Ajker Patrika

পরিবর্তনের জন্য লড়ছেন প্রতিবাদী মুনসুর ফকির

সাইফুল আলম তুহিন, ত্রিশাল
আপডেট : ৩০ নভেম্বর ২০২১, ১৫: ৩৩
Thumbnail image

ত্রিশালের আলোচিত সেই ‘ভিক্ষুক চেয়ারম্যান’ প্রার্থীকে ভোট দিয়ে অনিয়ম, দুর্নীতি ও নির্বাচনে অর্থের প্রভাবের বিরুদ্ধে নীরব প্রতিবাদ জানিয়েছেন ৩৭৭ জন ভোটার। তিনি হলেন দুই নম্বর বৈলর ইউনিয়নের বড় পুকুরপাড়ের বাসিন্দা মো. আবুল মুনসুর ফকির। থাকনে মহাসড়কের পাশে খালের ওপর মাচা তৈরি করে। মানুষের দানে চলে তাঁর জীবন। এ অবস্থায় ভেবেছেন জনপ্রতিনিধি হয়ে মানুষের সেবা করবেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রত্যেক চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রার্থী বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করেছে নির্বাচনকে সামনে রেখে। সেখানে অসহায় এই প্রার্থী কোনো টাকা খরচ না করেই পেয়েছেন ৩৭৭ ভোট। অংশগ্রহণকারী আরও কয়েকজন প্রার্থী তাঁর চেয়ে কম ভোট পেয়েছেন। এক হাতে পোস্টারের ব্যাগ আরেক হাতে আঠার বালতি নিয়ে এলাকার বিভিন্ন স্থানে একাই নিজের পোস্টার সেঁটেছেন। এ কাজে আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছেন স্থানীয় কিছু বাসিন্দার। অন্যের সহযোগিতায় চলায় নিজের নামের শেষে উপাধি লাগিয়েছেন ‘ফকির’।

ভোর থেকে রাত পর্যন্ত পাড়া মহল্লা, হাট-বাজারে একাই ভোট চেয়ে বেড়িয়েছেন আবুল মুনসুর ফকির। ষাটোর্ধ্ব এই ব্যক্তি স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন। প্রতীক ছিল চশমা। এটাকে পাগলামি ভেবে নিজের সন্তান ও আত্মীয়রাও ছিলেন দূরে। তবে এটিকে স্থানীয় অনেক বাসিন্দা নির্বাচনে টাকার ছড়াছড়ি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে নীরব প্রতিবাদ হিসেবে দেখেছেন বলে জানান।

ভরাডোবা গ্রামের বাসিন্দা মো. সুমন মিয়া বলেন, ‘আবুল মুনসুর ফকিরের ইচ্ছা তিনি জনগণের সেবা করবেন। বিষয়গুলো বহুদিন থেকেই তিনি মানুষের কাছে বলাবলি করছিলেন। আমরা তাঁর এই আগ্রহ দেখে তাঁকে উৎসাহ দিই। চশমা প্রতীক পেয়ে উনিও মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। তিনি যে ভোট পেয়েছেন, এটাকে একটা প্রতিবাদ হিসেবে দেখছি আমরা।’

একই ইউনিয়নের বড় পুকুর পাড়ের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, তাঁরা টাকা তুলে পোস্টার করে দিয়েছেন। সবাইকে বুট, মুড়ি টাকা তুলে খাইয়েছেন। তিনি একটি কার্ডের জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েছিলেন। তাঁকে কার্ড করে না দেওয়ায় তখনই উনি নিয়ত করেছিলেন, জনপ্রতিনিধি হবেন। তাঁর এই চেষ্টা ও সাহসকে সাধুবাদ জানান তাঁরা।

বৈলর ভরাডোবা গ্রামের মো. শাহিন মিয়া বলেন, ‘আমরা এর আগে অনেক লোককে ভোট দিয়েছি। এলাকার তেমন কোনো কাজ হয়নি। এবার ফকিরকে ভোট দিয়েছি, এটা আমাদের মনের একটা তৃপ্তি।’

তানভীর নামে একজন বলেন, ‘শোনা যায়, দলীয় প্রতীক পেতে টাকাও লেনদেন হয়। নির্বাচনে তো টাকার ছড়াছড়ি। নির্বাচনকে ব্যবসায় পরিণত করা কথিত সমাজসেবকদের কারণে যুবসমাজ ধ্বংসপ্রায়। সেখানে আবুল মুনসুর ফকিরের দৃঢ়তা, উদ্যম দেখে আমরা আশান্বিত হই।’

এ বিষয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. আবুল মুনসুর ফকির বলেন, ‘আমার মতো অসহায় মানুষের ডাকে সাড়া দিয়ে যাঁরা ভোট দিয়েছেন, তাঁদের কথা আমি আজীবন মনে রাখব। আমি আমার এই চেষ্টা সামনেও চালিয়ে যাব। জনগণকে কিছু দিতে বা করতে না পারলেও অবৈধভাবে টাকা উপার্জন করা যে পাপ, তা বলে যাব সব সময়। ভবিষ্যতে কখনো জনপ্রতিনিধি হতে পারলে কোনো গরিবই আর সরকারি সুযোগ-সুবিধার বাইরে থাকবে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত