Ajker Patrika

এক সপ্তাহে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হাজার ছাড়াল

মতলব দক্ষিণ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২২, ১৮: ৪৮
এক সপ্তাহে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হাজার ছাড়াল

চাঁদপুরের মতলব আইসিডিডিআরবিতে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি বেড়ে গেছে। যাদের বেশির ভাগই বয়স্ক ও শিশু। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন ১৭৪ জন। গত এক সপ্তাহে ভর্তি হয়েছেন সহস্রাধিক রোগী। তবে হাসপাতালে ভর্তির পর কোনো রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।

চলতি মৌসুমে আবহাওয়াজনিত কারণে কলেরা, ডায়রিয়াসহ নানা ধরনের পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। শুধু চাঁদপুর নয়, আশপাশের জেলা থেকেও রোগীরা ছুটে আসছেন বিশেষায়িত এই হাসপাতালটিতে।
একদিকে ঋতু পরিবর্তন, অন্যদিকে আবহাওয়াজনিত কারণ। এতে নানা ধরনের পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন বিভিন্ন বয়সের মানুষ। তাই এই সময় শুধু ডায়রিয়ার রোগীই নয়, কলেরায় আক্রান্ত রোগীর চাপও বাড়ছে চাঁদপুরের মতলবের বিশেষায়িত এই হাসপাতালে। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিদিন এই হাসপাতালে চাঁদপুরের আশপাশের জেলাগুলো থেকেও রোগীরা চিকিৎসাসেবা নিতে ছুটে আসছেন। এখানে বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা পেয়ে খুশি রোগী ও তাঁদের স্বজনরা।
হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলো ঘুরে রোগীর ভিড় দেখা গেছে। এতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চিকিৎসকসহ নার্সরা। আর কাঙ্ক্ষিত সেবা এবং দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পেয়ে খুশি রোগী এবং তাঁদের স্বজনেরা। এদের মধ্যে লক্ষ্মীপুরের মাজেদা বেগম (৩৭) গত ২৯ মার্চ সকাল পৌনে ৯টায় এই হাসপাতালে ভর্তি হন। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার মধ্যে পুরোপুরি সুস্থ তিনি। কুমিল্লা জেলার বড়ুরা উপজেলা থেকে ৫ মাসের শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে শিশু মরিয়মকে নিয়ে তার মা এখানে ছুটে আসেন। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শিশুটি সুস্থ হয়ে উঠে। এমন আরও অসংখ্য মানুষ পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হওয়ার পর তাদের ভরসা মতলবে বিশেষায়িত এই হাসপাতাল।

এদিকে, হাসপাতালে নিয়ে আসার পর রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদান এবং ভর্তির ধরন নিয়ে কথা বলেন, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা। বছরের অন্যসময় প্রতিদিন ৬০-৭০ রোগী ভর্তি হলেও এখন সেই সংখ্যা এক শ’ ছাড়িয়ে গেছে। সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. চন্দ্রশেখর দাস জানান, মুমূর্ষু প্রায় এই রোগীর রগে আট লিটার স্যালাইন এবং মুখে আরও চার লিটার স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণ থেকে তাকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক আরও জানান, প্রতিদিন ভর্তি হওয়া মোট রোগীর মধ্যে ১০ শতাংশ হচ্ছে এমন মুমূর্ষু কলেরায় আক্রান্ত। এমন অবস্থায় গত সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় চলতি মাসে রোগীর সংখ্যা আনুপাতিক হারে বেড়ে চলেছে। এই সময় পেটের নানা ধরনের পীড়া থেকে রক্ষা পেতে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন হাসপাতালের প্রধান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আল ফজল খান। তিনি জানান, বর্ষার আগে এবং পরে পানিবাহিত রোগে বেশির ভাগ মানুষ আক্রান্ত হন। তবে গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় আগেই হাসপাতালে ভর্তির জন্য পরামর্শ দেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ৬ দশক ধরে আইসিডিডিআরবি-হাসপাতাল, মতলব কেন্দ্রে ৮ লাখ রোগীকে চিকিৎসাসেবা প্রদান করেছে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকার মহাখালী এবং মতলবের এই হাসপাতালে প্রতিবছর দুই লাখ রোগী বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা পেয়ে থাকেন। তবে বিদেশি রাষ্ট্র ও দাতা সংস্থাগুলো এই পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা দিয়ে আইসিডিডিআরবি হাসপাতাল চালু রাখতে সহায়তা করলেও এখন তাদের অনুদান প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের অনেকেই এটি রক্ষায় এগিয়ে এসেছেন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত