Ajker Patrika

ভাঙন বাড়ছেই, ডুবল বিস্তীর্ণ খেত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
আপডেট : ২৪ মে ২০২২, ১৬: ৪৭
ভাঙন বাড়ছেই, ডুবল বিস্তীর্ণ খেত

দিনের টানা বৃষ্টিতে যমুনায় পানি বেড়েছে। ভাঙন দেখা দিয়েছে সিরাজগঞ্জের কাজীপুর চরাঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র নাটুয়ারপাড়া রক্ষা বাঁধে। বাঁধ রক্ষায় আট হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এদিকে সাত দিনে চৌহালী উপজেলার অন্তত আড়াই হাজার বিঘা জমির চিনাবাদাম  এবং পাকা ও আধা পাকা ইরি-বোরো ধান ডুবে গেছে।

এতে উপজেলার প্রায় ৮০০ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ এলাকায় বিপৎসীমা ধরা হয় ১৩ দশমিক ৩৫ সেন্টিমিটার। গত ২৪ ঘণ্টায় (গত রোববার বেলা ৩টা থেকে গতকাল সোমবার বেলা ৩টা পর্যন্ত) যমুনা নদীর পানি ৬ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে যমুনায় পানি বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে স্রোতের তীব্রতা। এরই মধ্যে নাটুয়ারপাড়া রক্ষা বাঁধের বেশ কয়েকটি বিদ্যুতের খুঁটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

 গতকাল সোমবার সকালে দেখা গেছে, নাটুয়ারপাড়া রক্ষা বাঁধের উভয় পাশেই ভাঙছে। ভাঙন ঠেকাতে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড বালুভর্তি জিও ব্যাগ ভাঙনকবলিত স্থানে ফেলছে। তারপরও ভাঙন থামানো যাচ্ছে না। তবে বাঁধের শীর্ষে থাকা একটি নামাজঘর এখনো অক্ষত রয়েছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, যমুনায় পানি বাড়তে থাকায় ভাঙনঝুঁকিতে রয়েছে চরাঞ্চলের ডিক্রি তেকানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাজলগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডগলাস ভেটুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণচর জগন্নাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

ওই বাঁধে ভাঙন ঠেকানোর কাজে নিয়োজিত ঠিকাদার মেসার্স সরকার ফার্মের প্রতিনিধি আবুল কালাম আজাদ জানান, বাঁধের দক্ষিণাংশে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে কয়েক দিন ধরে ভাঙন রোধের চেষ্টা চলছে। কিন্তু এখনো পানি বৃদ্ধি অব্যাহত। ফলে বাঁধ একটু একটু করে ভাঙছেই।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপসহকারী প্রকৌশলী হায়দার আলী জানান, বাঁধটি রক্ষার্থে এরই মধ্যে আট হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। আবারও ভাঙন দেখা দিয়েছে। নতুন বরাদ্দকৃত দুই হাজার জিও ব্যাগ ফেলা শুরু হয়েছে।

কাজীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান সিরাজী জানান, ‘চরাঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র নাটুয়ারপাড়া বাঁধ রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড কয়েক দিন ধরে কাজ করছে। আমরা দলীয় নেতা-কর্মীসহ আমাদের সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয় সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন।’

 এদিকে চৌহালী উপজেলার বাঘুটিয়া, উমারপুর ও ঘোরজান ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে শীতের শেষের দিকে এসব চিনাবাদাম ও ইরি ধান আবাদ করা হয়েছিল। এক সপ্তাহে হঠাৎ উজান থেকে পাহাড়ি ঢলের পানি নেমে ওই সব চরে ঢোকে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা জানান, গত শীত মৌসুমের শেষ দিকে উপজেলার বিভিন্ন চর এলাকার নিম্নাঞ্চলের অল্প পানির জমিতে বাদামবীজ বপন ও ইরি ধান রোপণ করা হয়। এ ছাড়া চরাঞ্চলের পাঁচ শতাধিক একর জমিতে আউশের চারা রোপণ করা হয়। চলতি মাসে এসব ধান পাকা শুরু হয়েছিল। হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধির ফলে যমুনা চরের কৃষকদের সোনালি স্বপ্ন এখন পানির নিচে।

জানা গেছে, উপজেলার যমুনা চরের সদিয়াচাঁদপুর, স্থলচর, ঘোরজান, খাষকাউলিয়া, খাষপুখুরিয়া, বাঘুটিয়া ও উমারপুর—এই সাত ইউনিয়নে 
তিন-চার একর চিনাবাদাম ও আড়াই থেকে ৩০০ বিঘা ইরিখেত তলিয়ে গেছে। তবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে খাষপুখুরিয়া, বাঘুটিয়া ও উমারপুরে।

উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের বিনানই গ্রামের কৃষক মো. গনী মিয়া বলেন, ‘যমুনার জোয়ারের পানি বেড়ে মাত্র দু-তিন দিনের ব্যবধানে আমার প্রায় ১৫ বিঘা বাদামখেত ডুবে গেছে। সারা বছরের কষ্ট সব বিলীন হয়ে গেল। সামনে কী খেয়ে বাঁচব, এ চিন্তায় আছি।’

চৌহালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জেরিন আহমেদ বলেন, হঠাৎ বন্যার পানি বেড়ে চিনাবাদাম ও ইরিচাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৷ এক হেক্টর বাদাম আর চার হেক্টর ধান ডুবে গেছে। তবে যমুনা চরের ক্ষতিগ্রস্ত বাদাম ও ধানের বিবরণী তৈরি করে ঊর্ধ্বতন দপ্তরে পাঠানো হবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য কোনো বরাদ্দ এলে তাঁদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত