দুই সংস্থার ঠেলাঠেলিতে ১৬ বছর সংস্কারহীন এক সড়ক

বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার বনানী মহাসড়ক থেকে হেলেঞ্চাপাড়া হয়ে মাদলা হাট পর্যন্ত তিন কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের অভাবে বেহাল পড়ে রয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এবং বগুড়া পৌরসভার টানাপোড়েনে দীর্ঘ ১৬ বছরে সংস্কারের ছোঁয়া লাগেনি সড়কটিতে। বগুড়া পৌরসভার প্রকৌশলী বলছেন, সড়কটি এলজিইডি করেছিল। পরে পৌরসভার সীমানার মধ্যে চলে এসেছে। এলজিইডির প্রকৌশলী বলছেন, পৌরসভার কাজ না করতে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ আছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইট, মাটি, বালুসহ অতিরিক্ত পণ্যবোঝাই ট্রাক যাতায়াতে প্রথমে সড়কটি ভেঙে যায়। সংস্কারের অভাবে ধীরে ধীরে এখন তা জনদুর্ভোগে পরিণত হয়েছে। প্রায় ২০ গ্রামের কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদিত ফসল বনানী সুলতানগঞ্জ হাট এবং জেলা শহরে নিতে বেশির ভাগ সময় মহাসড়ক ব্যবহার করছেন। এছাড়াও ওই পথে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করে।

মাদলা দরিনন্দ গ্রামের সবজি ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জানান, বেজোড়া, হেলেঞ্চাপাড়া, মাদলা, চাঁচাইতারা, কাজিপাড়া, মালিপাড়া, দরিনন্দ, বলদিবলান, চকমোমিন, শেরকোলসহ আশপাশের কমপক্ষে ২০ গ্রামের কৃষক তাঁদের উৎপাদিত পণ্য বেহাল রাস্তার কারণে মহাসড়কের ওপর দিয়ে অনেক ঘুরে আসতে হচ্ছে। মহাসড়কে ভ্যান নিয়ে চলাচল করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

একই এলাকার বাসিন্দা শাজাহানপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিন্টু মিয়া বলেন, ‘বিভিন্ন সময় শাজাহানপুর উপজেলা প্রকৌশল অফিসে এবং বগুড়া পৌরসভায় যোগাযোগ করেছি; কিন্তু এক অফিস থেকে আরেক অফিসকে দেখিয়ে দেওয়া হয়। এখন আমরা হাল ছেড়ে দিয়েছি।’

ওই সড়কসংলগ্ন ২১ নম্বর ওয়ার্ড বেজোড়া এলাকার বাসিন্দা রুবেল আহমেদ বলেন, ‘আমার মতো শতাধিক মানুষ জীবিকার প্রয়োজনে এই সড়ক দিয়ে বাধ্য হয়ে চলাচল করেন। দীর্ঘ ১৬ বছরেও এই সড়কটি সংস্কার হয়নি। যেখানে-সেখানে রাস্তা ভেঙে দেবে গেছে। সুচালো সুরকি বের হয়ে আছে। এই সড়কে চলাচল করা বাহনগুলোর টায়ার পাংচার হয় ঘন ঘন। এতে সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়ছে।’

বগুড়া পৌরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রুহুল কুদ্দুস ডিলু বলেন, ‘সড়কটি সংস্কারে আমি অনেক জায়গায় ধরনা দিয়েছি। পৌরসভায় মিটিংয়ে আমি বিভিন্ন সময় বলেছি; কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।’

জানতে চাইলে শাজাহানপুর উপজেলার বিদায়ী প্রকৌশলী ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘সড়কটি পৌরসভার ভেতরে পড়েছে। আমরা চাইলেই সেখানে কাজ করতে পারি না।’

বগুড়া পৌরসভার প্রকৌশলী আবুহেনা মোস্তফা কামাল জানান, পৌরসভার বরাদ্দ খুবই কম।  সেই টাকা দিয়ে বগুড়া শহরের মূল জায়গাগুলোতে কাজ করা হচ্ছে। বনানী থেকে মাদলা হাট পর্যন্ত রাস্তার ৩ কিলোমিটার কাজ করতে খরচ হবে প্রায় ৪ কোটি টাকা। সড়কটি এলজিইডি করেছিল। পরে আমাদের সীমানার মধ্যে চলে এসেছে। সংস্কারের জন্য এলজিইডিকে অনুরোধ করেছিলাম। এই সড়কে প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন প্রকল্পের বরাদ্দ পাওয়ার জন্য আবেদন করে রেখেছি। আশা করছি, আগামী এক বছরের মধ্যে কাজ করতে পারব।’

বগুড়া এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. গোলাম মোর্শেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সড়কটি আমরাই করেছিলাম। পরবর্তী সময়ে এটি বগুড়া পৌরসভার ভেতরে যায়। এই সড়ক এখন পৌরসভাকেই করতে হবে। পৌরসভার কাজ না করতে মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের প্রতি কঠোর নির্দেশ আছে। পৌরসভা বিভিন্ন প্রজেক্ট থেকে সড়কটি সংস্কার করতে পারে।’