Ajker Patrika

হাইব্রিড জাতের ধানে ঝোঁক

খুলনা প্রতিনিধি
আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৩: ৩২
হাইব্রিড জাতের ধানে ঝোঁক

খুলনায় পুরোদমে চলছে বোরো আবাদ। খাদ্যঘাটতি ও চালের আমদানি কমাতে অধিক উৎপাদনের আশায় বোরো আবাদে নেমেছেন দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ছয় লাখ কৃষক।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ মৌসুমে ২ লাখ ৪০ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে বোরোর চাষ হয়েছে। অধিক উৎপাদনের আশায় কৃষকেরা ঝুঁকছেন হাইব্রিড জাতের প্রতি। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ লাখ ৫৯ হাজার ১৩৩ মেট্রিক টন।

আরও জানা গেছে, খুলনা জেলায় ৬০ হাজার ১৫০ হেক্টর, সাতক্ষীরা জেলায় ৭৬ হাজার হেক্টর, বাগেরহাট জেলায় ৫৬ হাজার ১৪০ হেক্টর এবং নড়াইল জেলায় ৪৮ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার অতিরিক্ত উপপরিচালক মহাদেব চন্দ্র সাহা জানান, দক্ষিণাঞ্চলের খাদ্যঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে জেলার ডুমুরিয়া, ফুলতলা, পাইকগাছা ও বটিয়াঘাটা উপজেলায় ৫০ কেজি বঙ্গবন্ধু জাতের বোরো বীজ বিনা মূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট পাঁচ বছরের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এ জাতের বীজকে জাতীয় বীজ বোর্ডের মাধ্যমে বাজারে ছাড়ার অনুমতি দিয়েছে। এ জাতের ধানের জীবনকাল ১৪৮ দিন। এ জাতের ধানের দানা ব্রি-৪৯, নাজিরশাইল ও জিরা ধানের মতো। হেক্টরপ্রতি ফলন ৭.৭ মেট্রিক টন। উপযুক্ত পরিচর্যা ও অনুকূল পরিবেশে হেক্টরপ্রতি ৮.৮ মেট্রিক টন উৎপাদন হবে। ব্রি-ধান-৭৪ জাতের চেয়ে এ জাতের ফলন ১৯ শতাংশ বেশি এবং এর খেতে তিন কিস্তিতে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হয়। বঙ্গবন্ধু জাতের ধানে রোগ বালাই ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণ প্রচলিত জাতের চেয়ে অনেক কম।

তীব্র শীত উপেক্ষা করে ডুমুরিয়ার চুকনগর বিলে বোরো ধানের চারা রোপণ করছেন কৃষকেরা। গতকাল সকালে তোলা ছবিকরোনোকালীন ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবং কৃষককে উৎসাহিত করতে বীজ ক্রয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ভর্তুকি দিয়েছে। ব্রি-২৮, ২৯, ৫৫, ৬৩, ৫৮, ৬৭, ৮১, ৮৪ জাতের বীজের জন্য কেজিপ্রতি তিন টাকা এবং এসএলএইটএইচ নামের হাইব্রিড বীজের জন্য কেজিপ্রতি ১০ টাকা ভর্তুকি দিয়েছে। হাইব্রিড জাতের প্রতি কেজির মূল্য ছিল ২৩০ টাকা। অন্যান্য জাতের বীজের প্রতি কেজির মূল্য ছিল যথাক্রমে ৪৯, ৫০ ও ৫৪ টাকা।

এদিকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাইব্রিড বীজের চারা দিয়েও বোরো ধানের আবাদ করছেন অনেক চাষি। সাতক্ষীরার চাষিরা ভারতীয় বীজের চারা বপন করেছেন। ফলে খুলনার ফুলতলা গুদামে বিএডিসির ১ হাজার ৯৭ মেট্রিক টন বোরো বীজ অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে রয়েছে এবং ওই বীজ নিলামে তোলা হয়েছে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) (বীজ) সূত্রে জানা গেছে, খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার জন্য এবার ৩ হাজার মেট্রিক টন বীজ ধান বরাদ্দ করা হয়। ১ হাজার ৯১০ মেট্রিক টন বিক্রি হয়েছে। ব্রি-২৮, ২৯, ৫০ সহ কয়েকটি জাতের ১ হাজার ৯৭ মেট্রিক টন বীজ ধান অবিক্রীত অবস্থায় রয়েছে।

ডুমুরিয়া উপজেলার ধানচাষি হান্নান শেখ বলেন, ‘পরপর দুবছর করোনায় পরিবহন সংকটে খুলনাঞ্চলের কৃষকেরা ভালো দামে বোরো ধান বিক্রি করতে পারেননি। এ ছাড়া কৃষকেরা ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ও ইয়াসে বড় ধরনের ধাক্কা খান। লোকসান কাটিয়ে উঠতে এবং খাদ্যঘাটতি পূরণে কৃষক এখন কোমর বেঁধে বোরো আবাদে নেমেছেন।’

বিএডিসি (বীজ), খুলনার উপপরিচালক কে এম আবুল কালাম বলেন, ‘এবার স্থানীয় জাতের পাশাপাশি ভারতীয় বীজ ধানের চাহিদা ছিল। সাতক্ষীরা জেলায় ভারতীয় বীজের চাহিদা বেশি ছিল। খুলনা ও বাগেরহাটে বেসরকারি কোম্পানির হাইব্রিড জাতের বীজ বেশি বিক্রি হওয়ায় সরকারি বীজের চাহিদা কম ছিল।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত