Ajker Patrika

বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত ঝোড়ো হাওয়া অব্যাহত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত ঝোড়ো হাওয়া অব্যাহত

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও খুলনার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। দুই দিন ধরে এসব এলাকায় ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে হালকা ও মাঝারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। আবহাওয়া বিরূপ থাকায় সাগরে মাছ ধরা নৌকা নিরাপদ স্থানে নোঙর করে রাখা হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

সাতক্ষীরার উপকূলীয় উপজেলা আশাশুনি ও শ্যামনগরের বেশ কয়েকটি নদ-নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১-২ ফুটের বেশি উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। উপকূলীয় অঞ্চলে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত জারি করা হয়েছে। নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকার ৩৫টি পয়েন্টে প্রায় ৬২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ইতিমধ্যে আশাশুনির গদাইপুরে খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে ৩০০ বিঘা ঘের প্লাবিত হয়েছে।

উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগরের দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম জানান, গতকাল থেকে থেমে থেমে হালকা, মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। নদীতে জোয়ারের সময় বাতাসের তীব্রতা বাড়ছে। ভারী বর্ষণের কারণে ইতিমধ্যে শতাধিক ঘের পানিতে ডুবে গেছে।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুটি বিভাগের আওতায় মোট ৮০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে জরাজীর্ণ ৩৫টি পয়েন্টে প্রায় ৬২ উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে।

সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে ঝোড়ো হাওয়াসহ হালকা ও মাঝারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। ফলে সাতক্ষীরা উপকূলীয় এলাকার নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে ১-২ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

জুলফিকার আলী রিপন আরও জানান, বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। আগামী ২-১ দিন আবহাওয়ার এমন পরিস্থিতি থাকবে। তারপর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে উল্লেখ করে তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৯ দশমিক ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

এদিকে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের বিভিন্ন উপজেলার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বাদ যায়নি বাগেরহাট, মোরেলগঞ্জ ও মোংলা পৌর শহরও। জলমগ্ন হয়ে পড়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। বাড়িতে রান্নাবান্নাও বন্ধ রয়েছে অনেকের। গত রোববার ভোর থেকে গতকাল বিকেল পর্যন্ত অবিরাম বৃষ্টি ও পূর্ণিমার জোয়ারে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

রোববার দুপুরের জোয়ার থেকে সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়। বনের করমজল, দুবলার চরসহ বিভিন্ন এলাকায় দু-তিন ফুট পানি বেড়েছে। এতে বন্য প্রাণীর ক্ষতি হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে এ পানিতে বনের কোনো প্রাণীর ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছেন সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের করমজল বন্য প্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির।

সাগর উত্তাল থাকায় লোকালয়ে ফিরে আসা জেলে নয়ন বলেন, ‘রোববার সকাল থেকেই সাগর উত্তাল ছিল। ধীরে ধীরে আরও উত্তাল হতে থাকে। আমরা রাতেই লোকালয়ে ফিরে আসি।’

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, পূর্ণিমার জোয়ার ও টানা বৃষ্টিতে বেশ কিছু এলাকায় পানি উঠেছে। তবে এতে কোনো মানুষ বা প্রাণীর ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা এলাকায় খোঁজখবর রাখছেন। কারও কোনো বিপদ হলে বা খাদ্যসহায়তা প্রয়োজন হলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

খুলনার ডুমুরিয়ায় ভদ্রা নদীর জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে ভান্ডারপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ নিম্নাঞ্চল। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দুর্ভোগে পড়েছে। দুই দিন ধরে বিদ্যালয়ের মাঠে জোয়ার-ভাটা বইছে।তা ছাড়া খুলনার বটিয়াঘাটাসহ বিভিন্ন উপজেলায় নদীর পানির বাড়ার পাশাপাশি টানা বৃষ্টি চলছে। তাতে বেড়িবাঁধগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত