সাজিদ মোহন
২০২১ সালের ঘটনা। একজন অভিভাবক ফোন করে বললেন, ‘আমার দুই নাতনি তো স্কুলে আপনার ছাত্রী, আপনি যদি স্কুল টাইমের আগে বা পরে ওদের এক ঘণ্টা করে সময় দেন প্রতিদিন…।’
সকালে স্কুলে যাওয়ার তাড়া থাকে। বিকেলে স্কুল ছুটির পর অফুরন্ত অবসর। মাসের ১ তারিখ থেকে দুই ছাত্রীর বাসায় গিয়ে পড়ানো শুরু করলাম। ক্লাস ফোরে পড়ুয়া ছাত্রী ইভা ভদ্রমহিলার (যিনি আমাকে ফোন করেছিলেন) ছেলের মেয়ে আর ক্লাস ফাইভে পড়ুয়া ছাত্রী জেরিন ভদ্রমহিলার মেয়ের মেয়ে, অর্থাৎ দুজনই নাতনি।
যেহেতু আমি পূর্বপরিচিত স্কুলের শিক্ষক, বাসার সবার সঙ্গে মোটামুটি আগে থেকেই পরিচয়। পড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে ইভার মা এসে প্রায় সময় মেয়ের পড়াশোনার খোঁজখবর নেন। কিন্তু জেরিনের মাকে কখনো আসতে দেখি না। স্বাভাবিকভাবে বাবার বাড়িতে বউদের তুলনায় মেয়েরাই স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করে। এই ঘরে দেখি সম্পূর্ণ উল্টো। জেরিনের মাকে কখনোই সামনে আসতে না দেখে একধরনের খটকা লাগল মনে। তা ছাড়া, জেরিনের পড়াশোনার ব্যাপারেও কিছু আলোচনার প্রয়োজন।
মনে মনে ভাবলাম, হয়তো কোনো সমস্যার কারণে বাবার বাড়িতে এসে আশ্রয় নিয়েছেন, এ জন্য নিজেকে গুটিয়ে রাখছেন অথবা ধর্মীয় বিধিনিষেধ মানতে গিয়ে সামনে আসছেন না, কথা বলছেন না। তাই বলে এক মাস! এক মাসে একবারও মেয়ের পড়াশোনার খোঁজখবর নেবেন না? নিজে পড়াশোনা না জানলে বা অসচেতন হলে ভিন্ন কথা। কিন্তু পরিবারটি সে রকম নয়।
ঘরের সবার সঙ্গে টুকটাক কথাবার্তা হয়, মাঝে মাঝে ডাক্তার, মিস্ত্রি আসে, মেহমান আসে। তাদের সঙ্গেও কথাবার্তা হয়। অথচ এক মাস ঘরের ভেতরে থাকা একটা মানুষের কোনো শব্দও শুনলাম না। অদ্ভুত ব্যাপার।
জেরিনের ছোট একটা বোন আছে, নাম জুলি। বয়স ৪ ছুঁই ছুঁই। পড়ানোর সময় মাঝে মাঝে বোনের পাশে এসে বসে। দু-এক মিনিট থাকে, আবার চলে যায়। জুলির জন্য আমি চকলেট আনি মাঝে মাঝে, রঙিন ছবি আঁকা গল্পের বইও দিয়েছি একটা।
একদিন বিকেলে পড়াচ্ছি, এমন সময় উচ্চ স্বরে কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম। প্রায় এক মিনিট ধরে কাঁদছে জুলি। সম্ভবত আশপাশে কেউ নেই। কেউ এগিয়ে না আসায় দৌড়ে গেল জেরিন। জুলির কান্নার ভেতর হঠাৎ যেন এক ধাঁধার উত্তরের কাছাকাছি চলে এলাম আমি।
ছোটরা, এমনকি বড়রাও যখন কাঁদে অন্য অনেক শব্দের সঙ্গে কান্নার ভেতর ‘মা’ শব্দটা থাকে। কোথাও আঘাত পেলে, কেউ বকা দিলে, কিছুর জন্য বায়না ধরলে কিংবা ভয় পেলে ছোটরা কেঁদে কেঁদে অনেক কথা বলে, তাদের কান্নায় ঘুরেফিরে ‘মা’ শব্দটাই পাওয়া যায় বেশি।
অথচ জুলির কান্নায় আমি একবারও ‘মা’ শব্দটি শুনিনি। পড়াতে এসে এর আগেও দু-একবার জুলিকে কাঁদতে শুনেছি। ‘মা’ শব্দটা কখনো শুনেছি বলে মনে হয় না।
কেঁদেকেটে একপর্যায়ে শান্ত হলো জুলি। জেরিন ফিরে এল পড়ার টেবিলে। মনে যে প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছিল এতক্ষণ, সেটা কীভাবে করব? একটু ঘুরিয়ে জেরিনকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘জুলিকে কার কাছে রেখে এসেছ?’
-নানুর কাছে।
-নানুর কাছে কেন? তোমার মা কোথায়?
জেরিন কোনো উত্তর দিল না। চুপচাপ বইয়ের দিকে তাকিয়ে রইল। কিছুক্ষণের মধ্যে প্রথমে এক ফোঁটা, পরে কয়েক
ফোঁটা পানি টুপটুপ চোখ থেকে ঝরে পড়ল বইয়ের পাতায়।
সম্ভবত দরজার আশপাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন জেরিনের নানু। টিউশনের বেতন দিতে এসে তিনি বললেন, ‘জুলির বয়স যখন ৪ মাস, দুরারোগ্য রোগে তার মা
মারা যায়।’
চমকে উঠলাম আমি। মা কী জিনিস, বোঝার আগেই মা চলে গেলে, কান্নার শব্দের ভেতর ‘মা’ শব্দ খুঁজে বেড়ানোর কোনো মানে হয় না।
লেখক: শিশুসাহিত্যিক
২০২১ সালের ঘটনা। একজন অভিভাবক ফোন করে বললেন, ‘আমার দুই নাতনি তো স্কুলে আপনার ছাত্রী, আপনি যদি স্কুল টাইমের আগে বা পরে ওদের এক ঘণ্টা করে সময় দেন প্রতিদিন…।’
সকালে স্কুলে যাওয়ার তাড়া থাকে। বিকেলে স্কুল ছুটির পর অফুরন্ত অবসর। মাসের ১ তারিখ থেকে দুই ছাত্রীর বাসায় গিয়ে পড়ানো শুরু করলাম। ক্লাস ফোরে পড়ুয়া ছাত্রী ইভা ভদ্রমহিলার (যিনি আমাকে ফোন করেছিলেন) ছেলের মেয়ে আর ক্লাস ফাইভে পড়ুয়া ছাত্রী জেরিন ভদ্রমহিলার মেয়ের মেয়ে, অর্থাৎ দুজনই নাতনি।
যেহেতু আমি পূর্বপরিচিত স্কুলের শিক্ষক, বাসার সবার সঙ্গে মোটামুটি আগে থেকেই পরিচয়। পড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে ইভার মা এসে প্রায় সময় মেয়ের পড়াশোনার খোঁজখবর নেন। কিন্তু জেরিনের মাকে কখনো আসতে দেখি না। স্বাভাবিকভাবে বাবার বাড়িতে বউদের তুলনায় মেয়েরাই স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করে। এই ঘরে দেখি সম্পূর্ণ উল্টো। জেরিনের মাকে কখনোই সামনে আসতে না দেখে একধরনের খটকা লাগল মনে। তা ছাড়া, জেরিনের পড়াশোনার ব্যাপারেও কিছু আলোচনার প্রয়োজন।
মনে মনে ভাবলাম, হয়তো কোনো সমস্যার কারণে বাবার বাড়িতে এসে আশ্রয় নিয়েছেন, এ জন্য নিজেকে গুটিয়ে রাখছেন অথবা ধর্মীয় বিধিনিষেধ মানতে গিয়ে সামনে আসছেন না, কথা বলছেন না। তাই বলে এক মাস! এক মাসে একবারও মেয়ের পড়াশোনার খোঁজখবর নেবেন না? নিজে পড়াশোনা না জানলে বা অসচেতন হলে ভিন্ন কথা। কিন্তু পরিবারটি সে রকম নয়।
ঘরের সবার সঙ্গে টুকটাক কথাবার্তা হয়, মাঝে মাঝে ডাক্তার, মিস্ত্রি আসে, মেহমান আসে। তাদের সঙ্গেও কথাবার্তা হয়। অথচ এক মাস ঘরের ভেতরে থাকা একটা মানুষের কোনো শব্দও শুনলাম না। অদ্ভুত ব্যাপার।
জেরিনের ছোট একটা বোন আছে, নাম জুলি। বয়স ৪ ছুঁই ছুঁই। পড়ানোর সময় মাঝে মাঝে বোনের পাশে এসে বসে। দু-এক মিনিট থাকে, আবার চলে যায়। জুলির জন্য আমি চকলেট আনি মাঝে মাঝে, রঙিন ছবি আঁকা গল্পের বইও দিয়েছি একটা।
একদিন বিকেলে পড়াচ্ছি, এমন সময় উচ্চ স্বরে কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম। প্রায় এক মিনিট ধরে কাঁদছে জুলি। সম্ভবত আশপাশে কেউ নেই। কেউ এগিয়ে না আসায় দৌড়ে গেল জেরিন। জুলির কান্নার ভেতর হঠাৎ যেন এক ধাঁধার উত্তরের কাছাকাছি চলে এলাম আমি।
ছোটরা, এমনকি বড়রাও যখন কাঁদে অন্য অনেক শব্দের সঙ্গে কান্নার ভেতর ‘মা’ শব্দটা থাকে। কোথাও আঘাত পেলে, কেউ বকা দিলে, কিছুর জন্য বায়না ধরলে কিংবা ভয় পেলে ছোটরা কেঁদে কেঁদে অনেক কথা বলে, তাদের কান্নায় ঘুরেফিরে ‘মা’ শব্দটাই পাওয়া যায় বেশি।
অথচ জুলির কান্নায় আমি একবারও ‘মা’ শব্দটি শুনিনি। পড়াতে এসে এর আগেও দু-একবার জুলিকে কাঁদতে শুনেছি। ‘মা’ শব্দটা কখনো শুনেছি বলে মনে হয় না।
কেঁদেকেটে একপর্যায়ে শান্ত হলো জুলি। জেরিন ফিরে এল পড়ার টেবিলে। মনে যে প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছিল এতক্ষণ, সেটা কীভাবে করব? একটু ঘুরিয়ে জেরিনকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘জুলিকে কার কাছে রেখে এসেছ?’
-নানুর কাছে।
-নানুর কাছে কেন? তোমার মা কোথায়?
জেরিন কোনো উত্তর দিল না। চুপচাপ বইয়ের দিকে তাকিয়ে রইল। কিছুক্ষণের মধ্যে প্রথমে এক ফোঁটা, পরে কয়েক
ফোঁটা পানি টুপটুপ চোখ থেকে ঝরে পড়ল বইয়ের পাতায়।
সম্ভবত দরজার আশপাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন জেরিনের নানু। টিউশনের বেতন দিতে এসে তিনি বললেন, ‘জুলির বয়স যখন ৪ মাস, দুরারোগ্য রোগে তার মা
মারা যায়।’
চমকে উঠলাম আমি। মা কী জিনিস, বোঝার আগেই মা চলে গেলে, কান্নার শব্দের ভেতর ‘মা’ শব্দ খুঁজে বেড়ানোর কোনো মানে হয় না।
লেখক: শিশুসাহিত্যিক
বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ দিন আগেগাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪দেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২০ নভেম্বর ২০২৪