Ajker Patrika

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে ফুটপাত যেন মরণফাঁদ

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২৮ মার্চ ২০২২, ০৯: ৫৭
Thumbnail image

তিন বন্ধুসহ এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের প্রবেশমুখ থেকে সিআরবি এলাকায় যাচ্ছিলেন চট্টগ্রাম কমার্স কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরাফাত। ফুটপাত ধরে হেঁটে যাওয়ার সময় তিনি হঠাৎ নালায় পড়ে যান। ভেঙে যায় আরাফাতের বাম পায়ের হাড়।

৩০ নভেম্বর এ ঘটনা ঘটে। সে সময় আরাফাত জানিয়েছিলেন, হল-২৪-এর বিপরীতে ফুটপাতের ওপর একটি স্ল্যাব উন্মুক্ত ছিল। ৩০ নভেম্বর রাত ১০টার দিকে বন্ধুদের সঙ্গে ফুটপাত ধরে হাঁটার সময় অসাবধানতাবশত উন্মুক্ত স্ল্যাবে তিনি পড়ে যান। এরপর চার মাস ধরে ভাঙা পা নিয়ে কষ্টে জীবনযাপন করছেন তিনি।

শুধু আরাফাত নন, গত এক বছরে উন্মুক্ত নালায় পড়ে এভাবে অনেকে হতাহত হয়েছেন। শুধু ২০২১ সালে চট্টগ্রাম নগরীতে উন্মুক্ত নালা-খালে পড়ে মারা গেছেন পাঁচজন। তাঁদের মধ্যে ২৭ সেপ্টেম্বর আগ্রাবাদ এলাকায় নালায় পড়ে মারা যান বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষার্থী শেহেরীন মাহমুদ সাদিয়া। এর আগে আগস্টে মুরাদপুর এলাকায় উন্মুক্ত খালে পড়ে মারা যান সালেহ আহমেদ নামের এক ব্যবসায়ী। তাঁদের মধ্যে একজনের লাশ এখনো পাওয়া যায়নি।

এসব ঘটনায় উন্মুক্ত খাল-নালায় স্ল্যাব বসানোর দাবি তোলেন চট্টগ্রামবাসী। সমালোচনার মুখে ডিসেম্বর মাসে উন্মুক্ত নালায় স্ল্যাব বসানোর কাজ শুরু করে সিটি করপোরেশন। এরপর ৭ মাস পার হয়েছে। তবে এখনো নগরীর উন্মুক্ত খাল-নালায় স্ল্যাব বসানোর কাজ শেষ করেনি তারা। আর তাতে উন্মুক্ত নালায় পড়ে হতাহতের ঘটনা বাড়ছে।

ফুটপাত ধরে হাঁটতে গিয়ে প্রায় সময় নালায় পড়ে আহত হচ্ছেন নগরবাসী। সর্বশেষ দুই দিনে নগরীতে এক শিশুসহ দুজন নালায় পড়ে যায়। তাদের মধ্যে ৫ বছর বয়সী এক শিশু গত শনিবার বিকেলে তার মায়ের সঙ্গে হেঁটে যাওয়ার সময় নগরীর পুরাতন চান্দগাঁও এলাকায় নালায় পড়ে যায়। কাজল নামের আরেক ব্যক্তি গতকাল রোববার দুপুরে একই এলাকার স্বাধীনতা কমপ্লেক্সের বিপরীতে উন্মুক্ত নালায় পড়ে আহত হন। পরে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাঁকে উদ্ধার করেন।

সিটি করপোরেশনের (চসিক) হিসাবে নগরীতে ১৬১ কিলোমিটার খাল এবং ৯৪৬ কিলোমিটার পাকা নালা আছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় ৩৬টি খালের ৯৫ দশমিক ২ কিলোমিটার খাল ও ৩০২ কিলোমিটার নালার সংস্কারকাজ করছে। বাকি ২১টি খাল ও ৬৪৪ কিলোমিটার নালা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অধীনে রয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, এই ৬৪৪ কিলোমিটার নালার অধিকাংশ জায়গা উন্মুক্ত। নগরীর ওয়াসা, জিইসি, জাকির হোসেন রোডে ফুটপাত ধরে হেঁটে যাওয়ার সময় দেখা যায়, কিছুদূর পরপরই মাঝখানে একটি স্ল্যাব নেই। আবার কোথাও নালার ওপর স্ল্যাব বসানো হলেও দেখা যায়, মাঝখানে একটি স্ল্যাব নেই। অথবা স্ল্যাব থাকলেও হয় ভাঙা, না হয় দুই স্ল্যাবের মাঝখানে অনেকটা ফাঁকা। আর তাতে ফুটপাত ধরে হাঁটতে গিয়ে ফাঁকা অংশ দিয়ে প্রায় অসাবধানতাবশত নালায় পড়ে যান নগরবাসী।

নগরবাসীর অভিযোগ, এসব ভাঙা ও উন্মুক্ত নালায় স্ল্যাব বসানোর জন্য স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ সংশ্লিষ্টদের বারবার বলা হচ্ছে। তবে তাঁরা কোনো পদক্ষেপ নেন না।

তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলীরা। তাঁরা বলেছেন, কোথাও স্ল্যাব ভেঙে যাওয়ার খবর পেলেই তাঁরা সেখানে নতুন স্ল্যাব বসিয়ে দিচ্ছেন। গত ডিসেম্বর মাস থেকে এখন পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ২৫ হাজার স্কয়ার ফুট স্ল্যাব বসিয়েছেন তাঁরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রকৌশল বিভাগ থেকে নিয়মিত ভাঙা স্ল্যাবগুলো সরিয়ে সেখানে নতুন স্ল্যাব বসানো হয়। এক জায়গায় একটি স্ল্যাব ঠিক করা হলে অন্য জায়গায় আরেকটি স্ল্যাব ভেঙে যাচ্ছে। আমাদের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কর্মীরা নালা পরিষ্কার করার সময় স্ল্যাব তুলে পরে আবার বসানোর সময় ভেঙে যাচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও ব্যক্তিগত প্রয়োজনে মানুষ স্ল্যাব তুলে নিয়ে যাচ্ছে। নানা কারণে স্ল্যাব ভেঙে যাচ্ছে। তাই নিয়মিত স্ল্যাব পরিবর্তন করার পরও ফুটপাতে ভাঙা স্ল্যাব থেকে যাচ্ছে। আর তাতে দুর্ঘটনা ঘটছে।’

রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘গত ছয় মাসে আমরা ২৫ হাজার স্কয়ার ফুট স্ল্যাব বসিয়েছি। আগামী দুই মাসের মধ্যে নগরীর সব উন্মুক্ত নালায় স্ল্যাব বসানো হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত