Ajker Patrika

উদ্বোধনের ১৬ বছরেও চালু হয়নি ট্রমা সেন্টার

দাউদকান্দি প্রতিনিধি
আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০: ০৬
Thumbnail image

কুমিল্লার দাউদকান্দির শহীদনগরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশের ট্রমা সেন্টারটি উদ্বোধনের ১৬ বছর পেরিয়ে গেলেও সম্পূর্ণরূপে চালু হয়নি। এ পর্যন্ত দুবার উদ্বোধন করা হলেও সরকারি সিদ্ধান্ত ও লোকবলের অভাবে বর্তমানে এটি প্রায় অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। যে প্রতিষ্ঠানটি মানুষের ভাঙা হাড় জোড়া দেওয়ার কথা, সে প্রতিষ্ঠানই জোড়াতালি দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ কুমিল্লার বিভিন্ন সড়কে দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের চিকিৎসা দিতে ট্রমা সেন্টারটি গড়ে ওঠে। গণপূর্ত বিভাগের অর্থায়নে ৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ে সেন্টারটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে উদ্বোধন করা হলেও আজও চালু করা সম্ভব হয়নি। অথচ মহাসড়কে প্রায় প্রতিদিনই কুমিল্লার কোনো না কোনো স্থানে সড়ক দুর্ঘটনা হলে স্থানীয় ডাক্তাররা দ্রুত ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে রেফার করেন। কিন্তু ঢাকা নেওয়ার পথে সময় বা চিকিৎসার অভাবে প্রতি বছর প্রাণ হারাচ্ছেন শত শত যাত্রী।

স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ট্রমা সেন্টারটি কার্যক্রম চালু না হওয়ার কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ গৌরীপুর-হোমনা-বাঞ্ছারামপুর, গৌরীপুর-সাচার-কচুয়া, গৌরীপুর-মতলব-চাঁদপুর, ইলিয়টগঞ্জ-মুরাদনগর রোডে প্রায় প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত কোনো রোগী চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, সুন্দর একটি ভবন ছাড়া তাঁরা আর কিছুই পাননি।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. কামরুল হাসান অভিযোগ করে বলেন, আর কতবার উদ্বোধন করলে এ ট্রমা সেন্টারের কার্যক্রম চালু হবে?

শাহনাজ পারভিন নামে এক নারী বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমার এক ভাই বাইকে এক্সিডেন্টে করেন। তাঁকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসকেরা ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে রেফার করেন। ঢাকা যাওয়ার মতো হাতে তেমন টাকা ছিল না। এ ছাড়া অনেক হয়রানি হতে হয়েছে। আমাদের এই ট্রমা সেন্টারটি যদি সম্পূর্ণরূপে চালু হতো, তাহলে আমাদের এত হয়রানি হতে হতো না।’

ট্রমা সেন্টার ঘুরে দেখা গেছে, একটি কক্ষে বহির্বিভাগের মাধ্যমে জেনারেল রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসার সময় একমাত্র উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তা আমিনা খানমের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে আমাদের এখানে পাঠানো হয়েছে। ৪ জন সিস্টার ও ১ জন আউটসোর্সিংয়ের সাহায্যে আমরা এখানে রোগীদের বহির্বিভাগের মাধ্যমে জেনারেল চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছি।’

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তৌহীদ আল-হাসান বলেন, ‘আমি এখানে সম্প্রতি যোগদান করেছি। বর্তমানে ট্রমা সেন্টারটির একটি কক্ষে বহির্বিভাগের মাধ্যমে জেনারেল চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ এই ট্রমা সেন্টারটি সম্পূর্ণরূপে চালু করার জন্য কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জনকে জানানো হয়েছে।’

কুমিল্লা জেলার সিভিল সার্জন মীর মোবারক হোসাইন বলেন, ‘আমাদের ডাক্তার-নার্সের স্বল্পতা রয়েছে। ট্রমা সেন্টারটি সম্পূর্ণরূপে চালু করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

জানা গেছে, বিগত বিএনপিদলীয় জোট সরকার ক্ষমতা ছাড়ার আগ মুহূর্তে সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনামন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ২০০৬ সালের ৬ অক্টোবর সেন্টারটির প্রথমে উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে মাস খানিক পর সেন্টারটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে আওয়ামী লীগ মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর তৎকালীন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী আ ন ম রুহুল হক ২০১০ সালের ৩০ এপ্রিল দ্বিতীয়বারের মতো ট্রমা সেন্টারটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দুর্ঘটনাকবলিত যাত্রীদের উন্নত চিকিৎসাসেবার প্রদানের কথা মাথায় রেখে আগামী ১ মাসের মধ্যে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ট্রমা সেন্টারের প্রয়োজনীয় সকল যন্ত্রপাতি এবং জনবল দেওয়া হবে, কিন্তু ঘোষণার প্রায় ১১ বছর অতিবাহিত হলেও এখনো এর কোনো কার্যক্রম চালু হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত