Ajker Patrika

৭০০ ছাত্রের শিক্ষক ৯ জন

বেলাল হোসাইন, রামগড় (খাগড়াছড়ি) 
আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৩: ৫৮
Thumbnail image

খাগড়াছড়ির রামগড় সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের সাত শতাধিক ছাত্রের জন্য ৯ জন শিক্ষক রয়েছেন। এই অল্পসংখ্যক শিক্ষক পাঠদানে বেগ পোহাচ্ছেন। দিতে পারছেন না মানসম্পন্ন শিক্ষাসেবা। এতে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফলও সন্তোষজনক হচ্ছে না। এ নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। বাধ্য হয়ে কেউ কেউ বিদ্যালয় পরিবর্তন করে সন্তানদের অন্যত্র ভর্তি করাচ্ছেন।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এটি উপজেলার একমাত্র বালক উচ্চবিদ্যালয়। ১৯৫২ সালে প্রাচীন মহকুমা শহর রামগড়ের প্রাণকেন্দ্রে ৩ একর ২০ শতক জমির ওপর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৬৮ সালে এটি জাতীয়করণ করা হয়। জাতীয়করণের ৫৩ বছরেও এই বিদ্যালয়ের শিক্ষকসংকট এখনো কাটেনি। জোড়াতালি দিয়ে কোনো রকম পাঠদান হচ্ছে এখানে।

বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ২৫ জন শিক্ষকের পদ রয়েছে। এর মধ্যে ১৬টিই খালি। এখানে গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, ভূগোল, কৃষিশিক্ষা ও চারুকলার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কোনো শিক্ষক নেই। বাংলা ও ইংরেজিতে চারজন শিক্ষকের পরিবর্তে রয়েছেন একজন করে। সামাজিক বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও রসায়নে দুজনের স্থানে রয়েছেন একজন করে। শারীরিক শিক্ষা বিষয়ের জন্য নির্ধারিত শিক্ষক না থাকলেও অতিরিক্ত একজন শিক্ষক রাখা হয়েছে।

বিদ্যালয় সূত্রে আরও জানা গেছে, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা সাত শতাধিক। নবম ও দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান শাখায় রয়েছে ৬০ জন, ব্যবসায় শাখায় ১২০ ও মানবিক শাখায় রয়েছে ১০০ জন। বিজ্ঞান ও ব্যবসায় বিভাগের জন্য একজন করে শিক্ষক থাকলেও মানবিক শাখার জন্য কোনো শিক্ষক নেই।

আদিত্য অনুপম রুদ্র নামের দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলে, ‘বিদ্যালয়ে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নেই। জোড়াতালি দিয়ে শ্রেণির কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। বিদ্যালয়ের বাইরে অন্য স্কুলের শিক্ষক ও কলেজের কয়েকজন বড় ভাইয়ের কাছে আমাদের প্রাইভেট পড়তে হচ্ছে। আসন্ন এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে আমরা খুব চিন্তিত।’

সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মোহাম্মদ রউফ উদ্দীন বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী স্কুলটি এখন একপ্রকার প্রাণহীন। শিক্ষকের সংকট। বাইরের অনভিজ্ঞ কয়েকজন কলেজ শিক্ষার্থীর কাছে প্রাইভেট পড়তে হয়। এভাবে শিক্ষার্থীদের প্রকৃত শিক্ষা ব্যাহত হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অনেক অভিভাবক তাঁদের সন্তানদের ভালো শিক্ষা দিতে চান। তাঁরা কষ্ট করে রাজধানীমুখী করছে সন্তানদের।’ সপ্তম শ্রেণির পর তাঁর ছেলেকে পাশের জেলা ফেনীতে ভর্তি করাবেন বলে জানান তিনি।

রামগড় সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল কাদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেন, ‘শিক্ষক সংকটের কথা একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। শিক্ষক না থাকায় আমরা নিজেরা ক্লাস নিতে হিমশিম খাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের ভালো ফলাফল হচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে এ অঞ্চলের শিক্ষার মান অনেক পিছিয়ে যাবে।’

এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু কাওছার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রতিবছর নিয়োগ পরীক্ষা শেষে কিছু শিক্ষক এখানে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে এ বছর কোনো শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। এর ফলে বিদ্যালয়ে শিক্ষকসংকট চরমে পৌঁছেছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রামগড় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্ব ত্রিপুরা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিদ্যালয়টিতে শিক্ষকসংকট দীর্ঘদিনের। শিক্ষকেরাও একপ্রকার নিরুপায়। উপজেলার প্রায় সব বিদ্যালয়ে শিক্ষকসংকট। শিক্ষক নিয়োগের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত