Ajker Patrika

‘দুঃখের কথা কারে কমু’

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
‘দুঃখের কথা কারে কমু’

‘নুন আনতে তেল থাকে না। ভিজিএফের মোটা চাইল পাই। ওই চাইল রানলে ভাত গোন্ধ করে। কপাল মন্দ। ওয়াই (তাই) শাক-ভর্তা দিয়া খাই। মেয়ের কোচিংয়ের বেতন চার মাস বাকি। পোলাপানের আবদার থিকা বাঁচবার নিগা রাইতে ফিরি। দুঃখের কথা কারে কমু।’

কথাগুলো বলছিলেন টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার হাবলা ইউনিয়নের সোনালিয়া এলাকার গ্রাম পুলিশ রফিকুল ইসলাম। এমন দুর্দশা শুধু রফিকুলের নয়, টাঙ্গাইলের ১২ উপজেলার ১১১ দফাদার ও ৯১৯ মহল্লাদারেরও একই অবস্থা। কারও কারও অবস্থা আরও বেশি খারাপ। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে চাকরি জাতীয়করণের দাবি জানিয়েছেন জেলার গ্রাম পুলিশের সদস্যরা।

জানা গেছে, গ্রাম পুলিশদের মধ্যে দফাদারেরা প্রতি মাসে বেতন পান ৭ হাজার টাকা। আর মহল্লাদারেররা পান ৬ হাজার ৫০০ টাকা। এই টাকার অর্ধেক দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় আর বাকি অর্ধেক পরিশোধ করা হয় ইউনিয়ন পরিষদের আয় থেকে। এই স্বল্প আয় দিয়ে সংসার চালাতে হয় তাঁদের।

গ্রামীণ পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা গ্রাম পুলিশ সবার কাছেই পরিচিত একটি বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ বিভিন্ন সামাজিক সচেতনতা ও সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে গ্রাম পুলিশ বিশেষ অবদান রাখলেও কষ্টে ভরা জীবন তাঁদের। স্বল্প বেতনে চলে এদের জীবন সংসার। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তাঁরা। সংসারের ব্যয় মেটাতে অনেকের দিন কাটছে অর্ধাহারে। কেউ কেউ মেটাতে পারছেন না ছেলেমেয়ের শিক্ষা ব্যয়। অনেকেই বন্ধ করে দিয়েছেন সন্তানের পড়ালেখা।

কালিহাতী উপজেলার সুনিল রবিদাস বলেন, ‘রাইত নাই দিন নাই ডাক আইলেই যাওন নাগে। বেতন জুটে মাসে সাড়ে ৬ আজার। তাও অর্ধেক পাই না নিয়মিত। দুঃখের কপালে কবে সুখ আইবো জানি না।’

সংসার চালাতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন দেলদুয়ারের রফিক। তিনি বলেন, ‘ঊর্ধ্বগতির বাজারে সংসার চালানো দায়। আলু ৩৫ টাকা। শাকও কিনন নাগে ৪০ টাকা কেজি। ঋণ শোধামু কী দিয়া?’ এ ছাড়া ময়না রবিদাস, সুধির রবিদাস, বিষ্ণু, আমীর আলীসহ অনেকেই এমন অভিযোগ জানান।

বাংলাদেশ গ্রাম পুলিশ বাহিনী কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আলী জানান, ‘আমাদের গ্রাম পুলিশদের কষ্ট অন্তহীন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া ৫০ ভাগ বেতন পাই নিয়মিত। বাকি অর্ধেক অনিয়মিত। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সময়ে আমাদের জাতীয়করণ করে দুর্ভোগ লাঘবে সরকার এগিয়ে আসবে এটা আমাদের প্রত্যাশা।’

সংগঠনের সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর মর্যাদা চাই। জাতীয়করণ চাই। আমাদের যৌক্তিক দাবি আদায়ের জন্য স্মারক লিপি দিয়েছি। যদি আমাদের দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন না করা হয় তবে আমরা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করব।’

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি বলেন, দফাদার মহল্লাদারদের দাবি যৌক্তিক। তাঁদের দাবিগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত