Ajker Patrika

হস্তান্তরের আগেই ফেটে গেল দেয়াল

আনোয়ার হোসেন শামীম, গাইবান্ধা 
হস্তান্তরের আগেই ফেটে গেল দেয়াল

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ভূমিহীনদের জন্য নির্মিত আশ্রয়ণের বিভিন্ন ঘর হস্তান্তরের আগেই দেয়াল ফেটে গেছে। প্রায় ছয় মাস আগে বানানো এসব ঘরে মেরামতের কাজও করা হয়েছে। প্রতিটি ঘরের জন্য প্রায় লাখ টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হলেও নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ উপকারভোগীদের।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আশ্রয়ণ প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ে গোবিন্দগঞ্জে ৩৮০টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রতিটি ঘরের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ২ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। প্রথম পর্যায়ে এই ব্যয় ছিল ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।

প্রকল্পের আওতায় উপজেলার কামদিয়া ইউনিয়নের বইলগ্রাম বস্তাহার এলাকায় ৫৪টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। স্থানীয় সরকারি খাস পুকুরের পাড়ে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করা ভূমিহীন পরিবারগুলোর জন্য উপজেলা প্রশাসনের বাস্তবায়নে এ ঘর নির্মিত হয়েছে।

সম্প্রতি ওই এলাকায় গিয়ে প্রকল্পের বিভিন্ন ঘরে ফাটল দেখা গেছে। ঘরগুলো যাঁরা বরাদ্দ পেতে যাচ্ছেন তাঁরা দাবি করেন, নির্মাণকাজে যে ইট, খোয়া, বালু, সিমেন্ট, কাঠসহ অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত নিম্নমানের।

সুবিধাভোগীরা আরও অভিযোগ করেন, ঘর নির্মাণে ভিত্তি খনন ও মাটি ভরাটের কাজে তাঁদের শ্রম দিতে হয়েছে। সেই সঙ্গে তাঁদের নির্মাণশ্রমিকদের খাবার সরবরাহ করতে বাধ্য করা হয়। এতে সুবিধাভোগীদের কায়িক পরিশ্রম ছাড়াও ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

সুবিধাভোগী নাজনীন বেগম ও আব্দুর রহিম জানান, সরকারি খাসজমিতে তাঁদের মাটির ঘর ছিল। সেগুলো ভেঙে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই ঘর হস্তান্তরের আগেই ফেটে গেছে। এই ‘পাকা ঘরের চেয়ে মাটির ঘরই বরং ভালো ছিল’ বলে মন্তব্য করেন তাঁরা।

আরেক ভূমিহীন নাজমা বেগম বলেন, ‘এই ঘরে বসবাস করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন নড়বড়ে ঘর দেবে জানলে নিতাম না। আমরা আগে মাটির ঘরেই ভালো ছিলাম।’

উপজেলার কামারদহ ইউনিয়নের কন্দবপুরে নির্মাণ করা হয়েছে ৩২টি ঘর। সেখানেও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শ্রমিক বলেন, ‘ভালো-মন্দ বলতে গেলে আর কাজে নেবে না। আমাদের যে সামগ্রী দেওয়া হয়, তা দিয়েই কাজ করি। এখানে আমাদের করার কী আছে?’

ঘর ফেটে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘এই প্রকল্পের সভাপতি ইউএনও। আপনারা তাঁর সঙ্গে কথা বলেন।’

যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফ হোসেন বলেন, ‘ফাটলের বিষয়টি আমি অস্বীকার করছি না। তবে যেহেতু ঘরগুলো হস্তান্তর করা হয়নি, সেহেতু এগুলো প্রয়োজনে মেরামত করে দেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, মুজিববর্ষ উপলক্ষে  গোবিন্দগঞ্জে এ পর্যন্ত আশ্রয়ণের ৮৫০টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে উপজেলাটিকে শতভাগ ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত