Ajker Patrika

লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ ‘দোষী’

বান্দরবান প্রতিনিধি
আপডেট : ১৯ মে ২০২২, ১১: ০১
Thumbnail image

বান্দরবানের লামায় পাহাড়ি জমির ফসলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজকে ‘দোষী’ উল্লেখ করে প্রতিবেদন দিয়েছে জেলা পরিষদের গঠিত তদন্ত দল। গতকাল বুধবার বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লার কাছে এই প্রতিবেদন দেওয়া হয়।

তদন্ত দলের আহ্বায়ক এবং পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য মো. মোজাম্মেল হক বাহাদুর গতকাল দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তবে প্রতিবেদন দাখিল করলেও পরবর্তী ব্যবস্থা কী হবে, তা জানে না তদন্ত দল।

এর আগে গত ২৬ এপ্রিল উপজেলার সরই ইউনিয়নে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী তিনটি পাড়াবাসীর চাষাবাদের জমিতে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এ ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত দল গঠন করে জেলা পরিষদ। এতে পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য মো. মোজাম্মেল হক বাহাদুরকে আহ্বায়ক করা হয়। দলের অন্য সদস্যরা হলেন পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য সিংইয়ং ম্রো ও বাশৈচিং মারমা, জেলা পরিষদের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জিয়াউর রহমান এবং ইউএনডিপি-সিএইচটিডিএফের (পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন তহবিল) জেলা ব্যবস্থাপক খুশীরায় ত্রিপুরা। সরেজমিন তদন্ত করে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

তদন্ত দলের আহ্বায়ক মোজাম্মেল হক বলেন, পাড়াবাসী, আশপাশের লোকজনসহ অভিযুক্তদের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এতে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের ‘দোষ’ পাওয়া গেছে। তারা বন্দোবস্তের শর্ত লঙ্ঘন করে ২৫ বছর পর জায়গা দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে পাহাড়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। তদন্তে রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের চুক্তি লঙ্ঘনের প্রমাণ মিলেছে। এসব বিষয়ে প্রতিবেদনে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে।

জানা গেছে, ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরে রাবার চাষের জন্য জমি বন্দোবস্ত (লিজ) নেয় লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ। শর্ত অনুযায়ী, বন্দোবস্ত নেওয়ার ৩ বছরের মধ্যে চাষে যেতে না পারলে শর্ত লঙ্ঘনের দায়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চুক্তি বাতিল হয়ে যাবে।

জেলা পরিষদ গঠিত তদন্ত দল সূত্রে জানা গেছে, বন্দোবস্তি জমিতে এত দিনেও রাবার চাষে যায়নি লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ। ফলে বন্দোবস্ত বাতিল হওয়া জমিতে চাষাবাদের মাধ্যমে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলেন স্থানীয় লোকজন। প্রায় ২৫ বছর পর এবার জায়গা দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালায় রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ। এতে স্থানীয় চাষিরা বাধা দিলে প্রতিষ্ঠানটির লোকজন পাহাড়ে আগুন দেয়। এতে পাহাড়ে থাকা জুমসহ বিভিন্ন ফসল-সবজি নষ্ট হয়ে তিন পাড়ার ৩৬ পরিবার খাদ্যসংকটে পড়ে।

জানা গেছে, লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের লাংকম ম্রোপাড়া, রেংয়ান ম্রোপাড়া ও জয়চন্দ ত্রিপুরাপাড়া এলাকায় লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ অবস্থিত। গত ২৬ এপ্রিল ওই তিনটি পাড়ার বাসিন্দাদের চাষ করা ৩০০ একর জমির ফসলে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।

ওই ঘটনায় প্রথম থেকেই জায়গা দখলের অংশ হিসেবে রাবারবাগানের মালিক কামাল উদ্দিনের মদদে তাঁর লোকজন আগুন দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন ক্ষতিগ্রস্তরা। এ ঘটনায় পাড়াবাসী মামলা করলে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এদিকে খাদ্যসংকটে পড়া ৩৬ পরিবারকে ৮ মে লামা উপজেলা প্রশাসন ত্রাণ দিতে গেলে প্রতিবাদস্বরূপ তা ফিরিয়ে দেয় তারা। পরদিন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জহিরুল ইসলামের নেতৃত্বে জনপ্রতিনিধি ও ইউএনও ক্ষতিগ্রস্ত পাড়ায় গিয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে ত্রাণ নেয় তারা।

এদিকে লামায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে ১০ মে জেলা ৫ সদস্যের তদন্ত দল গঠন করেন বান্দরবান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা। নির্দেশ অনুসারে সরই ইউনিয়নের তিনটি পাড়া পরিদর্শনে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তদন্ত দল। এ সময় জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারকে ত্রাণও দেওয়া হয়। নির্ধারিত ৭ দিনের মধ্যে গতকাল প্রতিবেদন জমা দেয় দলটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত