Ajker Patrika

চুলায় পানি, তাই রান্না বন্ধ

নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৩ জুন ২০২২, ১৫: ১৭
চুলায় পানি, তাই রান্না বন্ধ

‘চার দিন ধইরা চুলায় পানি। রান্নার কোনো উপায় নাই। তাই রান্ন বন্ধ। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের রাইখা ঘরের বাইরেও কোনহানে যাওয়নের উপায় নাই। ঘরের চার পাশেই ঢলের পানি। চিড়া, মুড়ি, লবণ আর মরিচ দিয়া খাইবার দেই। পোলাপানে খাইবার চায় না। জোর কইরা খাওয়ুন লাগে। কী করমু, এছাড়া তো কোনো উপায় নাই।’

গতকাল কথাগুলো বলছিলেন শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার পূর্ব মরিচপুরান গ্রামের সবজি বিক্রেতা সেকান্দর আলী (৫০)। তিনি আরও বলেন, মা হারানো সন্তানদের নিয়ে তিনি এখন অসহায়। ২০১৪ সালে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে স্ত্রী সাবানা বেগম (৩৮) মারা যান। স্ত্রী চিকিৎসার টাকা জোগাতে ভিটেমাটি বিক্রি করেন তিনি। এর পর থেকে তিন সন্তান নিয়ে লড়াই করে চলেছেন তিনি। এই অসহায়ত্ব শুধু সেকান্দরের একার নয়। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত উপজেলার নিম্নাঞ্চলের তিনটি ইউনিয়নের প্রায় ২৩ হাজার পরিবারের।

উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও পানিবন্দী গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত শুক্রবার উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর প্রায় ১১টি স্থলে বাঁধ ভেঙে যায়। এসব স্থল দিয়ে ঢলের পানি প্রবেশ করে নিম্নাঞ্চল হিসেবে উপজেলার কলসপাড় ইউনিয়নের পিপেলেশ্বর, নগরভেরা, বগানাড়া, সূর্যনগর, নাঁকশী গ্রামের দুই হাজার পরিবার। মরিচপুরান ইউনিয়নে নলকুড়া, ভোগাইরপাড়, কয়ারপাড়, দক্ষিণ ও উত্তর কোন্নগর, ফকিরপাড়া, মরিচপুরান, খলাভাঙা, উল্লারপাড়, বাশকান্দা, গোজাকুড়া গ্রামে ৮ হাজার পরিবার। বাঘবেড় ইউনিয়নে উত্তর ও দক্ষিণ সন্নাসীভিটা ও রানীগাঁও গ্রামের দুই হাজার পরিবার। যোগানিয়া ইউনিয়নের গড়াকুড়া, গেড়ামারা, বড়বন্ধ, নলকুড়া, বাথূয়ারকান্দা, কুত্তামারা, ঘোড়ামারা, যোগানিয়া, কান্দাপাড়া, পশ্চিম কাপাসিয়া গ্রামের ১০ হাজার পরিবার চারদিন ধরে নতুন করে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নৌকা ছাড়া এসব পরিবার বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না। এ ছাড়া তিনটি ইউনিয়নের প্রায় ২০ কিলোমিটার কাঁচা ও পাকা সড়ক পানিতে ডুবে গেছে।

এ ছাড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার প্রায় ২৬০ মিটার পাকা সড়ক, প্রায় ২০-২৫ কিলোমিটার কাঁচা সড়কসহ বেশ কয়েকটি কালভার্টের ক্ষতি হয়েছে। ঢলের পানির প্রবল স্রোতে ভেসে গেছে ৩টি স্টিলের সেতু। এতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের পলাশীকুড়া-টিলাপাড়া, আমবাগান-বাতকুচি ও বাঘবেড় ইউনিয়নের সন্ন্যাসীভিটা গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ।

নলকুড়া গ্রামের কৃষক হাসেম আলী (৫৭) বলেন, ‘সরকারি চাইল পাইছি ৮ কেজি। কিন্তু এগুলা রাইন্ধা খামু কেমনে। পানির দিন আইলেই পুলাপান লইয়া খুব কষ্টে দিন পার করুন লাগে।’

উপজেলার বাতকুচি গ্রামের দিনমজুর রহমত আলী বলেন, ‘ঢলের পানিতে চোখের সামনেই স্টিলের সেতুটা ভাইসা গেছে। অহন আমবাগান গ্রামের সঙ্গে আমগো যোগাযোগ বন্ধ।’

মরিচপুরান ইউপি চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী বলেন, ‘পানিতে অনেক বাড়িঘরে ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া শুধু আমার ইউনিয়নেরই পাঁচটি রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ফলে চলাচলে মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে।’

নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘পানিবন্দী মানুষের মধ্যে ২৯ মেট্রিক টন জিআরের চাল জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে শুকনা খাবারও দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে আরো চাল বরাদ্দ দেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

১০০ বছর পর জানা গেল ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত