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়িয়েছে। তাদের অধিকাংশের নেই দুর্যোগসহনীয় বাড়িঘর। ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ২০ হাজার পরিবারের অনেকেই এখনো মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। এর মধ্যে আরেকটি দুর্যোগের সতর্কসংকেত তাদের ভাবিয়ে তুলেছে। উপজেলা প্রশাসন বলছে, ঘূর্ণিঝড় অশনি মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের জোড়শিং গ্রামের বাসিন্দা কামাল মোল্লা জানান, সুপার সাইক্লোন আইলায় তাঁর ঘর ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এরপর নতুন করে আবার ঘর বাঁধেন তিনি। সেটিও নদীভাঙনে বিলীন হয়ে যায়। উপায় না পেয়ে তিনি চলে যান রাঙামাটিতে। ৫ বছর পর ফিরে এসে আবারও মাথা গোঁজার মতো একটা ঘর বেঁধেছেন। কিন্তু তাঁর বাড়ির সামনে দিয়ে আবারও ভাঙন শুরু হয়েছে। যেকোনো সময় জলোচ্ছ্বাসে ভেঙে যেতে পারে। যে কারণে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন তিনি। এবার ভাঙলে আবারও ভিটে ছেড়ে চলে যেতে হবে।

একই গ্রামের বাসিন্দা শিক্ষক মিলন হোসেন বলেন, নদীতে একটু জোয়ার বেশি হলে রাস্তা ছাপিয়ে লোকালয়ে পানি ঢোকে। ২ নম্বর সংকেত চলছে। জোড়শিং ট্যাকের মাথা এই পয়েন্টে জরুরি ভিত্তিতে কাজ না করলে অশনি আঘাত হানলে এখান থেকে ভেঙে হাজার হাজার বিঘা মাছের ঘের, ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, উপকূলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি টেকসই বেড়িবাঁধ। তবে আম্পান ও ইয়াসে ষাট দশকের জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ড অনেক কাজ করছে। তবে কিছু এলাকায় কাজ না করায় আতঙ্ক বেড়ে গেছে ওই সব এলাকার মানুষের; বিশেষ করে ঝুঁকির মুখে রয়েছে দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের আংটিহারা, খাসিটানা, জোড়শিং ও মাটিয়াভাঙ্গা। কয়রা সদর ইউনিয়নের মদিনাবাদ লঞ্চঘাট ও মদিনাবাদ তফসিল অফিসের সামনে থেকে হামকুড়ার গড়া এবং মহারাজপুর ইউনিয়নের দশালিয়া ও সুতির কোনা ঝুঁকিতে রয়েছে।

উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় অশনি বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এই অবস্থায় ঘূর্ণিঝড়কে কেন্দ্র করে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ১১৮টি আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কাজে লাগানো হবে। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতি এড়াতে কাজ করবে সরকারি কর্মকর্তা, সিপিপি, বেসরকারি এনজিওর স্বেচ্ছাসেবকেরা।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (সেকশন-২) নির্বাহী প্রকৌশলী শামিম হাসনাইন মাহমুদ বলেন, ‘আম্পান ও ইয়াসের পর থেকে কয়রা উপজেলায় ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধে কাজ চলছে। তবে ঘূর্ণিঝড় অশনিতে কয়রা উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত