Ajker Patrika

শ্রমিক নেই, মাঠেই পাকা ধান

ফয়সাল পারভেজ, মাগুরা
আপডেট : ১৯ মে ২০২২, ১৪: ৪৬
শ্রমিক নেই, মাঠেই পাকা ধান

মাগুরা জেলার প্রতিটি এলাকায় মাঠে মাঠে পাকা বোরো ধান। সাম্প্রতিক সময়ে বৃষ্টির পানি জমে আছে খেতে। পানিতে ধান তলিয়ে না গেলেও কৃষকের চিন্তা শ্রমিক নিয়ে। জেলার সব কটি উপজেলায় একই সময় ধান কাটা শুরু হওয়ায় শ্রমিক-সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। চড়া মজুরি হওয়ার কারণে শ্রমিক নিতে পাছেন না অনেক কৃষক। ফলে মাঠে পড়ে আছে পাকা ধান।

মাগুরা সদর উপজেলার আঠারখাদা এলাকার কৃষক শহিদুল বলেন, ‘মাঠে ধান পাকিছে আজ ৫-৭ দিন। চার বিঘা জমিতে এবার ধান হয়েছে। মোটামুটি ২০০ মণ ধান পেতে পারি। কিন্তু এত ধান কাটতে যে শ্রমিক দরকার তা পাচ্ছি না। কয়দিন ঘুরছি কিন্তু শ্রমিকদের মজুরি আগে ৪০০ টাকা থাকলেও এবার দেখি ১০০০ টাকা ছাড়িয়েছে। এত টাকা দিয়ে শ্রমিক নিয়ে কাজ করানো আমার পক্ষে সম্ভব না।’

গত সোমবার সরেজমিনে আঠারখাদা, বেণিপুর, টেঙ্গাখারী থেকে কদমতলা এলাকার মাঠ ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ কৃষকেরা নিজেরাই বোরো ধান ঘরে তুলছেন। কেউ প্রতিবেশীকে ধার করে এনেছেন কেউবা কিছু শ্রমিক হাট থেকে এনেছেন। তবে শ্রমিক মজুরি বেশি হওয়ায় চাহিদার তুলনায় শ্রমিক আনতে পেরেছেন কম। ধান কাটায় যোগ হয়েছে ঘোড়ার গাড়ির। চাহিদাও বেড়েছে। ঘোড়ার গাড়িতে করে কাটা ধান বাড়িতে পৌঁছে যাচ্ছে কৃষকের। কিন্তু কয়েকদিন বৃষ্টিতে বেশকিছু ধান মাঠে ফেলে রেখেছেন কৃষকেরা।

এ বিষয়ে আঠারখাদা এলাকার থেকে ঘোড়ার গাড়িচালক মোজাফ্ফর জানান, বৃষ্টি হওয়াতে ধান কাটায় আগ্রহ কম ছিল কৃষকের। আমরা কয়েকজন ঝিনাইদহ থেকে প্রতি বছর এই সময় মাগুরা আসি কাটা ধান কৃষকের বাড়ি পৌঁছাতে। এর বিনিময়ে আমরা কিছু ধান পাই তাঁদের কাছ থেকে। কিন্তু এবার শ্রমিক সংকট বলে কৃষকের ধান মাঠে। আমাদেরও কাজ কম। এভাবে চললে বাড়ি চলে যেতে হবে খালি হাতে।

মাগুরা সদর উপজেলা ছোট আবালপুর গ্রামের কৃষক মো. বক্কার মিয়া বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে অনেকটা শঙ্কা নিয়েই দ্রুত ধান মাড়াই করতে হচ্ছে। তা ছাড়া এই ধানের ওপর নির্ভর করে সারা বছরের সংসার খরচ চলে। এখন প্রচুর ধান মাঠে। কাটার লোক পাচ্ছি কিন্তু সময় মত নয়। সবার ধানই মাঠে পাকা তাই শ্রমিক সংখ্যায় কম হওয়ায় একটা সংকট চলছে। এতে বেশি মজুরিতে শ্রমিক নিয়ে সবার পক্ষে ধান কাটা সম্ভব নয়।

শ্রমিকদের মধ্যে সুজন, নাসিরুল, তৈয়ব মিয়াসহ অনেকে জানান, তেল কিনতি গিলি তো আর কিছু হয় না। সব জিনিসের দাম বেশি। তাই আমাদের মজুরি আমরা বেশি চাইছি। আমাগের তো বেঁচে থাকতি হবি।

স্থানীয় কৃষকেরা জানান, একজন শ্রমিকের মজুরি প্রায় ১ হাজার টাকা। তারপরেও পাওয়া যাচ্ছে না। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা তো আছেই প্রতিদিন। অন্য দিকে ধানের দাম বাজারে কমে যাচ্ছে। বাজারে ভালো ধানের দামও মণ প্রতি ৯০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা।

যেখানে এক বিঘা জমি চাষ করতে খরচ হয় প্রায় ১৪ হাজার টাকা। আবার শ্রমিকেরও মজুরি বিঘা প্রতি ৮ হাজার টাকার নিচে খরচ হবে না। শ্রমিক সংকট ও বেশি মূল্যের কারণে ধানের দাম কম থাকায় লোকসানের আশঙ্কা করছে মাগুরার বিভিন্ন এলাকার কৃষকেরা। মাগুরা নতুন বাজার ধানের আড়ত থেকে জানা যায়, ধানের দাম মণ প্রতি ৯০০ থেকে ১০০০ হাজার টাকা। এ অবস্থায় উচ্চ শ্রমিক মজুরি বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে কৃষকেদের বলে মনে করছেন পাইকারি বিক্রেতারা।

মাগুরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. হায়াত মাহামুদ বলেন, জেলায় এ বছর বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে। কৃষক বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেই ধান কাটতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। জেলায় এ বছর বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ৩৯ হাজার ৬৩৫ হেক্টর জমিতে। যেখানে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৬ হাজার ১৫০ হেক্টর। ইতিমধ্যে মাত্র ৫০ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। তিনি আজকের পত্রিকাকে আরও বলেন, কৃষকদের আধুনিক যন্ত্র দিয়ে মাঠ থেকে ধান কেটে ও মাড়াই করে ঘরে তোলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আশা করা যায় বৈরী আবহাওয়ায় যদি বড় ধরনের কোনো ক্ষতি না হয়, তাহলে কৃষকেরা ধানের ন্যায্য মূল্য পেতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সেনানিবাস ঘিরে ‘নাশকতার পরিকল্পনা’, বরখাস্ত সৈনিকসহ গ্রেপ্তার ৩

বাংলাদেশ এড়িয়ে সমুদ্রপথে সেভেন সিস্টার্সকে যুক্ত করতে নতুন প্রকল্প ভারতের

থাইল্যান্ডে পর্যটন ভিসা পেতে আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ দিতে হবে

দক্ষিণপন্থীদের কবজায় বাংলাদেশের রাজনীতি: বদরুদ্দীন উমর

বন্দর-করিডর আপনার এখতিয়ারে নেই, বিদেশি উপদেষ্টাকে বিদায় করুন: ইউনূসকে সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত