Ajker Patrika

রোপণ একবার ফলন পাঁচবার

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১১: ০২
রোপণ একবার   ফলন পাঁচবার

একবার একটি ধানগাছ রোপণ করে একই গাছ থেকে পাঁচবার ফলন পাওয়া গেছে। প্রথমবারের মতো বোরো জাতের এই নতুন ধানগাছ উদ্ভাবন করে চমক সৃষ্টি করেছেন অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার জিনবিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী, যা এখন দেশব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

জানা যায়, কুলাউড়ার কানিহাটি গ্রামে জন্মেছে নতুন জাতের এই ধান। ইতিমধ্যে এ বছরে পাঁচবার ধান কাটা হয়ে গেছে। আগামী বছর এক বছরেই ছয়বার ধান কাটার লক্ষ্য নিয়ে নতুন করে চাষাবাদের পরিকল্পনা রয়েছে। এলাকাবাসী ও কৃষকেরা বছরে এই একই ধানগাছ থেকে সর্বোচ্চ পাঁচবার ফসল পাওয়ার বিষয়েও অধিক আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

শুরুটা কীভাবে হয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবেদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা কৃষির ওপর নির্ভরশীল। আমি দেখেছি, যাঁরা ধান চাষ করেন, তাঁরা উন্নত জীবন যাপন করতে পারেন না। আমি ব্যক্তিগতভাবে কৃষিতে কীভাবে আয় বাড়ানো যায় এবং ব্যয় কমানো যায়, এটা নিয়ে গবেষণা করেছি। একবার বোরো, দুইবার আউশ এবং দুইবার আমন ধান পেকেছে এবং কেটেছি। কম সময়ে পাকা এই ধানের উৎপাদন বেশি, খরচও কম। তবে প্রথম ফলনের চেয়ে পরের ফলনগুলোতে উৎপাদন ধীরে ধীরে কিছুটা কমে। কিন্তু পাঁচবারের ফলন মিলিয়ে উৎপাদন প্রায় পাঁচ গুণ বেশি।’

আবেদ চৌধুরী আরও বলেন, ‘চলতি বছরের জানুয়ারিতে বোরো ধানের এই জাত দুই বিঘা জমিতে রোপণ করা হয়। পরিমাণমতো ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা হয়। সঠিকভাবে সেচ ও পরিচর্যা করার পর ১১০ দিনের মধ্যে ৮৫ সেন্টিমিটার থেকে এক মিটার উচ্চতার গাছে ফসল আসে। পরে মাটি থেকে ৩৫ সেন্টিমিটার উচ্চতায় পরিকল্পিতভাবে ওই ধান কেটে ফেলা হয়। মে মাসের প্রথম দিকে প্রথমবার কাটা ধানে হেক্টরপ্রতি উৎপাদন হয়েছে চার টন। তারপর থেকে ৪৫ দিন অন্তর প্রতিটি মৌসুমে হেক্টরপ্রতি কখনো দুই টন, কখনো তিন টন ফলন এসেছে। সবগুলো জাত হেক্টরপ্রতি প্রায় ১৬ টন ফলন দিয়েছে। যেহেতু পাঁচবার ফলন হয়, সেহেতু ‘পঞ্চব্রীহি’ নাম দিতে চাই, এখনো কনফার্ম হয়নি। চাইছি আমার এলাকার নামেও দেওয়া যায় কি না।’

আবেদ চৌধুরীর এই ধান দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা রাসেল মিয়া জানান, প্রথমবার উৎপাদনে যে খরচ হয়, পরেরবার উৎপাদনে তেমন খরচ নেই। জমি চাষের উপযোগী করে বোরো রোপণের পর আর জমিতে চাষ করতে হয় না। নির্দিষ্ট একটা মাপে ধান কেটে নেওয়ার পর মোড়া অংশে লতাপাতা ও ঘাস বাছাই করে সার দিতে হয়। এটুকু করলেই আবার ধানের গাছ বাড়তে থাকে। যদি পোকামাকড়ে ধরে, তাহলে সামান্য কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। এই ধান বৃষ্টি নষ্ট করতে পারে না, ধানের গাছ খুব শক্ত। এলাকার কৃষকেরা এই ধানের ফলন দেখে চাষাবাদ করতে আগ্রহী হয়েছেন।

কুলাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল মোমিন বলেন, ‘এক গাছে পাঁচবার ধান উৎপাদন নতুন দেখেছি। এটি দেশের জন্য সুখবর। এই উদ্ভাবনের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাওয়া উচিত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত