Ajker Patrika

ভাত হলো, আনাস ফিরল না

বুড়িচং প্রতিনিধি
আপডেট : ১২ মার্চ ২০২২, ১২: ৫১
ভাত হলো, আনাস ফিরল না

‘আম্মু, আমি চাচার লগে চুল কাটতে যাই। চুল কাইটা আইয়া ভাত খামু। আমার জন্য ভাত রাইন্দা রাখো।’ বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে স্বভাবসুলভ এমনই আবদার ছিল ৫ বছরের শিশু আনাস হোসেনের। এই শিশুটি চুলও কাটিয়েছিল। বাড়িও ফিরেছে। অপর দিকে ভাতও রান্না হয়েছে। কিন্তু সে আর মায়ের হাতে ভাত খেতে পারবে না। এই মাতম করছেন মা সুমাইয়া আক্তার। তাঁর এলোমেলো বিলাপের ভাষ্য, ছেলেকে ছাড়া তিনি ভাত খাবেন কী করে!

গতকাল চুল কাটিয়ে বাড়ি ফেরার পথে প্রাইভেট কারের চাপায় প্রাণ যায় দুই শিশু-কিশোরের। তারা সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা। দুজনই মায়ের একমাত্র নাড়িছেঁড়া সন্তান।

এদের মধ্যে আনাস সুমাইয়া আক্তারের একমাত্র ছেলে। তিনি ছেলের ছবি ও কাপড় জড়িয়ে কান্না করেই যাচ্ছেন। চোখের পানি যেন শুকাতে চায় না। তবে প্রতিবেশীরা চান, তাঁর কান্না কিছুটা বুকের ভেতরে চাপা থাকুক। এ জন্য সান্ত্বনা দিয়ে কষ্ট ভুলিয়ে রাখা দরকার। নতুন করে যাঁরা আসছেন, তাঁদের কেউ কেউ এই মায়ের কাছে এগিয়েও যাচ্ছেন। কিন্তু সান্ত্বনার ভাষা খুঁজে না পেয়ে নিজেরাও কাঁদছেন।

সুমাইয়া জানান, ১২টার দিকে তাঁর কাছ থেকে ৩০ টাকা নিয়ে চাচার সঙ্গে চুল কাটতে যায় আনাস। সকালে চা আর বিস্কুট খেয়েছিল সে। খিদে চেপেই ঘর থেকে বের হয় শিশুটি। ইচ্ছে ছিল শুক্রবার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে তবেই মায়ের হাতের গরম ভাত খাবে।

সেই দেখাই ছিল শেষ দেখা: রবিউল হোসেনের মা সাহেরা বেগম। স্বামী রিকশাচালক। এক ছেলে, তিন মেয়ের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় স্বামীর। তাই বাধ্য হয়ে একটু ভালো থাকার আশায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাবুর্চির সহযোগী হিসেবে কাজ করেন সাহেরা। একমাত্র ছেলে যখন সড়কে প্রাইভেট কারের চাপায় পিষ্ট হচ্ছে, তখনো তিনি অন্যের বিয়ের অনুষ্ঠানে কাজ করছেন। চারপাশের উৎসবের আবহে একটু হলেও তাঁর মন ফুরফুরে ছিল। তখনই আসে ছেলের চিরবিদায়ের খবর।

মা জানান, এক দিন আগে ছেলের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে মা-ছেলে একসঙ্গে ভাগাভাগি করে ভাত খেয়েছিলেন। এরপর থেকে মা বিয়েবাড়ির কাজে ব্যস্ত ছিলেন।

নাড়িছেঁড়া ধন হারিয়ে শোকে পাথর তিনি। কান্নার জেরে কথা বলতে পারছেন না। এর মধ্যে এই প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলেন। তাঁর শোকের সঙ্গে অনেক ভাবনার মিশেল, অনেক স্বপ্নের মৃত্যুর গন্ধ পাওয়া গেল। ভাঙা ভাঙা গলায় বললেন, ‘ভেবেছিলাম, ছেলেটি সংসারের হাল ধরবে। শেষকাল ভালোভাবে যাবে। এখন আর কোনো সম্বলই রইল না। সব শেষ।’

তরতাজা ছেলের রক্তে রাজপথ লাল হওয়ার ঘটনা মেনে নিতে পারছেন না মায়েরা। তাঁদের চিৎকারে এলাকার পাষণ্ড ব্যক্তিটির চোখের কোনাও চিকচিক করছে।

জেলাজুড়ে যখন ট্রেনে কাটা পড়ে তিন স্কুলছাত্রীর মৃত্যুর শোক চলছে, তখনই গত বৃহস্পতিবার বাসের চাপায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই ছাত্র নিহত হয়। এর ২৪ ঘণ্টা পেরোতেই আরেকটি দুর্ঘটনা ঘটল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত