Ajker Patrika

শতকে আড়াই কেজি ধান

জসিম উদ্দিন, নীলফামারী
আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩: ২১
শতকে আড়াই কেজি ধান

নীলফামারীর ডিমলায় বেসরকারি সংস্থা গ্রাম বিকাশ কেন্দ্র থেকে বিনা মূল্যে পাওয়া ধানের বীজ রোপণ করে বিপাকে পড়েছেন উপজেলার ৬১ জন কৃষক। প্রতি শতকে ধান উৎপন্ন হয়েছে মাত্র এক থেকে আড়াই কেজি। কৃষকদের অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানটির খামখেয়ালিপনায় নিম্নমানের বীজের কারণে এমন ফলন হয়েছে। এ অবস্থায় পরিবারের চাহিদা অনুযায়ী ধান দূরে থাক, উল্টো উৎপাদন খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকেরা।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের গ্রাম বিকাশকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক দুরুল হুদা বলেন, ৬১ জন কৃষককে ধানের বীজ দিয়েছি, কিন্তু তাঁদের ফসল হয়নি। কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা করছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি, ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কোনো আশ্বাস এখনো পাইনি।’

দুরুল হুদা আরও জানান, পিকেএসএফের অর্থায়নে কৃষকদের মধ্যে বিনা মূল্যে বীজ বিতরণ করেছি। তবে ধানের শিষ বের হওয়ার সময় অধিক তাপমাত্রা থাকায় এমনটি হতে পারে বলে।

সূত্রমতে, সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) অধীন উপজেলায় ‘সম্প্রসারিত সম্প্রদায় জলবায়ু পরিবর্তন প্রকল্প-বন্যা’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে গ্রাম বিকাশকেন্দ্র। চলতি আমন মৌসুমে উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি চরাঞ্চলের ৬১ জন দরিদ্র কৃষকের মধ্যে হাইব্রিড ব্রি-৫২ জাতের ধানের বীজ ও প্রয়োজনীয় সার বিনা মূল্যে বিতরণ করে প্রতিষ্ঠানটি।

একতার বাজার এলাকার চরখড়িবাড়ির কৃষক নুর ইসলাম জানান, ৪৫ শতক জমির জন্য তিনি ৫ কেজি ধানের বীজ পেয়েছেন। এর সঙ্গে বিনা মূল্যে ৫ ধরনের ৬২ কেজি সার দেওয়া হয়েছে তাঁকে। তাঁদের নির্দেশনায় বীজ বপন-রোপণ, সার, কীটনাশক দেওয়া হলেও ধানের উৎপাদন একেবারেই নেই। ৪৫ শতকে ধান উৎপন্ন হয়েছে ১০০ কেজি। বিনা মূল্যে সার ও বীজ পেলেও তাঁর কীটনাশক ও কামলা বাবদ খরচ হয়েছে প্রায় ৭ হাজার টাকা। আর উৎপাদিত ধান কালো রং ধারণ করায় খরিদদারেরা কিনতে চান না।

পূর্ব খড়িবাড়ি গ্রামের রাবেয়া বেগম জানান, গ্রাম বিকাশ থেকে বিনা মূল্যে দেওয়া হাইব্রিড ব্রি-৫২ জাতের ধানের বীজ ২৭ শতক জমিতে চাষ করেছিলেন তাঁর স্বামী। কিন্তু ধানের ফলন হয়েছে ৩০ কেজি। ৫ হাজার টাকা ধারদেনা করে চাষ করেছেন। এখনো ১ হাজার টাকা সারের দোকানে বাকি। এখন তাঁরা খাবেন কী, আর ধারদেনা ও দোকানের বাকি পরিশোধ করবেন কীভাবে?

একই এলাকার আব্দুল আজিজ বলেন, ‘গ্রাম বিকাশকেন্দ্র থেকে বলেছিল প্রতি বিঘায় ২৫-৩০ মণ ধান হবে। তাদের প্রলোভনে বীজ রোপণ করেছি। ধান হয়েছে বিঘায় ১০-১৫ কেজি। অথচ গতবার এই জমিতে ধান হয়ছিল ১৮ মণ।’

আব্দুল আজিজ আরও জানান, গ্রাম বিকাশকেন্দ্র থেকে দেওয়া বীজে রোগবালাই বেশি। বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক প্রয়োগ করেও কোনো লাভ হয়নি। এ বিষয়ে গ্রাম বিকাশের লোকজনকে জানালেও তাঁরা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। যা ক্ষতি করেছে, তার প্রতিকার চান তাঁরা। ক্ষতিপূরণ না দিলে পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।

গ্রাম বিকাশকেন্দ্রের প্রকল্পটির সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার আব্দুস সালাম বলেন, ‘ধানের ফলন কম হওয়ার বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট সুপারিশ করেছি।’ বন্যাকবলিত এলাকা হিসেবে তিস্তাপাড়ের কৃষকদের জন্য দুই বছর মেয়াদি প্রকল্পটিতে অন্যান্য ফসলের চাষাবাদ রয়েছে। এবারের বিষয়টি মাথায় রেখে আগামী ফসলগুলো ফলনে সঠিক নজরদারি করা হবে বলে জানান আব্দুস সালাম।

ডিমলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সেকেন্দার আলী বলেন, ‘কৃষকের ক্ষতির বিষয়টি বিভিন্ন মাধ্যমে জেনেছি। তা ছাড়া ওই এনজিওতে অবশ্যই একজন কৃষিবিষয়ক কর্মকর্তা রয়েছে। একদিনের প্রশিক্ষণে একটি ফসল উৎপাদনের খুঁটিনাটি কৃষকের মধ্যে তুলে ধরা আদৌ সম্ভব নয়। মাঠপর্যায়ে কৃষকদের সঙ্গে থেকে দেখভাল করা হলে প্রকল্পটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১০০ বছর পর জানা গেল, ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস মোয়াজ্জেমকে অব্যাহতি

ঘন ঘন নাক খুঁটিয়ে স্মৃতিভ্রংশ ডেকে আনছেন না তো!

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত