Ajker Patrika

ভ্যানচালক সেলিমের চাওয়া বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হোক

রাজৈর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি
Thumbnail image

মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার শাখারপাড় এলাকার ভ্যানচালক সেলিম শরীফ। বড় মেয়ে প্রতিবন্ধী। প্রতিবন্ধীদের অসহায়ত্বের কথা চিন্তা করে ভ্যান চালিয়ে কষ্টার্জিত অর্থে প্রতিষ্ঠা করেন প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংস্থা ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়। প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ২২৫ জন শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। কর্মরত ১১ জন শিক্ষক ও চারজন কর্মচারী।

ভ্যানচালক সেলিমের কষ্টার্জিত ও এলাকার বিত্তবানদের অর্থে চলছে বিদ্যালয়ের যাবতীয় খরচ। তাঁর স্বপ্ন, প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টিকে একটি ভালো অবস্থানে নিয়ে যাওয়া। সেই লক্ষ্যে বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত করানোর জন্য ছুটছেন সরকারি কর্মকর্তা ও সমাজের বিত্তবানদের দ্বারে। সেলিমের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন সমাজের অনেকে। স্বপ্ন পূরণের চেষ্টায় ভ্যানচালক সেলিম প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টির জন্য সরকারের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন। বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত করার দাবিও শিক্ষক ও এলাকাবাসীর।

জানা গেছে, রাজৈরের শাখারপাড় এলাকার ভ্যানচালক সেলিম শরীফের বড় মেয়ে মরিয়ম প্রতিবন্ধী। মরিয়মের বিষয়টি মাথায় নিয়ে সেলিম শরীফ একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেন। যেখানে শুধু পড়াশোনা না, কারিগরি শিক্ষা পাবে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা। এই লক্ষ্যে সভা-সমাবেশ করেন সেলিম শরীফ। তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলস্বরূপ ২০১৭ সালে যাত্রা শুরু করে প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংস্থার।

আর ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন প্রতিবন্ধী স্কুল। ২০২০ সালে স্কুলের নামে ২০ শতাংশ জমি কিনে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিদ্যালয়ের একটি টিনশেড ঘরের উদ্বোধন করেন। ২০২১ সালে এক জাঁকজমক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিদ্যালয়ের ২২৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে বই বিতরণ, ৭০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে শীতবস্ত্র ও তিনটি হুইলচেয়ার বিতরণ করা হয়।

বিদ্যালয়টির ১১ জন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তক পড়ানোর পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষা দেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষা সহায়কেরা শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পাশাপাশি নকশিকাঁথা, ঠোঙা, মোমবাতি, এলইডি বাল্ব তৈরি ও সেলাই প্রশিক্ষণ দেন।

এই বিদ্যালয়ের ১৫ জন শিক্ষক-কর্মচারী বিনা বেতনে কাজ করছেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের তৈরি এলইডি বাল্ব, মোমবাতি ও নকশিকাঁথা বিক্রির টাকা খরচ হয় বিদ্যালয়ের কার্যক্রমে। বিদ্যালয়টিতে সাত কক্ষবিশিষ্ট দুটি টিনশেড ঘর রয়েছে। তবে বিদ্যালয়টিতে যাতায়াতের সুব্যবস্থা না থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খাদিজা আক্তার বলেন, ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে বিদ্যালয়টি স্বীকৃতি ও এমপিওভুক্তির জন্য অনলাইনে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে।

বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ১১ জন শিক্ষক ও চারজন কর্মচারী বিনা বেতনে কাজ করছেন। শিক্ষার্থীরাও অবৈতনিকভাবে লেখাপড়া করছে। বিদ্যালয়টির শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংস্থা ও বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মো. সেলিম শরীফ বলেন, বিদ্যালয়টি স্বীকৃতির জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। বিদ্যালয়টিতে প্রতি ১০ জন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক ও একজন শিক্ষা সহায়ক প্রয়োজন। এমন করে ২২৫ জন শিক্ষার্থীর জন্য ২০ জন শিক্ষক ও ২০ জন সহায়ক প্রয়োজন। কিন্তু শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দিতে না পারায় শিক্ষকেরা বিদ্যালয়ের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।

বর্তমানে পাঁচজন শিক্ষক, পাঁচজন শিক্ষা সহায়ক, একজন প্রধান শিক্ষক ও চারজন কর্মচারী দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হচ্ছে। সরকারি সহায়তা না পেলে বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি। বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা নিজে ভ্যান চালিয়ে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আনা-নেওয়া করেন। ভ্যান চালানো অর্থ ও বিত্তবানদের দেওয়া অর্থ দিয়ে কোনো রকম বিদ্যালয়টি পরিচালনা করছেন তিনি। বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্তির জন্য তিনিও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনিসুজ্জামান বলেন, ‘সরকারিভাবে বিদ্যালয়টির সীমানাপ্রাচীর করে দেওয়া হয়েছে। ওয়াশ ব্লক ও শ্রেণিকক্ষের জন্য ভবন নির্মাণের কাজ চলছে।

শিগগিরই বিদ্যালয়টি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত হবে এবং এমপিওভুক্ত হবে বলে আশা করি।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত