জাহীদ রেজা নূর

টের পাচ্ছি, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ভবিষ্যৎ নাগরিকদের বারোটা বাজাবে। এগারোটা যে বেজে গেছে, তা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিশ্ব র্যাঙ্কিং থেকেই বোঝা যায়। জ্ঞান সৃষ্টির কোনো উদ্যোগ আপাতত খুব একটা চোখে পড়ছে না। খুব কমসংখ্যক শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠন-পাঠনকে গুরুত্বের সঙ্গে নেন।
বাকিরা শিক্ষকতা করেন, বিনিময়ে বেতন পান। বেতন পাওয়ার জন্য শিক্ষাদান-প্রক্রিয়া বুঝিয়ে দেয় যে জীবনযাপনের চাহিদা মেটানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এর পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষকের যে কাজ, সেই জ্ঞান সৃষ্টি ও গবেষণা কতটা এগিয়ে নেওয়া হয়, সেই প্রশ্নের যথাযথ উত্তর নেই।
সম্ভবত পরিশ্রম বাদ দিয়ে চ্যাট-জিপিটি ধরনের প্রযুক্তির সাহায্যে আমরা আমাদের পড়াশোনা করব ভবিষ্যতে। একটা সমস্যা দেওয়া হবে মোবাইলে থাকা প্রযুক্তি মহাশয়কে। তিনিই তাঁর তথ্যভান্ডার থেকে তৈরি করে দেবেন একটি সুলিখিত বক্তব্য। করে দেবেন সুখকর গবেষণা। ব্যস! কাজ শেষ।
শিক্ষকদের নিয়ে কথা হয়েছে বিস্তর। তাঁদের গবেষণার মান নিয়েও নিরাশাসূচক লেখালেখি দেখেছি অনেক। যে গবেষণা নতুন ভাবনার দ্বার খুলে দেবে, যে ভাবনা নিয়ে যোগাযোগমাধ্যমে, সমাজে-রাষ্ট্রে উঠবে আলোড়ন, সেই ভাবনার জন্ম কি হচ্ছে আমাদের শিক্ষালয়গুলোয়? আমাদের শিক্ষকেরা টক শোতে যতটা সক্রিয়, নিজ ক্লাসে ততটা আন্তরিক কি না, সে রকম প্রশ্নও তো ওঠে মাঝে মাঝে। শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ধরে রাখার মতো শিক্ষকের সংখ্যা তো কমে গেছে। একজন মানুষ কীভাবে একটি প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠতে পারেন, তার উদাহরণ আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই তো আছে। একটু ইতিহাস ঘেঁটে দেখলেই সে রকম শিক্ষকদের দেখা পাওয়া যাবে। সেই কাহিনিগুলো গর্বের। তাঁদের সমকক্ষ শিক্ষক হয়ে ওঠার তাগিদটাও আজকাল নেই।
কিন্তু কেন এমনটা ঘটছে, সে কথা খুব ভাবা হয়েছে বলে মনে হয় না। ভাবা হলেও তাকে কতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, তারও জবাব পাওয়া যাবে না।
ভাবার কোনো কারণ নেই, শিক্ষকদের কথা বলার সময় সাংবাদিকদের দায়িত্বের কথা ভুলে যাচ্ছি। সংবাদপত্রের বড় কাজ হলো সত্য প্রকাশ করা। অনিয়মের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। জনগণকে অনিয়মের ব্যাপারে অবহিত করা। আমাদের দেশের সংবাদপত্রগুলো তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব কতটা পালন করছে, সেটা দেশের জনগণ দেখতে পাচ্ছে। ফলে অবক্ষয়টা শুধু শিক্ষালয়ে সীমাবদ্ধ, এ রকম ভাবার কোনো কারণ নেই। সাংবাদিকদের ব্যাপারে খাম-সংস্কৃতির যে কথা শোনা যায়, তা নিয়ে লজ্জা পেতে পারি আমরা, কিন্তু সত্যিই এর প্রতিকার কি করতে পারি?
সংবাদ প্রকাশ করার জন্য অথবা প্রকাশ না করার জন্য শিকারের কাছ থেকে টাকা আদায়ের যে তথ্যগুলো ভেসে বেড়ায়, তা নিশ্চয়ই শুধু গুজব নয়। ঢাকার বাইরে থেকে সংবাদপত্রের একটি পরিচয়পত্র পাওয়ার জন্য যাঁরা তৎপর হন, তাঁদের মধ্যে এমন অনেকেই থাকেন, যাঁরা শুধু পরিচয়পত্র সম্বল করেই টিকে থাকতে পারেন। বেতন-ভাতার দরকার পড়ে না। কোন উপায়ে তাঁদের সংসার চলে, তা নিয়ে কি কোনো অনুসন্ধিৎসু সংবাদ তৈরি করা যায় না?
কাক কাকের মাংস খায় না বলে এই সংবাদগুলো সৃষ্টি হয় না। একশ্রেণির সাংবাদিকের এই লোভের কথা এখন সমাজে প্রতিষ্ঠিত, ফলে যারা তাঁদের দিয়ে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করতে চায়, তারা সেটা পারে। তখন সত্যিকার তথ্য সংবাদমাধ্যমে আসে না। সত্য প্রকাশের জন্য অঙ্গীকারের তখন কোনো মানে থাকে না। শিক্ষকদের নিয়ে কথা বলব বলে সাংবাদিকদের এই চরিত্রহীনতার কথাও বলে নিলাম।প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে পড়ছে বললে যেন বোঝা যায়, এই সারিতে সাংবাদিকেরাও আছেন।
সর্বত্র এই অনৈতিক অবস্থানের একটা বড় কারণও কিন্তু শিক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতা। ছোট থেকে বড় হওয়ার শিক্ষাটাই হাওয়া হয়ে গেছে। তাঁরা যে শিক্ষা নিয়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করেছেন, তার মধ্যকার ফাঁকি আর দুর্বলতা চোখে পড়ার মতো। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে খোদ রাজধানীতে আখের গুছিয়ে নেওয়া সাংবাদিকের সংখ্যাও কি কম?
দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে পড়লে তার বিপজ্জনক ফল শুরুতে পাওয়া যায় না। পাওয়া যায় কিছুদিন পর। একটি প্রতিষ্ঠান ডোবে জাহাজের মতো। টাইটানিক জাহাজটি যেভাবে একটু একটু করে ডুবেছে, ঠিক তেমনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় যে শিক্ষা নিয়ে মগজ পূর্ণ করে একজন শিক্ষার্থী, তার সঙ্গে কি আদৌ ভালো মানুষ হয়ে ওঠার বীজ লুকিয়ে আছে?
কথাগুলো বলতে হলো নিতান্তই কষ্ট থেকে। শিক্ষার বীজ বপন করা হয় পরিবারে, সেই বীজকে লালন ও প্রতিপালন করে শিক্ষালয়, আর চারদিকের পরিবেশ, পারিপার্শ্বিকতা সেই বীজকে গাছ হয়ে উঠতে সাহায্য করে। শুরুতেই পরিবার আর শিক্ষালয়ের ভূমিকা রয়েছে। এ সময় স্লেটের মতো পরিষ্কার থাকে শিশুর মগজ। সেই মগজে যা ঢোকানো হয়, সেটাই সে সারা জীবন লালন করে। আমরা কি সেই শিক্ষার সঙ্গে আমাদের সন্তানদের পরিচয় করাচ্ছি?
একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীর জীবনের রুটিনে আর যা-ই থাকুক, মানবতার কোনো স্থান নেই। পরিবারের সাংস্কৃতিক আবহের মধ্যে প্রতিযোগিতাকেই মুখ্য করে তোলা হচ্ছে। অথচ যে দেশগুলো শিক্ষা নিয়ে গবেষণা করে, তারা শুরুতেই জোর দেয় শিশুর ওপর। শিশু যেন সামাজিক আচরণে নিজেকে দয়ালু, মানবিক করে তোলে, সে শিক্ষাই মূল শিক্ষা।
আমি ঢাকা শহরে থাকি। মোহাম্মদপুরের যে এলাকায় পাঁচটি ভালো স্কুল কাছাকাছি অবস্থান করছে, সেই এলাকা থেকেই কাজে বেরিয়ে পড়তে হয় আমাকে। সকালে স্কুলের সময় দুই মিনিটের পথ পাড়ি দিতে কখনো কখনো লাগে আধা ঘণ্টা, কখনো চল্লিশ মিনিট। গাড়িতে করে শিক্ষার্থীরা আসে, তাদের নামিয়ে দেওয়া হয় স্কুলের সামনে, তারপর কোনো গাড়ি চলে যায়, কোনোটা রাস্তার বাঁ পাশে দাঁড়িয়ে সংকুচিত করে দেয় রাস্তা।
অথচ পুরো পরিস্থিতি পাল্টে যেত যদি স্থানীয় শিক্ষার্থীদের দিয়ে স্কুলগুলো চালানো হতো। তাহলে বহুদূর থেকে গাড়িতে করে আসতে হতো না। আবার যদি স্কুলবাস বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হতো, তাহলেও কিন্তু রাস্তায় এই অনাকাঙ্ক্ষিত জ্যামের সৃষ্টি হতো না। আমরা আমাদের শিশুদের সে রকমভাবে তৈরি করতে পারিনি। একেবারে ছোটবেলা থেকে গাড়িতে অভ্যস্ত করে তুলছি। যাদের গাড়ি নেই, তাদের সঙ্গে জীবনের শুরুতেই একটা দূরত্ব সৃষ্টি করে দিচ্ছি।
এ ব্যাপারটা আমাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। কোনো এক লেখায় পড়েছিলাম, জাপানে নির্দিষ্ট এলাকার স্কুলেই ভর্তি হতে হবে। অন্য এলাকায় ভালো স্কুল আছে, মা-বাবার পকেটে অনেক টাকা আছে, তাহলেই সে স্কুলে ভর্তি হওয়া যাবে না। ভর্তি হতে হবে নিজের এলাকার স্কুলে।শিখতে হবে দাঁত ব্রাশ করা, টয়লেট ব্যবহার করা, ব্যাগের বই গুছিয়ে নেওয়া, রান্না করা, মেহমান এলে তাঁর সঙ্গে সঠিক আচরণ করা। পরিচ্ছন্নতা শেখানো হবে। যেখানে-সেখানে কাগজপত্র ও থুতু ফেলা যাবে না।
আর শিক্ষক? শিক্ষককে তো হতে হবে শিক্ষার্থীর প্রকৃত বন্ধু। তিনি এমন মনকাড়াভাবে বিষয়বস্তুর সঙ্গে শিক্ষার্থীর পরিচয় ঘটাবেন, যেন এর চেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় আর কিছুই নেই! প্রকৃতির সঙ্গে বন্ধুত্ব তৈরি করার কাজটিও তো শুরু হয় ওই শৈশব থেকে। আর দেশপ্রেম? সেটা কি গাছে গাছে ফলে? টুপ করে পেড়ে নিয়ে খাওয়া যায়? দেশপ্রেমের জন্ম হয় সততার সঙ্গে নিজের কাজ করলে, দৃষ্টান্তমূলক কাজের সঙ্গে শিশুকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হলে।
কথাগুলো বলতে হলো বেহাল উচ্চশিক্ষার কথা বলতে গিয়েই। নানা ধরনের প্রলোভনের কাছে উচ্চশিক্ষা বিড়ম্বিত হচ্ছে। পড়াশোনার সঙ্গে পঠিত বিষয়টি আত্মস্থ করার কোনো সংযোগ নেই। সামনে ঝুলছে নম্বরের মুলো। সেটাই কাঙ্ক্ষিত শুধু।
তবে এ কথা বলার সময় একবারও ভুলি না, আমাদের শিক্ষায় বাজেটের বরাদ্দের কথা। শিক্ষার জন্য যে বাজেট, তার সঙ্গে তুলনা করুন অন্য অনেক অগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের। দেখতে পাবেন, সবচেয়ে প্রয়োজনীয় শিক্ষা খাতটি কতটা অবহেলিত। একই স্তরের একজন সরকারি আমলা, সামরিক অফিসার এবং একজন শিক্ষকের সুযোগ-সুবিধাগুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যাবে, শিক্ষাকে মর্যাদা দেওয়ার কোনো চেষ্টা নেই।
যে শিক্ষক তাঁর সমপর্যায়ের অন্য চাকুরেদের থেকে সব দিক থেকে পিছিয়ে থাকেন, তাঁকে কেন সম্মান করবে মানুষ? যখন মান-মর্যাদার সঙ্গে অর্থের একটা ‘অর্থবোধক’ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, তখন অসৎ পথে আয় করা ধনী লোকটিকে শিক্ষকের তুলনায় অনেক বড় বলে মনে হতে পারে।
এই শিক্ষক তাই শিক্ষার্থীকে ‘মানুষ’ করার কথা ভাববেন না। তিনি শিক্ষার্থীর মনে জিজ্ঞাসার জন্ম দেবেন না। ক্লাসঘরটাকে পরিণত করবেন নীরস এক পাঠকক্ষে। নম্বরপ্রাপ্তির জন্য যন্ত্রের মতো ক্লাসে যাবেন আর আসবেন। শিক্ষার্থীরা এবং যৌক্তিকভাবে ভাবতে শিখবে না বলে সমাজের কোনো বিষয়ই তাদের আলোড়িত করবে না।
শুরুতেই বলেছিলাম, এগারোটা বেজে গেছে শিক্ষার। আসলে এই লেখা তৈরি হতে হতেই তা সাড়ে এগারোটায় পৌঁছে গেছে। এ কথা মনে রেখে আমরা বলতে পারি, কেন ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা লোপাট হলে কারও গায়ে লাগে না, কেন কেউ দুর্নীতির বিরুদ্ধে উচ্চ রব তোলে না, কেন রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তির মাধ্যমে সম্পদশালী হতে চায় মানুষ, কেন মানুষকে আর মানুষ বলে ভাবতে চায় না তথাকথিত শিক্ষিত মানুষ।
বারোটা বাজার সংকেত শোনার জন্য অপেক্ষা করার মতো ভয়াবহ আর কী হতে পারে?
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

টের পাচ্ছি, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ভবিষ্যৎ নাগরিকদের বারোটা বাজাবে। এগারোটা যে বেজে গেছে, তা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিশ্ব র্যাঙ্কিং থেকেই বোঝা যায়। জ্ঞান সৃষ্টির কোনো উদ্যোগ আপাতত খুব একটা চোখে পড়ছে না। খুব কমসংখ্যক শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠন-পাঠনকে গুরুত্বের সঙ্গে নেন।
বাকিরা শিক্ষকতা করেন, বিনিময়ে বেতন পান। বেতন পাওয়ার জন্য শিক্ষাদান-প্রক্রিয়া বুঝিয়ে দেয় যে জীবনযাপনের চাহিদা মেটানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এর পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষকের যে কাজ, সেই জ্ঞান সৃষ্টি ও গবেষণা কতটা এগিয়ে নেওয়া হয়, সেই প্রশ্নের যথাযথ উত্তর নেই।
সম্ভবত পরিশ্রম বাদ দিয়ে চ্যাট-জিপিটি ধরনের প্রযুক্তির সাহায্যে আমরা আমাদের পড়াশোনা করব ভবিষ্যতে। একটা সমস্যা দেওয়া হবে মোবাইলে থাকা প্রযুক্তি মহাশয়কে। তিনিই তাঁর তথ্যভান্ডার থেকে তৈরি করে দেবেন একটি সুলিখিত বক্তব্য। করে দেবেন সুখকর গবেষণা। ব্যস! কাজ শেষ।
শিক্ষকদের নিয়ে কথা হয়েছে বিস্তর। তাঁদের গবেষণার মান নিয়েও নিরাশাসূচক লেখালেখি দেখেছি অনেক। যে গবেষণা নতুন ভাবনার দ্বার খুলে দেবে, যে ভাবনা নিয়ে যোগাযোগমাধ্যমে, সমাজে-রাষ্ট্রে উঠবে আলোড়ন, সেই ভাবনার জন্ম কি হচ্ছে আমাদের শিক্ষালয়গুলোয়? আমাদের শিক্ষকেরা টক শোতে যতটা সক্রিয়, নিজ ক্লাসে ততটা আন্তরিক কি না, সে রকম প্রশ্নও তো ওঠে মাঝে মাঝে। শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ধরে রাখার মতো শিক্ষকের সংখ্যা তো কমে গেছে। একজন মানুষ কীভাবে একটি প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠতে পারেন, তার উদাহরণ আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই তো আছে। একটু ইতিহাস ঘেঁটে দেখলেই সে রকম শিক্ষকদের দেখা পাওয়া যাবে। সেই কাহিনিগুলো গর্বের। তাঁদের সমকক্ষ শিক্ষক হয়ে ওঠার তাগিদটাও আজকাল নেই।
কিন্তু কেন এমনটা ঘটছে, সে কথা খুব ভাবা হয়েছে বলে মনে হয় না। ভাবা হলেও তাকে কতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, তারও জবাব পাওয়া যাবে না।
ভাবার কোনো কারণ নেই, শিক্ষকদের কথা বলার সময় সাংবাদিকদের দায়িত্বের কথা ভুলে যাচ্ছি। সংবাদপত্রের বড় কাজ হলো সত্য প্রকাশ করা। অনিয়মের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। জনগণকে অনিয়মের ব্যাপারে অবহিত করা। আমাদের দেশের সংবাদপত্রগুলো তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব কতটা পালন করছে, সেটা দেশের জনগণ দেখতে পাচ্ছে। ফলে অবক্ষয়টা শুধু শিক্ষালয়ে সীমাবদ্ধ, এ রকম ভাবার কোনো কারণ নেই। সাংবাদিকদের ব্যাপারে খাম-সংস্কৃতির যে কথা শোনা যায়, তা নিয়ে লজ্জা পেতে পারি আমরা, কিন্তু সত্যিই এর প্রতিকার কি করতে পারি?
সংবাদ প্রকাশ করার জন্য অথবা প্রকাশ না করার জন্য শিকারের কাছ থেকে টাকা আদায়ের যে তথ্যগুলো ভেসে বেড়ায়, তা নিশ্চয়ই শুধু গুজব নয়। ঢাকার বাইরে থেকে সংবাদপত্রের একটি পরিচয়পত্র পাওয়ার জন্য যাঁরা তৎপর হন, তাঁদের মধ্যে এমন অনেকেই থাকেন, যাঁরা শুধু পরিচয়পত্র সম্বল করেই টিকে থাকতে পারেন। বেতন-ভাতার দরকার পড়ে না। কোন উপায়ে তাঁদের সংসার চলে, তা নিয়ে কি কোনো অনুসন্ধিৎসু সংবাদ তৈরি করা যায় না?
কাক কাকের মাংস খায় না বলে এই সংবাদগুলো সৃষ্টি হয় না। একশ্রেণির সাংবাদিকের এই লোভের কথা এখন সমাজে প্রতিষ্ঠিত, ফলে যারা তাঁদের দিয়ে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করতে চায়, তারা সেটা পারে। তখন সত্যিকার তথ্য সংবাদমাধ্যমে আসে না। সত্য প্রকাশের জন্য অঙ্গীকারের তখন কোনো মানে থাকে না। শিক্ষকদের নিয়ে কথা বলব বলে সাংবাদিকদের এই চরিত্রহীনতার কথাও বলে নিলাম।প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে পড়ছে বললে যেন বোঝা যায়, এই সারিতে সাংবাদিকেরাও আছেন।
সর্বত্র এই অনৈতিক অবস্থানের একটা বড় কারণও কিন্তু শিক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতা। ছোট থেকে বড় হওয়ার শিক্ষাটাই হাওয়া হয়ে গেছে। তাঁরা যে শিক্ষা নিয়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করেছেন, তার মধ্যকার ফাঁকি আর দুর্বলতা চোখে পড়ার মতো। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে খোদ রাজধানীতে আখের গুছিয়ে নেওয়া সাংবাদিকের সংখ্যাও কি কম?
দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে পড়লে তার বিপজ্জনক ফল শুরুতে পাওয়া যায় না। পাওয়া যায় কিছুদিন পর। একটি প্রতিষ্ঠান ডোবে জাহাজের মতো। টাইটানিক জাহাজটি যেভাবে একটু একটু করে ডুবেছে, ঠিক তেমনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় যে শিক্ষা নিয়ে মগজ পূর্ণ করে একজন শিক্ষার্থী, তার সঙ্গে কি আদৌ ভালো মানুষ হয়ে ওঠার বীজ লুকিয়ে আছে?
কথাগুলো বলতে হলো নিতান্তই কষ্ট থেকে। শিক্ষার বীজ বপন করা হয় পরিবারে, সেই বীজকে লালন ও প্রতিপালন করে শিক্ষালয়, আর চারদিকের পরিবেশ, পারিপার্শ্বিকতা সেই বীজকে গাছ হয়ে উঠতে সাহায্য করে। শুরুতেই পরিবার আর শিক্ষালয়ের ভূমিকা রয়েছে। এ সময় স্লেটের মতো পরিষ্কার থাকে শিশুর মগজ। সেই মগজে যা ঢোকানো হয়, সেটাই সে সারা জীবন লালন করে। আমরা কি সেই শিক্ষার সঙ্গে আমাদের সন্তানদের পরিচয় করাচ্ছি?
একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীর জীবনের রুটিনে আর যা-ই থাকুক, মানবতার কোনো স্থান নেই। পরিবারের সাংস্কৃতিক আবহের মধ্যে প্রতিযোগিতাকেই মুখ্য করে তোলা হচ্ছে। অথচ যে দেশগুলো শিক্ষা নিয়ে গবেষণা করে, তারা শুরুতেই জোর দেয় শিশুর ওপর। শিশু যেন সামাজিক আচরণে নিজেকে দয়ালু, মানবিক করে তোলে, সে শিক্ষাই মূল শিক্ষা।
আমি ঢাকা শহরে থাকি। মোহাম্মদপুরের যে এলাকায় পাঁচটি ভালো স্কুল কাছাকাছি অবস্থান করছে, সেই এলাকা থেকেই কাজে বেরিয়ে পড়তে হয় আমাকে। সকালে স্কুলের সময় দুই মিনিটের পথ পাড়ি দিতে কখনো কখনো লাগে আধা ঘণ্টা, কখনো চল্লিশ মিনিট। গাড়িতে করে শিক্ষার্থীরা আসে, তাদের নামিয়ে দেওয়া হয় স্কুলের সামনে, তারপর কোনো গাড়ি চলে যায়, কোনোটা রাস্তার বাঁ পাশে দাঁড়িয়ে সংকুচিত করে দেয় রাস্তা।
অথচ পুরো পরিস্থিতি পাল্টে যেত যদি স্থানীয় শিক্ষার্থীদের দিয়ে স্কুলগুলো চালানো হতো। তাহলে বহুদূর থেকে গাড়িতে করে আসতে হতো না। আবার যদি স্কুলবাস বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হতো, তাহলেও কিন্তু রাস্তায় এই অনাকাঙ্ক্ষিত জ্যামের সৃষ্টি হতো না। আমরা আমাদের শিশুদের সে রকমভাবে তৈরি করতে পারিনি। একেবারে ছোটবেলা থেকে গাড়িতে অভ্যস্ত করে তুলছি। যাদের গাড়ি নেই, তাদের সঙ্গে জীবনের শুরুতেই একটা দূরত্ব সৃষ্টি করে দিচ্ছি।
এ ব্যাপারটা আমাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। কোনো এক লেখায় পড়েছিলাম, জাপানে নির্দিষ্ট এলাকার স্কুলেই ভর্তি হতে হবে। অন্য এলাকায় ভালো স্কুল আছে, মা-বাবার পকেটে অনেক টাকা আছে, তাহলেই সে স্কুলে ভর্তি হওয়া যাবে না। ভর্তি হতে হবে নিজের এলাকার স্কুলে।শিখতে হবে দাঁত ব্রাশ করা, টয়লেট ব্যবহার করা, ব্যাগের বই গুছিয়ে নেওয়া, রান্না করা, মেহমান এলে তাঁর সঙ্গে সঠিক আচরণ করা। পরিচ্ছন্নতা শেখানো হবে। যেখানে-সেখানে কাগজপত্র ও থুতু ফেলা যাবে না।
আর শিক্ষক? শিক্ষককে তো হতে হবে শিক্ষার্থীর প্রকৃত বন্ধু। তিনি এমন মনকাড়াভাবে বিষয়বস্তুর সঙ্গে শিক্ষার্থীর পরিচয় ঘটাবেন, যেন এর চেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় আর কিছুই নেই! প্রকৃতির সঙ্গে বন্ধুত্ব তৈরি করার কাজটিও তো শুরু হয় ওই শৈশব থেকে। আর দেশপ্রেম? সেটা কি গাছে গাছে ফলে? টুপ করে পেড়ে নিয়ে খাওয়া যায়? দেশপ্রেমের জন্ম হয় সততার সঙ্গে নিজের কাজ করলে, দৃষ্টান্তমূলক কাজের সঙ্গে শিশুকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হলে।
কথাগুলো বলতে হলো বেহাল উচ্চশিক্ষার কথা বলতে গিয়েই। নানা ধরনের প্রলোভনের কাছে উচ্চশিক্ষা বিড়ম্বিত হচ্ছে। পড়াশোনার সঙ্গে পঠিত বিষয়টি আত্মস্থ করার কোনো সংযোগ নেই। সামনে ঝুলছে নম্বরের মুলো। সেটাই কাঙ্ক্ষিত শুধু।
তবে এ কথা বলার সময় একবারও ভুলি না, আমাদের শিক্ষায় বাজেটের বরাদ্দের কথা। শিক্ষার জন্য যে বাজেট, তার সঙ্গে তুলনা করুন অন্য অনেক অগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের। দেখতে পাবেন, সবচেয়ে প্রয়োজনীয় শিক্ষা খাতটি কতটা অবহেলিত। একই স্তরের একজন সরকারি আমলা, সামরিক অফিসার এবং একজন শিক্ষকের সুযোগ-সুবিধাগুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যাবে, শিক্ষাকে মর্যাদা দেওয়ার কোনো চেষ্টা নেই।
যে শিক্ষক তাঁর সমপর্যায়ের অন্য চাকুরেদের থেকে সব দিক থেকে পিছিয়ে থাকেন, তাঁকে কেন সম্মান করবে মানুষ? যখন মান-মর্যাদার সঙ্গে অর্থের একটা ‘অর্থবোধক’ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, তখন অসৎ পথে আয় করা ধনী লোকটিকে শিক্ষকের তুলনায় অনেক বড় বলে মনে হতে পারে।
এই শিক্ষক তাই শিক্ষার্থীকে ‘মানুষ’ করার কথা ভাববেন না। তিনি শিক্ষার্থীর মনে জিজ্ঞাসার জন্ম দেবেন না। ক্লাসঘরটাকে পরিণত করবেন নীরস এক পাঠকক্ষে। নম্বরপ্রাপ্তির জন্য যন্ত্রের মতো ক্লাসে যাবেন আর আসবেন। শিক্ষার্থীরা এবং যৌক্তিকভাবে ভাবতে শিখবে না বলে সমাজের কোনো বিষয়ই তাদের আলোড়িত করবে না।
শুরুতেই বলেছিলাম, এগারোটা বেজে গেছে শিক্ষার। আসলে এই লেখা তৈরি হতে হতেই তা সাড়ে এগারোটায় পৌঁছে গেছে। এ কথা মনে রেখে আমরা বলতে পারি, কেন ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা লোপাট হলে কারও গায়ে লাগে না, কেন কেউ দুর্নীতির বিরুদ্ধে উচ্চ রব তোলে না, কেন রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তির মাধ্যমে সম্পদশালী হতে চায় মানুষ, কেন মানুষকে আর মানুষ বলে ভাবতে চায় না তথাকথিত শিক্ষিত মানুষ।
বারোটা বাজার সংকেত শোনার জন্য অপেক্ষা করার মতো ভয়াবহ আর কী হতে পারে?
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
জাহীদ রেজা নূর

টের পাচ্ছি, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ভবিষ্যৎ নাগরিকদের বারোটা বাজাবে। এগারোটা যে বেজে গেছে, তা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিশ্ব র্যাঙ্কিং থেকেই বোঝা যায়। জ্ঞান সৃষ্টির কোনো উদ্যোগ আপাতত খুব একটা চোখে পড়ছে না। খুব কমসংখ্যক শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠন-পাঠনকে গুরুত্বের সঙ্গে নেন।
বাকিরা শিক্ষকতা করেন, বিনিময়ে বেতন পান। বেতন পাওয়ার জন্য শিক্ষাদান-প্রক্রিয়া বুঝিয়ে দেয় যে জীবনযাপনের চাহিদা মেটানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এর পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষকের যে কাজ, সেই জ্ঞান সৃষ্টি ও গবেষণা কতটা এগিয়ে নেওয়া হয়, সেই প্রশ্নের যথাযথ উত্তর নেই।
সম্ভবত পরিশ্রম বাদ দিয়ে চ্যাট-জিপিটি ধরনের প্রযুক্তির সাহায্যে আমরা আমাদের পড়াশোনা করব ভবিষ্যতে। একটা সমস্যা দেওয়া হবে মোবাইলে থাকা প্রযুক্তি মহাশয়কে। তিনিই তাঁর তথ্যভান্ডার থেকে তৈরি করে দেবেন একটি সুলিখিত বক্তব্য। করে দেবেন সুখকর গবেষণা। ব্যস! কাজ শেষ।
শিক্ষকদের নিয়ে কথা হয়েছে বিস্তর। তাঁদের গবেষণার মান নিয়েও নিরাশাসূচক লেখালেখি দেখেছি অনেক। যে গবেষণা নতুন ভাবনার দ্বার খুলে দেবে, যে ভাবনা নিয়ে যোগাযোগমাধ্যমে, সমাজে-রাষ্ট্রে উঠবে আলোড়ন, সেই ভাবনার জন্ম কি হচ্ছে আমাদের শিক্ষালয়গুলোয়? আমাদের শিক্ষকেরা টক শোতে যতটা সক্রিয়, নিজ ক্লাসে ততটা আন্তরিক কি না, সে রকম প্রশ্নও তো ওঠে মাঝে মাঝে। শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ধরে রাখার মতো শিক্ষকের সংখ্যা তো কমে গেছে। একজন মানুষ কীভাবে একটি প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠতে পারেন, তার উদাহরণ আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই তো আছে। একটু ইতিহাস ঘেঁটে দেখলেই সে রকম শিক্ষকদের দেখা পাওয়া যাবে। সেই কাহিনিগুলো গর্বের। তাঁদের সমকক্ষ শিক্ষক হয়ে ওঠার তাগিদটাও আজকাল নেই।
কিন্তু কেন এমনটা ঘটছে, সে কথা খুব ভাবা হয়েছে বলে মনে হয় না। ভাবা হলেও তাকে কতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, তারও জবাব পাওয়া যাবে না।
ভাবার কোনো কারণ নেই, শিক্ষকদের কথা বলার সময় সাংবাদিকদের দায়িত্বের কথা ভুলে যাচ্ছি। সংবাদপত্রের বড় কাজ হলো সত্য প্রকাশ করা। অনিয়মের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। জনগণকে অনিয়মের ব্যাপারে অবহিত করা। আমাদের দেশের সংবাদপত্রগুলো তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব কতটা পালন করছে, সেটা দেশের জনগণ দেখতে পাচ্ছে। ফলে অবক্ষয়টা শুধু শিক্ষালয়ে সীমাবদ্ধ, এ রকম ভাবার কোনো কারণ নেই। সাংবাদিকদের ব্যাপারে খাম-সংস্কৃতির যে কথা শোনা যায়, তা নিয়ে লজ্জা পেতে পারি আমরা, কিন্তু সত্যিই এর প্রতিকার কি করতে পারি?
সংবাদ প্রকাশ করার জন্য অথবা প্রকাশ না করার জন্য শিকারের কাছ থেকে টাকা আদায়ের যে তথ্যগুলো ভেসে বেড়ায়, তা নিশ্চয়ই শুধু গুজব নয়। ঢাকার বাইরে থেকে সংবাদপত্রের একটি পরিচয়পত্র পাওয়ার জন্য যাঁরা তৎপর হন, তাঁদের মধ্যে এমন অনেকেই থাকেন, যাঁরা শুধু পরিচয়পত্র সম্বল করেই টিকে থাকতে পারেন। বেতন-ভাতার দরকার পড়ে না। কোন উপায়ে তাঁদের সংসার চলে, তা নিয়ে কি কোনো অনুসন্ধিৎসু সংবাদ তৈরি করা যায় না?
কাক কাকের মাংস খায় না বলে এই সংবাদগুলো সৃষ্টি হয় না। একশ্রেণির সাংবাদিকের এই লোভের কথা এখন সমাজে প্রতিষ্ঠিত, ফলে যারা তাঁদের দিয়ে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করতে চায়, তারা সেটা পারে। তখন সত্যিকার তথ্য সংবাদমাধ্যমে আসে না। সত্য প্রকাশের জন্য অঙ্গীকারের তখন কোনো মানে থাকে না। শিক্ষকদের নিয়ে কথা বলব বলে সাংবাদিকদের এই চরিত্রহীনতার কথাও বলে নিলাম।প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে পড়ছে বললে যেন বোঝা যায়, এই সারিতে সাংবাদিকেরাও আছেন।
সর্বত্র এই অনৈতিক অবস্থানের একটা বড় কারণও কিন্তু শিক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতা। ছোট থেকে বড় হওয়ার শিক্ষাটাই হাওয়া হয়ে গেছে। তাঁরা যে শিক্ষা নিয়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করেছেন, তার মধ্যকার ফাঁকি আর দুর্বলতা চোখে পড়ার মতো। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে খোদ রাজধানীতে আখের গুছিয়ে নেওয়া সাংবাদিকের সংখ্যাও কি কম?
দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে পড়লে তার বিপজ্জনক ফল শুরুতে পাওয়া যায় না। পাওয়া যায় কিছুদিন পর। একটি প্রতিষ্ঠান ডোবে জাহাজের মতো। টাইটানিক জাহাজটি যেভাবে একটু একটু করে ডুবেছে, ঠিক তেমনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় যে শিক্ষা নিয়ে মগজ পূর্ণ করে একজন শিক্ষার্থী, তার সঙ্গে কি আদৌ ভালো মানুষ হয়ে ওঠার বীজ লুকিয়ে আছে?
কথাগুলো বলতে হলো নিতান্তই কষ্ট থেকে। শিক্ষার বীজ বপন করা হয় পরিবারে, সেই বীজকে লালন ও প্রতিপালন করে শিক্ষালয়, আর চারদিকের পরিবেশ, পারিপার্শ্বিকতা সেই বীজকে গাছ হয়ে উঠতে সাহায্য করে। শুরুতেই পরিবার আর শিক্ষালয়ের ভূমিকা রয়েছে। এ সময় স্লেটের মতো পরিষ্কার থাকে শিশুর মগজ। সেই মগজে যা ঢোকানো হয়, সেটাই সে সারা জীবন লালন করে। আমরা কি সেই শিক্ষার সঙ্গে আমাদের সন্তানদের পরিচয় করাচ্ছি?
একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীর জীবনের রুটিনে আর যা-ই থাকুক, মানবতার কোনো স্থান নেই। পরিবারের সাংস্কৃতিক আবহের মধ্যে প্রতিযোগিতাকেই মুখ্য করে তোলা হচ্ছে। অথচ যে দেশগুলো শিক্ষা নিয়ে গবেষণা করে, তারা শুরুতেই জোর দেয় শিশুর ওপর। শিশু যেন সামাজিক আচরণে নিজেকে দয়ালু, মানবিক করে তোলে, সে শিক্ষাই মূল শিক্ষা।
আমি ঢাকা শহরে থাকি। মোহাম্মদপুরের যে এলাকায় পাঁচটি ভালো স্কুল কাছাকাছি অবস্থান করছে, সেই এলাকা থেকেই কাজে বেরিয়ে পড়তে হয় আমাকে। সকালে স্কুলের সময় দুই মিনিটের পথ পাড়ি দিতে কখনো কখনো লাগে আধা ঘণ্টা, কখনো চল্লিশ মিনিট। গাড়িতে করে শিক্ষার্থীরা আসে, তাদের নামিয়ে দেওয়া হয় স্কুলের সামনে, তারপর কোনো গাড়ি চলে যায়, কোনোটা রাস্তার বাঁ পাশে দাঁড়িয়ে সংকুচিত করে দেয় রাস্তা।
অথচ পুরো পরিস্থিতি পাল্টে যেত যদি স্থানীয় শিক্ষার্থীদের দিয়ে স্কুলগুলো চালানো হতো। তাহলে বহুদূর থেকে গাড়িতে করে আসতে হতো না। আবার যদি স্কুলবাস বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হতো, তাহলেও কিন্তু রাস্তায় এই অনাকাঙ্ক্ষিত জ্যামের সৃষ্টি হতো না। আমরা আমাদের শিশুদের সে রকমভাবে তৈরি করতে পারিনি। একেবারে ছোটবেলা থেকে গাড়িতে অভ্যস্ত করে তুলছি। যাদের গাড়ি নেই, তাদের সঙ্গে জীবনের শুরুতেই একটা দূরত্ব সৃষ্টি করে দিচ্ছি।
এ ব্যাপারটা আমাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। কোনো এক লেখায় পড়েছিলাম, জাপানে নির্দিষ্ট এলাকার স্কুলেই ভর্তি হতে হবে। অন্য এলাকায় ভালো স্কুল আছে, মা-বাবার পকেটে অনেক টাকা আছে, তাহলেই সে স্কুলে ভর্তি হওয়া যাবে না। ভর্তি হতে হবে নিজের এলাকার স্কুলে।শিখতে হবে দাঁত ব্রাশ করা, টয়লেট ব্যবহার করা, ব্যাগের বই গুছিয়ে নেওয়া, রান্না করা, মেহমান এলে তাঁর সঙ্গে সঠিক আচরণ করা। পরিচ্ছন্নতা শেখানো হবে। যেখানে-সেখানে কাগজপত্র ও থুতু ফেলা যাবে না।
আর শিক্ষক? শিক্ষককে তো হতে হবে শিক্ষার্থীর প্রকৃত বন্ধু। তিনি এমন মনকাড়াভাবে বিষয়বস্তুর সঙ্গে শিক্ষার্থীর পরিচয় ঘটাবেন, যেন এর চেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় আর কিছুই নেই! প্রকৃতির সঙ্গে বন্ধুত্ব তৈরি করার কাজটিও তো শুরু হয় ওই শৈশব থেকে। আর দেশপ্রেম? সেটা কি গাছে গাছে ফলে? টুপ করে পেড়ে নিয়ে খাওয়া যায়? দেশপ্রেমের জন্ম হয় সততার সঙ্গে নিজের কাজ করলে, দৃষ্টান্তমূলক কাজের সঙ্গে শিশুকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হলে।
কথাগুলো বলতে হলো বেহাল উচ্চশিক্ষার কথা বলতে গিয়েই। নানা ধরনের প্রলোভনের কাছে উচ্চশিক্ষা বিড়ম্বিত হচ্ছে। পড়াশোনার সঙ্গে পঠিত বিষয়টি আত্মস্থ করার কোনো সংযোগ নেই। সামনে ঝুলছে নম্বরের মুলো। সেটাই কাঙ্ক্ষিত শুধু।
তবে এ কথা বলার সময় একবারও ভুলি না, আমাদের শিক্ষায় বাজেটের বরাদ্দের কথা। শিক্ষার জন্য যে বাজেট, তার সঙ্গে তুলনা করুন অন্য অনেক অগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের। দেখতে পাবেন, সবচেয়ে প্রয়োজনীয় শিক্ষা খাতটি কতটা অবহেলিত। একই স্তরের একজন সরকারি আমলা, সামরিক অফিসার এবং একজন শিক্ষকের সুযোগ-সুবিধাগুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যাবে, শিক্ষাকে মর্যাদা দেওয়ার কোনো চেষ্টা নেই।
যে শিক্ষক তাঁর সমপর্যায়ের অন্য চাকুরেদের থেকে সব দিক থেকে পিছিয়ে থাকেন, তাঁকে কেন সম্মান করবে মানুষ? যখন মান-মর্যাদার সঙ্গে অর্থের একটা ‘অর্থবোধক’ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, তখন অসৎ পথে আয় করা ধনী লোকটিকে শিক্ষকের তুলনায় অনেক বড় বলে মনে হতে পারে।
এই শিক্ষক তাই শিক্ষার্থীকে ‘মানুষ’ করার কথা ভাববেন না। তিনি শিক্ষার্থীর মনে জিজ্ঞাসার জন্ম দেবেন না। ক্লাসঘরটাকে পরিণত করবেন নীরস এক পাঠকক্ষে। নম্বরপ্রাপ্তির জন্য যন্ত্রের মতো ক্লাসে যাবেন আর আসবেন। শিক্ষার্থীরা এবং যৌক্তিকভাবে ভাবতে শিখবে না বলে সমাজের কোনো বিষয়ই তাদের আলোড়িত করবে না।
শুরুতেই বলেছিলাম, এগারোটা বেজে গেছে শিক্ষার। আসলে এই লেখা তৈরি হতে হতেই তা সাড়ে এগারোটায় পৌঁছে গেছে। এ কথা মনে রেখে আমরা বলতে পারি, কেন ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা লোপাট হলে কারও গায়ে লাগে না, কেন কেউ দুর্নীতির বিরুদ্ধে উচ্চ রব তোলে না, কেন রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তির মাধ্যমে সম্পদশালী হতে চায় মানুষ, কেন মানুষকে আর মানুষ বলে ভাবতে চায় না তথাকথিত শিক্ষিত মানুষ।
বারোটা বাজার সংকেত শোনার জন্য অপেক্ষা করার মতো ভয়াবহ আর কী হতে পারে?
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

টের পাচ্ছি, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ভবিষ্যৎ নাগরিকদের বারোটা বাজাবে। এগারোটা যে বেজে গেছে, তা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিশ্ব র্যাঙ্কিং থেকেই বোঝা যায়। জ্ঞান সৃষ্টির কোনো উদ্যোগ আপাতত খুব একটা চোখে পড়ছে না। খুব কমসংখ্যক শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠন-পাঠনকে গুরুত্বের সঙ্গে নেন।
বাকিরা শিক্ষকতা করেন, বিনিময়ে বেতন পান। বেতন পাওয়ার জন্য শিক্ষাদান-প্রক্রিয়া বুঝিয়ে দেয় যে জীবনযাপনের চাহিদা মেটানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এর পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষকের যে কাজ, সেই জ্ঞান সৃষ্টি ও গবেষণা কতটা এগিয়ে নেওয়া হয়, সেই প্রশ্নের যথাযথ উত্তর নেই।
সম্ভবত পরিশ্রম বাদ দিয়ে চ্যাট-জিপিটি ধরনের প্রযুক্তির সাহায্যে আমরা আমাদের পড়াশোনা করব ভবিষ্যতে। একটা সমস্যা দেওয়া হবে মোবাইলে থাকা প্রযুক্তি মহাশয়কে। তিনিই তাঁর তথ্যভান্ডার থেকে তৈরি করে দেবেন একটি সুলিখিত বক্তব্য। করে দেবেন সুখকর গবেষণা। ব্যস! কাজ শেষ।
শিক্ষকদের নিয়ে কথা হয়েছে বিস্তর। তাঁদের গবেষণার মান নিয়েও নিরাশাসূচক লেখালেখি দেখেছি অনেক। যে গবেষণা নতুন ভাবনার দ্বার খুলে দেবে, যে ভাবনা নিয়ে যোগাযোগমাধ্যমে, সমাজে-রাষ্ট্রে উঠবে আলোড়ন, সেই ভাবনার জন্ম কি হচ্ছে আমাদের শিক্ষালয়গুলোয়? আমাদের শিক্ষকেরা টক শোতে যতটা সক্রিয়, নিজ ক্লাসে ততটা আন্তরিক কি না, সে রকম প্রশ্নও তো ওঠে মাঝে মাঝে। শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ধরে রাখার মতো শিক্ষকের সংখ্যা তো কমে গেছে। একজন মানুষ কীভাবে একটি প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠতে পারেন, তার উদাহরণ আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই তো আছে। একটু ইতিহাস ঘেঁটে দেখলেই সে রকম শিক্ষকদের দেখা পাওয়া যাবে। সেই কাহিনিগুলো গর্বের। তাঁদের সমকক্ষ শিক্ষক হয়ে ওঠার তাগিদটাও আজকাল নেই।
কিন্তু কেন এমনটা ঘটছে, সে কথা খুব ভাবা হয়েছে বলে মনে হয় না। ভাবা হলেও তাকে কতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, তারও জবাব পাওয়া যাবে না।
ভাবার কোনো কারণ নেই, শিক্ষকদের কথা বলার সময় সাংবাদিকদের দায়িত্বের কথা ভুলে যাচ্ছি। সংবাদপত্রের বড় কাজ হলো সত্য প্রকাশ করা। অনিয়মের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। জনগণকে অনিয়মের ব্যাপারে অবহিত করা। আমাদের দেশের সংবাদপত্রগুলো তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব কতটা পালন করছে, সেটা দেশের জনগণ দেখতে পাচ্ছে। ফলে অবক্ষয়টা শুধু শিক্ষালয়ে সীমাবদ্ধ, এ রকম ভাবার কোনো কারণ নেই। সাংবাদিকদের ব্যাপারে খাম-সংস্কৃতির যে কথা শোনা যায়, তা নিয়ে লজ্জা পেতে পারি আমরা, কিন্তু সত্যিই এর প্রতিকার কি করতে পারি?
সংবাদ প্রকাশ করার জন্য অথবা প্রকাশ না করার জন্য শিকারের কাছ থেকে টাকা আদায়ের যে তথ্যগুলো ভেসে বেড়ায়, তা নিশ্চয়ই শুধু গুজব নয়। ঢাকার বাইরে থেকে সংবাদপত্রের একটি পরিচয়পত্র পাওয়ার জন্য যাঁরা তৎপর হন, তাঁদের মধ্যে এমন অনেকেই থাকেন, যাঁরা শুধু পরিচয়পত্র সম্বল করেই টিকে থাকতে পারেন। বেতন-ভাতার দরকার পড়ে না। কোন উপায়ে তাঁদের সংসার চলে, তা নিয়ে কি কোনো অনুসন্ধিৎসু সংবাদ তৈরি করা যায় না?
কাক কাকের মাংস খায় না বলে এই সংবাদগুলো সৃষ্টি হয় না। একশ্রেণির সাংবাদিকের এই লোভের কথা এখন সমাজে প্রতিষ্ঠিত, ফলে যারা তাঁদের দিয়ে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করতে চায়, তারা সেটা পারে। তখন সত্যিকার তথ্য সংবাদমাধ্যমে আসে না। সত্য প্রকাশের জন্য অঙ্গীকারের তখন কোনো মানে থাকে না। শিক্ষকদের নিয়ে কথা বলব বলে সাংবাদিকদের এই চরিত্রহীনতার কথাও বলে নিলাম।প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে পড়ছে বললে যেন বোঝা যায়, এই সারিতে সাংবাদিকেরাও আছেন।
সর্বত্র এই অনৈতিক অবস্থানের একটা বড় কারণও কিন্তু শিক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতা। ছোট থেকে বড় হওয়ার শিক্ষাটাই হাওয়া হয়ে গেছে। তাঁরা যে শিক্ষা নিয়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করেছেন, তার মধ্যকার ফাঁকি আর দুর্বলতা চোখে পড়ার মতো। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে খোদ রাজধানীতে আখের গুছিয়ে নেওয়া সাংবাদিকের সংখ্যাও কি কম?
দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে পড়লে তার বিপজ্জনক ফল শুরুতে পাওয়া যায় না। পাওয়া যায় কিছুদিন পর। একটি প্রতিষ্ঠান ডোবে জাহাজের মতো। টাইটানিক জাহাজটি যেভাবে একটু একটু করে ডুবেছে, ঠিক তেমনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় যে শিক্ষা নিয়ে মগজ পূর্ণ করে একজন শিক্ষার্থী, তার সঙ্গে কি আদৌ ভালো মানুষ হয়ে ওঠার বীজ লুকিয়ে আছে?
কথাগুলো বলতে হলো নিতান্তই কষ্ট থেকে। শিক্ষার বীজ বপন করা হয় পরিবারে, সেই বীজকে লালন ও প্রতিপালন করে শিক্ষালয়, আর চারদিকের পরিবেশ, পারিপার্শ্বিকতা সেই বীজকে গাছ হয়ে উঠতে সাহায্য করে। শুরুতেই পরিবার আর শিক্ষালয়ের ভূমিকা রয়েছে। এ সময় স্লেটের মতো পরিষ্কার থাকে শিশুর মগজ। সেই মগজে যা ঢোকানো হয়, সেটাই সে সারা জীবন লালন করে। আমরা কি সেই শিক্ষার সঙ্গে আমাদের সন্তানদের পরিচয় করাচ্ছি?
একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীর জীবনের রুটিনে আর যা-ই থাকুক, মানবতার কোনো স্থান নেই। পরিবারের সাংস্কৃতিক আবহের মধ্যে প্রতিযোগিতাকেই মুখ্য করে তোলা হচ্ছে। অথচ যে দেশগুলো শিক্ষা নিয়ে গবেষণা করে, তারা শুরুতেই জোর দেয় শিশুর ওপর। শিশু যেন সামাজিক আচরণে নিজেকে দয়ালু, মানবিক করে তোলে, সে শিক্ষাই মূল শিক্ষা।
আমি ঢাকা শহরে থাকি। মোহাম্মদপুরের যে এলাকায় পাঁচটি ভালো স্কুল কাছাকাছি অবস্থান করছে, সেই এলাকা থেকেই কাজে বেরিয়ে পড়তে হয় আমাকে। সকালে স্কুলের সময় দুই মিনিটের পথ পাড়ি দিতে কখনো কখনো লাগে আধা ঘণ্টা, কখনো চল্লিশ মিনিট। গাড়িতে করে শিক্ষার্থীরা আসে, তাদের নামিয়ে দেওয়া হয় স্কুলের সামনে, তারপর কোনো গাড়ি চলে যায়, কোনোটা রাস্তার বাঁ পাশে দাঁড়িয়ে সংকুচিত করে দেয় রাস্তা।
অথচ পুরো পরিস্থিতি পাল্টে যেত যদি স্থানীয় শিক্ষার্থীদের দিয়ে স্কুলগুলো চালানো হতো। তাহলে বহুদূর থেকে গাড়িতে করে আসতে হতো না। আবার যদি স্কুলবাস বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হতো, তাহলেও কিন্তু রাস্তায় এই অনাকাঙ্ক্ষিত জ্যামের সৃষ্টি হতো না। আমরা আমাদের শিশুদের সে রকমভাবে তৈরি করতে পারিনি। একেবারে ছোটবেলা থেকে গাড়িতে অভ্যস্ত করে তুলছি। যাদের গাড়ি নেই, তাদের সঙ্গে জীবনের শুরুতেই একটা দূরত্ব সৃষ্টি করে দিচ্ছি।
এ ব্যাপারটা আমাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। কোনো এক লেখায় পড়েছিলাম, জাপানে নির্দিষ্ট এলাকার স্কুলেই ভর্তি হতে হবে। অন্য এলাকায় ভালো স্কুল আছে, মা-বাবার পকেটে অনেক টাকা আছে, তাহলেই সে স্কুলে ভর্তি হওয়া যাবে না। ভর্তি হতে হবে নিজের এলাকার স্কুলে।শিখতে হবে দাঁত ব্রাশ করা, টয়লেট ব্যবহার করা, ব্যাগের বই গুছিয়ে নেওয়া, রান্না করা, মেহমান এলে তাঁর সঙ্গে সঠিক আচরণ করা। পরিচ্ছন্নতা শেখানো হবে। যেখানে-সেখানে কাগজপত্র ও থুতু ফেলা যাবে না।
আর শিক্ষক? শিক্ষককে তো হতে হবে শিক্ষার্থীর প্রকৃত বন্ধু। তিনি এমন মনকাড়াভাবে বিষয়বস্তুর সঙ্গে শিক্ষার্থীর পরিচয় ঘটাবেন, যেন এর চেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় আর কিছুই নেই! প্রকৃতির সঙ্গে বন্ধুত্ব তৈরি করার কাজটিও তো শুরু হয় ওই শৈশব থেকে। আর দেশপ্রেম? সেটা কি গাছে গাছে ফলে? টুপ করে পেড়ে নিয়ে খাওয়া যায়? দেশপ্রেমের জন্ম হয় সততার সঙ্গে নিজের কাজ করলে, দৃষ্টান্তমূলক কাজের সঙ্গে শিশুকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হলে।
কথাগুলো বলতে হলো বেহাল উচ্চশিক্ষার কথা বলতে গিয়েই। নানা ধরনের প্রলোভনের কাছে উচ্চশিক্ষা বিড়ম্বিত হচ্ছে। পড়াশোনার সঙ্গে পঠিত বিষয়টি আত্মস্থ করার কোনো সংযোগ নেই। সামনে ঝুলছে নম্বরের মুলো। সেটাই কাঙ্ক্ষিত শুধু।
তবে এ কথা বলার সময় একবারও ভুলি না, আমাদের শিক্ষায় বাজেটের বরাদ্দের কথা। শিক্ষার জন্য যে বাজেট, তার সঙ্গে তুলনা করুন অন্য অনেক অগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের। দেখতে পাবেন, সবচেয়ে প্রয়োজনীয় শিক্ষা খাতটি কতটা অবহেলিত। একই স্তরের একজন সরকারি আমলা, সামরিক অফিসার এবং একজন শিক্ষকের সুযোগ-সুবিধাগুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যাবে, শিক্ষাকে মর্যাদা দেওয়ার কোনো চেষ্টা নেই।
যে শিক্ষক তাঁর সমপর্যায়ের অন্য চাকুরেদের থেকে সব দিক থেকে পিছিয়ে থাকেন, তাঁকে কেন সম্মান করবে মানুষ? যখন মান-মর্যাদার সঙ্গে অর্থের একটা ‘অর্থবোধক’ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, তখন অসৎ পথে আয় করা ধনী লোকটিকে শিক্ষকের তুলনায় অনেক বড় বলে মনে হতে পারে।
এই শিক্ষক তাই শিক্ষার্থীকে ‘মানুষ’ করার কথা ভাববেন না। তিনি শিক্ষার্থীর মনে জিজ্ঞাসার জন্ম দেবেন না। ক্লাসঘরটাকে পরিণত করবেন নীরস এক পাঠকক্ষে। নম্বরপ্রাপ্তির জন্য যন্ত্রের মতো ক্লাসে যাবেন আর আসবেন। শিক্ষার্থীরা এবং যৌক্তিকভাবে ভাবতে শিখবে না বলে সমাজের কোনো বিষয়ই তাদের আলোড়িত করবে না।
শুরুতেই বলেছিলাম, এগারোটা বেজে গেছে শিক্ষার। আসলে এই লেখা তৈরি হতে হতেই তা সাড়ে এগারোটায় পৌঁছে গেছে। এ কথা মনে রেখে আমরা বলতে পারি, কেন ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা লোপাট হলে কারও গায়ে লাগে না, কেন কেউ দুর্নীতির বিরুদ্ধে উচ্চ রব তোলে না, কেন রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তির মাধ্যমে সম্পদশালী হতে চায় মানুষ, কেন মানুষকে আর মানুষ বলে ভাবতে চায় না তথাকথিত শিক্ষিত মানুষ।
বারোটা বাজার সংকেত শোনার জন্য অপেক্ষা করার মতো ভয়াবহ আর কী হতে পারে?
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

টের পাচ্ছি, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ভবিষ্যৎ নাগরিকদের বারোটা বাজাবে। এগারোটা যে বেজে গেছে, তা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিশ্ব র্যাঙ্কিং থেকেই বোঝা যায়। জ্ঞান সৃষ্টির কোনো উদ্যোগ আপাতত খুব একটা চোখে পড়ছে না। খুব কমসংখ্যক শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠন-পাঠনকে গুরুত্বের সঙ্গে নেন।
০২ অক্টোবর ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

টের পাচ্ছি, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ভবিষ্যৎ নাগরিকদের বারোটা বাজাবে। এগারোটা যে বেজে গেছে, তা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিশ্ব র্যাঙ্কিং থেকেই বোঝা যায়। জ্ঞান সৃষ্টির কোনো উদ্যোগ আপাতত খুব একটা চোখে পড়ছে না। খুব কমসংখ্যক শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠন-পাঠনকে গুরুত্বের সঙ্গে নেন।
০২ অক্টোবর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

টের পাচ্ছি, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ভবিষ্যৎ নাগরিকদের বারোটা বাজাবে। এগারোটা যে বেজে গেছে, তা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিশ্ব র্যাঙ্কিং থেকেই বোঝা যায়। জ্ঞান সৃষ্টির কোনো উদ্যোগ আপাতত খুব একটা চোখে পড়ছে না। খুব কমসংখ্যক শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠন-পাঠনকে গুরুত্বের সঙ্গে নেন।
০২ অক্টোবর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

টের পাচ্ছি, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ভবিষ্যৎ নাগরিকদের বারোটা বাজাবে। এগারোটা যে বেজে গেছে, তা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিশ্ব র্যাঙ্কিং থেকেই বোঝা যায়। জ্ঞান সৃষ্টির কোনো উদ্যোগ আপাতত খুব একটা চোখে পড়ছে না। খুব কমসংখ্যক শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠন-পাঠনকে গুরুত্বের সঙ্গে নেন।
০২ অক্টোবর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫