Ajker Patrika

মা মাছ ডিম ছাড়লেও হতাশ সংগ্রহকারীরা

মো. আরফাত হোসাইনরাউজান (চট্টগ্রাম)
আপডেট : ২১ মে ২০২২, ১০: ০৬
মা মাছ ডিম ছাড়লেও  হতাশ সংগ্রহকারীরা

দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদীতে ডিম ছেড়েছে মা মাছ। নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ডিম আহরণ করেন সংগ্রহকারীরা। তবে, এবার প্রত্যাশা অনুযায়ী ডিম পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন তাঁরা। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ ডিম ছাড়ার বিশেষ স্থান নদীর কুম (গভীর এলাকা) ভরাট করায় কাঙ্ক্ষিত ডিম মিলছে না বলে মনে করছেন সংগ্রহকারী ও হালদা বিশেষজ্ঞরা।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী ও ডিম সংগ্রহকারীদের দাবি, নদীর অঙ্কুরিঘোনা থেকে রামদাশ হাট পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার এলাকায় রয়েছে এসব কুম। কিন্তু নদীর পাড় রক্ষা ও ভাঙনরোধে এসব কুমের মধ্যে জিও ব্যাগ ফেলায় অনেকটা ভরাট হয়ে গেছে। প্রজনন মৌসুমে এসব কুমে পানির স্রোত কমে গেছে। যে কারণে মা মাছ এখানে ডিম ছাড়েনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার ভোর থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলার ডিম সংগ্রহকারীরা প্রায় আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করেছেন বলে ধারণা মৎস্য বিভাগের নদী পর্যবেক্ষণ টিমের তথ্য সংগ্রহকারী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তার। এদিকে, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে মোটপ্রাপ্ত ডিমের পরিমাণ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হবে জানিয়ে সঠিক তথ্য নিশ্চিত করেনি উপজেলা কিংবা জেলা মৎস্য বিভাগ।

এর আগে জোয়ারের সময় গত শনিবার রাত সাড়ে ১১টা, ভাটার সময় শেষ রাত তিনটার দিকে এবং রোববার দুপুরে নদীর বেশ কিছু এলাকায় নমুনা ডিম পাওয়া গেছে।

ডিম সংগ্রহকারীরা জানান, তাঁরা ২৫০ গ্রাম থেকে আধা কেজি পর্যন্ত নমুনা ডিম পেয়েছেন। বেশ কিছু স্থানে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউশের নমুনা ডিম পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে হাটহাজারীর রামদাস মুন্সিরহাট, মাছুয়াঘোনা, নাপিতের ঘাট, আমতুয়া, নয়াহাট, রাউজানের আজিমের ঘাট, খলিফারঘোনা, ছায়ার ছড় এলাকায় ৫০০-৭০০ গ্রাম করে ডিম পাওয়া গেছে। আবার কোথাও কোথাও কয়েক কেজি ডিম পাওয়ার কথাও জানিয়েছেন তাঁরা।

ডিম সংগ্রহকারী কামাল সওদাগর বলেন, ‘পাথর ব্লক ফেলে নদীর কুম ভরাট করে ফেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ডিম পাওয়া যায়নি।’

ডিম সংগ্রহকারী মুন্সিদাশ বলেন, ‘হতাশা নিয়ে নদী থেকে উঠে যাচ্ছি। সেভাবে ডিম পাইনি, কি করে নৌকা ভাড়া দেব বুঝতে পারছি না।’ হালদা নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের পাথর ব্লকই কাল হয়েছে বলে দাবি তাঁর।

রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জোনয়েদ কবির সোহাগ বলেন, হালদার রাউজান অংশের বিভিন্ন পয়েন্টে ডিম আহরণ করেছেন সংগ্রহকারীরা। বজ্রপাতসহ বৃষ্টিপাত না থাকায় ডিম কম পাওয়া যেতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি।

চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীর কুমগুলো ভরাট করে ফেলছে। এতে মাছের ডিম দেওয়ার জায়গা সংকুচিত হয়ে আসছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। আশা করি বিষয়টির সমাধান হবে।’

হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘গত সোমবার ভোরে মা মাছ ডিম ছেড়েছে। এ বছর হালদা রক্ষায় ভূমিকা থাকলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী ডিম পাওয়া যায়নি। এবার বজ্রপাতসহ বৃষ্টি না হওয়ায় পাহাড়ি ঢল সৃষ্টি হয়নি। এ কারণে প্রত্যাশা অনুযায়ী ডিম পাওয়া যায়নি।’

হালদা গবেষক ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পর্যাপ্ত পরিমাণে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হলে পরবর্তীতে কাঙ্ক্ষিত ডিম পাওয়া যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত