Ajker Patrika

দাদনের চাপে পিষ্ট জেলেরা

আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি
আপডেট : ৩১ জুলাই ২০২২, ১২: ১৫
দাদনের চাপে পিষ্ট জেলেরা

দাদনের ভয়াবহ চাপে পিষ্ট উপকূলের জেলেরা। প্রজন্মের পর প্রজন্ম দারিদ্র্যের শিকলে বাঁধা তাঁরা। তাঁদের এই দারিদ্র্যের সুযোগ নিচ্ছেন দাদন ব্যবসায়ীরা। দাদন ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন দরিদ্র জেলেরা। এই অবস্থায় দাদন ব্যবসায়ীদের জিম্মি দশা এবং দাদনের ভয়াবহতা থেকে মুক্তি পেতে সরকারিভাবে সহযোগিতার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

জানা গেছে, উপকূলীয় অঞ্চল আমতলী ও তালতলীতে ১৪ হাজার ৬৮৯ জন নিবন্ধনধারী জেলে রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে আমতলীর ৬ হাজার ৭৮৯ এবং তালতলীর ৭ হাজার ৯০০ জেলে। সারা বছর মাছ শিকার করেই চলে তাঁদের সংসার। জেলেদের মাছ শিকারে জাল, নৌকা, ট্রলার ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের প্রয়োজন হয়। এসব তৈরিতে প্রয়োজনীয় টাকা না থাকায় দাদন ব্যবসায়ীদের দ্বারস্থ হন জেলেরা। আর তাতেই দাদন ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি হয়ে যান তাঁরা। জেলেদের সংসার চলুক আর না চলুক, আসল টাকা রেখে ব্যবসার টাকা তুলে নেন তাঁরা। দাদন ব্যবসায়ীদের জিম্মি দশা থেকে মুক্তি পেতে জেলেরা সরকারের কাছে জাল-নৌকাসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাবি জানান।

জেলেরা বলেন, এক ফার (৪৫০ হাত) জাল ও নৌকা তৈরি করতে অন্তত ৬৫ হাজার টাকা খরচ হয়। ওই পরিমাণ টাকা জেলেদের হাতে থাকে না। তাই দাদন ব্যবসায়ীদের দ্বারস্থ হতে হয়। তাঁরা ইচ্ছামতো মাছের দাম নির্ধারণ করে দেন। ওই নির্ধারিত দামেই জেলেদের মাছ বিক্রি করতে হয়। এতে ইলিশসহ মাছের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জেলেরা।

জেলে ছত্তার বলেন, গত বছর দুই ফার বা ৯০০ হাত জাল ও নৌকা ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় তৈরি করেছি। ওই টাকা দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এনে পরিশোধ করতে হয়েছে।

জেলে লাল মিয়া বলেন, ৬৫ হাজার টাকা দাদন নিয়ে এক ফার জাল ও নৌকা তৈরি করেছি। গত ছয় বছরেও এ টাকা পরিশোধ করতে পারিনি। আমতলী গুলিশাখালী ইউনিয়নের নাইয়াপাড়া গ্রামের জেলে শামিম বলেন, দাদন ছাড়া জেলেদের জীবন চলে না। প্রত্যেক জেলেরই কিছু না কিছু দাদন রয়েছে।

নাইয়াপাড়া গ্রামের জেলে সৈয়দ আকন বলেন, ‘ইলিশ ধরতে ধরতে বুড়া অইয়্যা গ্যালাম, কিন্তু দাদন শ্যাষ হরতে পারলাম না। শ্যাষ হরতে পারমু কি না জানি না। সরহার যদি মোগো জাল-নৌকা বানাইয়্যা দিত, হ্যালে আর মহাজনদের ধারে যাইতে অইত না।’

ফকিরহাট দাদন ব্যবসায়ী সুজন ফরাজী বলেন, লাখ লাখ টাকা খাটিয়ে সারা বছর জেলেদের পাশে থাকি। জেলেদের মাছ বিক্রির টাকা থেকে কিছু কমিশন নিই। যখন বেশি মাছ ধরা পড়ে, তখন কিছু কিছু কেটে রাখা হয়।

তালতলী ফকিরহাট মৎস্য সমিতির সহসভাপতি মো. ছালাম হাওলাদার বলেন, অধিকাংশ জেলেই দরিদ্র। দাদন ছাড়া জেলেরা চলতে পারে না। জাল-নৌকাসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তৈরিতে যে পরিমাণ টাকার প্রয়োজন, তা জেলেদের কাছে হয়ে ওঠে না। তাই বাধ্য হয়েই দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে যেতে হয়।

আমতলী উপজেলা মেরিন ফিশারিজ কর্মকর্তা সায়েদ মো. ফারাহ বলেন, মৎস্যসম্পদ উন্নয়নে সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের অধীনে উপজেলার ১০টি গ্রামের ১ হাজার ৩০০ জেলে পরিবারকে প্রয়োজন অনুসারে ৮ শতাংশ হারে ২০ হাজার টাকা ঋণ এবং বেকার জেলেদের সন্তানদের প্রশিক্ষণ দিয়ে চাকরির ব্যবস্থা করা হয়েছে। দাদনের ভয়াবহতা থেকে জেলেদের মুক্তি দিতে ওই প্রকল্পের অধীনে ইতিমধ্যে ৩০ জেলের মধ্যে পরিবেশবান্ধব জাল বিতরণ করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত