Ajker Patrika

‘আমরা রোহিঙ্গাদের থেকেও খারাপ অবস্থায় আছি’

অষ্টগ্রাম (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
আপডেট : ৩০ নভেম্বর ২০২১, ১৩: ৪৩
‘আমরা রোহিঙ্গাদের থেকেও  খারাপ অবস্থায় আছি’

মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের চেয়েও সুযোগ-সুবিধার দিক থেকে তাঁদের অবস্থা খারাপ বলে মনে করেন কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের বেদে সম্প্রদায়ের মানুষেরা। বেদে সর্দার নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তাঁবু করে থাকি। কারও ঘর নাই, কারও বাড়ি নাই। আমরা ভাসমান মানুষ বলে, কোনো সহায়তাই আমাদের ভাগ্যে জুটে না। আমরা রোহিঙ্গাদের থেকেও খারাপ অবস্থায় আছি। পেশার কারণে চেয়ারম্যান-মেম্বররা সহায়তা করে না। প্রধানমন্ত্রীর ঘর-বাড়ি দেওয়ার তালিকায় আমাদের নাম থাকে না।’

কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ মার্কেটের খোলা চত্বর। সেখানে তাঁবু টানিয়ে গাদাগাদি করে বাস সাতটি বেদে পরিবারের। সব মিলিয়ে সদস্য ৪৫ জন। এর মধ্যে দুটি কিশোর ও ২৫টি শিশু রয়েছে। সেখানে সরকারি সুবিধা-সুবিধা পৌঁছায় না ইঙ্গিত করেই এসব কথা বলেন, বেদে সরকার নজরুল।

সম্প্রতি সরেজমিনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ মার্কেটের খোলা চত্বরে দেখা যায়, ১২ ফুট দৈর্ঘ্য ৬ ফুট প্রস্থ আর ৪ ফুট উচ্চতার প্রতিটি তাঁবুতে বেদে পরিবারের সদস্যরা গাদাগাদি করে বাস করছেন। তাঁবুর ওপর রয়েছে সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল। শীতে বাড়তি উষ্ণতার জন্য তাঁবুর মেঝেতে খড় বিছিয়ে নেওয়া হয়েছে।

বেদেরা জানান, তাঁরা জীবিকার তাগিদে এগ্রাম-ওগ্রামে ঘুরে বেড়ান। ভাসমান এ সব মানুষ, অধিকাংশ ক্ষেত্রে বঞ্চিত হন সরকারি সহায়তা থেকে। তাঁবুর অভিভাবকেরাও নামমাত্র শিক্ষিত। আর তাঁদের শিশুরা বঞ্চিত হয় শিক্ষার আলো থেকে। প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতা মূলক হলেও, ভাসমান জীবনের কারণে বেদে সম্প্রদায়ের শিশুরা বড় হচ্ছে শিক্ষার আলো ছাড়া।

শিশু-কিশোর আছে ২৭ জন। শিশুরা প্রাক-প্রাথমিক ও দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত ৪ থেকে ৬ মাস স্কুলে গেলেও, এখন সময় কাটে তাঁবু প্রাঙ্গণে খেলাধুলা আর মোবাইল ফোনে নাটক সিনেমা দেখে।

তাঁবুর কাছে কথা হয় রুমানা আক্তার নামের এক নারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা পড়ালেহা (লেখা) করমু কোন সময়? জন্মের পর থেইকাই বাপ-মায়ের সঙ্গে গ্যারামে গ্যারামে থাহি। একখানে না-থাকলে, ইশকুলে যামু কেম্নে? তবু টু-থ্রি পর্যন্ত পড়ছি। আমাদের বিয়েও হয় লেহাপড়া না জানা মানুষের লগে, হেরাও এমন।’

তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা, চার সন্তানের জনক আবিদ হাসান বাদল বলেন, ‘ঘর নাই। বাড়ি নাই। মাথা গুজার ঠাঁই নাই। জন্মের পর থাইক্যা বাপ-মাকে দেখে দেখে এই জীবনে অভ্যাস হয়ে গেছে। তাই খারাপ লাগে না। পেটের দায়ে সকালে বউ যায় গাঁও (রোজগার) করতে। আমি যাই সাপ খেলা দেখাইতে। পোলাপানরে পড়ামু কোন সময়? আইজ এইখানে তো কাইল ওইখানে যাই।’

জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক কামরুজ্জামান খান বলেন, ‘বেদে ও অনগ্রসর সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ ভাতা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত