Ajker Patrika

বিপিএলেও সেই ‘সরকারি’ দল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩: ১৩
বিপিএলেও সেই ‘সরকারি’ দল

রাজধানীর এক পাঁচতারকা হোটেলে গতকাল সোমবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) প্লেয়ার্স ড্রাফট বা খেলোয়াড় নিলাম দেখতে দেখতে বারবার ভারতীয় জনপ্রিয় ওয়েব সিরিজ ‘ইনসাইড এজ’-এর দৃশ্যগুলো মনে পড়ছিল। ওয়েব সিরিজের গল্প একটা ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টকে ঘিরে। মাঠে, মাঠের বাইরে কত জটিল, রহস্যময় আর বিস্ময়কর সব ‘খেলা’ চলে, কত যে ‘ধুলা’ ওড়ে—সেটাই ওয়েব সিরিজটার মূল উপজীব্য।

বিপিএলও এমন ‘খেলা’ আর ‘ধুলা’র মিশ্রণে বারবার বিতর্কের কালিমা মেখেছে। আর এবার তো নিলামের আগেই বিতর্ক শুরু। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ‘ফ্র্যাঞ্চাইজি স্বত্বাধিকারী’ হওয়ার আহ্বান করেছিল বিসিবি। সেই আহ্বানে কেমন সাড়া পেয়েছিলেন, সেটি গতকাল নিজেই জানালেন বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্যসচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিক, ‘প্রায় ১০-১২টি প্রতিষ্ঠান আমাদের কাছে আগ্রহ প্রকাশ করে। পুরো প্রক্রিয়া শেষ করে আমরা আটটি নির্বাচন করি যে তারা মালিক হিসেবে থাকতে পারবে। সেখান থেকে আমরা সংক্ষিপ্ত তালিকা করে ছয়টা করি।’

ড্রাফটের আগের দিন অর্থাৎ পরশু জানা যায়, সংক্ষিপ্ত তালিকা করা এই ছয়টির মধ্যে থাকছে না রুপা ও মার্ন কনসোর্টিয়াম। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠান ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি ও প্লেয়ার্স পেমেন্টের ৫ কোটি টাকা (পে অর্ডার) জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। পরে বিসিবি সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই দল তারাই চালাবে। নিলামের আগের দিন এমন ঘটনা ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টেই বিরল। আরও বিরল, টুর্নামেন্টের একটি দল স্বয়ং ক্রিকেট বোর্ড চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে! এ পরিস্থিতিতে নিলাম পিছিয়ে দেওয়ার ‘অপশনে’ও তারা যায়নি। যে টুর্নামেন্টে কমিটির দল থাকে, তার স্বচ্ছতা নিয়ে সংশয় থাকবেই।

অবশ্য বাংলাদেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে ‘সরকারি’ বা ‘কমিটির দলে’র উদাহরণ নতুন নয়। বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেট বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে (বিসিএল) পৃষ্ঠপোষক খুঁজে না পেয়ে গত দুই বছর বিসিবিই দুটি দল চালাচ্ছে। এবার বিপিএলেও দেখা যাচ্ছে সেটি। বিসিবির এই দলে আছেন বর্তমান সাদা বলে বাংলাদেশের দুই অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও তামিম ইকবাল। আছেন দেশের সফলতম অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাও। ‘এ’ শ্রেণিতে থাকা তিন তারকা ক্রিকেটারের পারিশ্রমিকই ২ কোটি ১০ লাখ টাকা। বিপিএলের গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্যসচিব গতকাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দলটা আপাতত বিসিবির হাতে থাকলেও পরে স্পনসরশিপ বা মালিকানা কাউকে দেওয়া হবে। কিন্তু টুর্নামেন্টের এই স্পনসরশিপ বা মালিকানা বিসিবি খুঁজবে কীভাবে?

বিপিএলের ১০ বছরের ইতিহাসে অবশ্য এমন ব্যতিক্রম—বিরল ঘটনা নিয়মিতই দেখা যায়। আর সেসব যেন ঢাকাকে কেন্দ্র করেই বেশি হয়। এই দলটা যেমন বিপিএলের সর্বোচ্চ তিনবার চ্যাম্পিয়ন, আবার সবচেয়ে বিতর্কিতও। প্রথম দুবার ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স নাম নিয়ে বিপিএল শিরোপা জেতা দলটির ফ্র্যাঞ্চাইজি বদল হয়েছে ফিক্সিংয়ের মতো কলঙ্কিত ঘটনার জেরে। বেক্সিমকোর মালিকানায় নবরূপে ফেরা ঢাকা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ২০১৬ বিপিএলে। ২০১৯ সালে সাকিব আল হাসানের ঢাকা ছেড়ে রংপুরে যাওয়া নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি। নেতিবাচক ঘটনায় ‘ঢাকা’ এবারও আলোচনায়। সেটির চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, গত ১০ বছরেও বিপিএল হতে পারেনি বিতর্কমুক্ত কিংবা সুশৃঙ্খল এক টুর্নামেন্ট। ইসমাইল হায়দার মল্লিক সেটি অস্বীকারও করছেন না। কিন্তু বিতর্কমুক্ত কেন হতে পারছে না, এর ব্যাখ্যায় বলছেন, ‘এটা নিয়ে আমাদের (বিসিবি) সভাপতিও বলেছেন, বিপিএল সব সময়ই আমাদের একটা মাথা ব্যথা! এটা বোর্ড নিয়ন্ত্রিত টুর্নামেন্ট নয়। এখানে ফ্র্যাঞ্চাইজি যারা আসে, তাদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। অনেক ফ্র্যাঞ্চাইজি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছে। অনেকে করছে না। সে কারণেই আমরা প্রতিনিয়ত অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি।’

ড্রাফট শেষে সন্ধ্যায় ফোনে এক তারকা ক্রিকেটারের বার্তা এল। তিনি পরিষ্কার হতে চাইছেন, ঢাকার ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়ে যে জটিলতা, এটা সরল কোনো ঘটনা নাকি পেছনে অন্য খেলা চলছে? জটিল প্রশ্ন। বিপিএলের রঙিন মঞ্চে বহু নাটকের মঞ্চায়নই তো হয়!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত