মৃত্যুঞ্জয় রায়
আমরা পৃথিবীতে দেড় শ বছরের মধ্যে একটি উষ্ণতম বছরকে বিদায় জানিয়েছি ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ সূর্যাস্তের মাধ্যমে, বরণ করে নিয়েছি সূর্যোদয়ের মাধ্যমে আর একটি নতুন বছরকে। ‘ক্লাইমেট সেন্টার’ নামের একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের গবেষকেরা গত জলবায়ু সম্মেলনে প্রকাশ করা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, ২০২২ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে যে তাপমাত্রা ছিল, তা ১৮৫০ সাল থেকে ১৯০০ সালের গড় তাপমাত্রা থেকেও ১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। গত বছর বিশ্বজুড়ে প্রতি চারজনের একজন এই তাপপ্রবাহের মুখোমুখি হয়েছেন, যা কমপক্ষে পাঁচ দিন স্থায়ী ছিল। এর প্রভাবে আমরা গত বছর জাপানে দেখেছি উষ্ণতম গ্রীষ্মকাল এবং অস্ট্রেলিয়ায় উষ্ণতম শীতকাল। ভারী বৃষ্টিতে তলিয়েছে ঢাকা, রাজশাহী, নিউইয়র্ক শহর। তাপমাত্রা বাড়ার কারণে বিশ্বব্যাপী বেড়েছে রোগব্যাধির প্রকোপ এবং নানা রকমের প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
যদি একটু ফিরে তাকাই, তাহলে দেখতে পাই যে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে সূর্যাস্তের মতোই অনেক দেশে, অনেক পরিবারে অনেক মানুষেরও জীবনের অস্ত ঘটেছে, আঁধার নেমে এসেছে প্রকৃতি ও পরিবেশে। এ বছরই আমরা সবচেয়ে বেশি বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা রেকর্ড করেছি, পৃথিবীর বুকে অতীতের তুলনায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেশি ঘটেছে। ভূমিকম্প, দাবানল, ঘূর্ণিঝড়, ঝড়, তাপপ্রবাহ, খরা, বন্যা ইত্যাদি দুর্যোগে সারা বিশ্ব বিপর্যস্ত হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যেখানে সাধারণত বৃষ্টি হয় না, সেখানে হয়েছে বন্যা; যেখানে বরফ পড়ে, সেখানে বরফ নেই। ভূমিকম্পের প্রকোপে কেঁপেছে অনেক দেশ; ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস যেন এখন আর কোনো মৌসুম মানছে না। আবহাওয়ার এই বিরূপ ও অস্বাভাবিক আচরণ আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। এটা এমন না যে পৃথিবীতে এসব দুর্যোগ গত বছরই ঘটেছে। অতীতের সব বছরে কোথাও না কোথাও এসব হয়েছে। কিন্তু এসব দুর্যোগের পরিমাণ ও তীব্রতা দিনে দিনে বাড়ছে। ভাবনার বড় বিষয় হলো, এসব দুর্যোগ গত বছরই ঘটেছে সবচেয়ে বেশি। শুধু একটি দেশের দুর্যোগজনিত ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যান থেকেই তা বোঝা যায়। বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে ঘটেছে অন্তত ১৮টি বড় দুর্যোগ, যার প্রতিটিতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১ বিলিয়ন ডলারের ঊর্ধ্বে। প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্রে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগে গড় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপিত হয়েছে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার, বিগত দশকে যার গড় পরিমাণ ছিল বছরে ১২.৮ বিলিয়ন ডলার।
কপ-২৮ জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে তাই এসব জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সহায়তার জন্য গঠন করা হয়েছে ‘ক্ষয়ক্ষতির তহবিল’। এসব তহবিল ব্যবহার করে হয়তো দুর্যোগজনিত ক্ষতি কমানোর প্রয়াস নেওয়া যাবে, কিন্তু সব ক্ষতি কি পূরণ করা যায়? গত বছর বিশ্বে ঘটে যাওয়া দুর্যোগগুলোর কথা বলে শেষ করা যাবে না। উল্লেখযোগ্য কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগের দিকে একটু ফিরে দেখা যাক।
দাবানল: যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপের মাইউতে ৮ আগস্ট ২০২৩ তারিখে শুরু হওয়া দাবানল চলে তিন দিন। সেটিকে বলা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানল হিসেবে। এতে শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে, শহরের ৮০ ভাগ এলাকা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাসিফিক ডিজাস্টার সেন্টার ও ফেডারেল ইমারজেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি যৌথভাবে সেই দাবানলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে ৫.৫২ বিলিয়ন ডলার।
বন্যা: মে মাসের ২ তারিখের রাতে রুয়ান্ডার উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে বন্যা শুরু হলে তাতে নিমেষেই ভেঙে যায় ৫ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি, মারা যায় কমপক্ষে ১২৯ জন। মে মাসে সংঘটিত আকস্মিক বন্যায় কঙ্গোতে মারা গেছে ৪৩৮ জন, উদ্বাস্তু হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। আফ্রিকায় গত বছর ভারী বৃষ্টিপাত ও বন্যা আগের তুলনায় বেশি হয়েছে। ভারতের সিকিম ও উত্তর প্রদেশে এবং চীনেও দেখা দিয়েছিল ব্যাপক বন্যা পরিস্থিতি। লিবিয়ায় ১০ সেপ্টেম্বর ড্যানিয়েল ঝড়ের তাণ্ডবে ভূমধ্যসাগরীয় শহর দেরনায় বৃষ্টি ও বন্যায় ৪৩৫২ জন মারা গেছে বলা হলেও প্রায় ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়, ৮ হাজারের বেশি মানুষ নিখোঁজ হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়: মে মাসের ১৪ তারিখে ঘূর্ণিঝড় মোখা ১৩০ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানে মিয়ানমারে, যাতে প্রাণহানি ঘটে অন্তত ১৪৫ জনের। মালাউতে মার্চে সংঘটিত ঘূর্ণিঝড়ে মারা গেছে ৬৭৯ জন। এ বছর বাংলাদেশেও তুলনামূলকভাবে বেশি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছে।
ভূমিকম্প: নভেম্বরের ৩ তারিখে নেপালে ৫.৬ মাত্রার এক শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে দেশটি। এতে প্রাণ হারায় কমপক্ষে ১৫৭ জন। নেপালে ২০১৫ সালে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্পে প্রাণ হারিয়েছিল প্রায় ৯ হাজার জন। অক্টোবরের ৭ তারিখে সংঘটিত আফগানিস্তানে ৫.৯ মাত্রার ভূমিকম্পে মারা গেছে ১ হাজার ৪৮০ জন, আহত হয়েছে ৯ হাজার ২৪০ জন। মরোক্কোয় ৮ সেপ্টেম্বর ৬.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রাণ হারিয়েছে ২৯৪৯ জন এবং প্রায় ৬ হাজার মানুষ আহত হয়েছে। তবে তুরস্ক ও সিরিয়ায় গত বছর সংঘটিত ভূমিকম্পে প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ৫৫ হাজার মানুষ। সিরিয়া সীমান্তের কাছে তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ৬ ফেব্রুয়ারি শক্তিশালী ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে এই মহাদুর্যোগ নেমে আসে। এটি ছিল তুরস্কের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প এবং মৃত্যুর ঘটনা। এর আগে সে দেশে ১৯৩৯ সালে ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে মারা যায় প্রায় ৩২ হাজার মানুষ। গত বছর আইসল্যান্ডে দেখা গেছে সিরিজ ভূমিকম্পের মতো ঘটনা। দেশটিতে ১৪ ঘণ্টায় ৮০০ বার ভূমিকম্প হয়েছে। যদিও এর তীব্রতা ছিল কম, সে জন্য ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও ছিল কম। কিন্তু এটিও আমাদের জন্য এক সতর্কসংকেত।
তাপপ্রবাহ: গত বছর ইউরোপেও দেখা গেছে চরম বৈরী আবহাওয়া। ইউরোপের অনেক দেশের ওপর দিয়ে গ্রীষ্মকালে বয়ে গেছে চরম তাপপ্রবাহ। এতে ফ্রান্সে ভূগর্ভ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সেখানকার কৃষিতে নেমে আসে শনির দশা। তাপপ্রবাহের প্রভাবে ইতালির গারডা হ্রদে পানির স্তর আগের বছরের এই সময়ের চেয়ে ৭০ সেন্টিমিটার নিচে নেমে গেছে, স্বাভাবিকের চেয়ে আল্পসে ৬৩ শতাংশ কম বরফ পড়েছে। এতে সে দেশে সেচের পানির সংকট দেখা দেওয়ায় ফসল চাষে বেশ সমস্যা হয়েছে, বিশেষত ধান চাষ অনেক কমে গেছে, এমনকি ভেনিসের খালগুলো শুকিয়ে গেছে। স্পেনেও এপ্রিলে লক্ষ করা গেছে তাপপ্রবাহ। অনেক জলাশয়ের পানি শুকিয়ে লবণাক্ত হয়ে পড়েছে। যুক্তরাজ্যে ১৯৯৩ সালের পর গত বছরের ফেব্রুয়ারি ছিল সবচেয়ে শুষ্কতম মাস।
খরা: বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন দেশে গত বছর চরম খরা পরিস্থিতি বিরাজ করেছে। কানাডার বিস্তীর্ণ অঞ্চল পুড়েছে দাবানলে। বিগত ৮০ বছরের মধ্যে মে-জুন মাসে সে দেশে গড় তাপমাত্রা সর্বোচ্চ হওয়ায় সেখানে খরা, জমা বরফ গলে যাওয়া এবং ফসলের খেতে অধিক হারে পঙ্গপালের বা ঘাসফড়িংয়ের আক্রমণ লক্ষ করা গেছে।
সারকথা: জলবায়ু পরিবর্তনের এরূপ ঝুঁকি দিনে দিনে বাড়ছে। আমরা আশা করব, ২০২৪ সাল যেন তুলনামূলকভাবে কম দুর্যোগের বছর হয়। এ জন্য প্রতিটি দেশকেই বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধির লাগাম কষে টেনে ধরতে হবে, বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে হবে জরুরিভাবে। বিবেচনায় নিতে হবে কপ-২৮ সম্মেলনের ঘোষণাগুলো।
লেখক: কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক
আমরা পৃথিবীতে দেড় শ বছরের মধ্যে একটি উষ্ণতম বছরকে বিদায় জানিয়েছি ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ সূর্যাস্তের মাধ্যমে, বরণ করে নিয়েছি সূর্যোদয়ের মাধ্যমে আর একটি নতুন বছরকে। ‘ক্লাইমেট সেন্টার’ নামের একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের গবেষকেরা গত জলবায়ু সম্মেলনে প্রকাশ করা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, ২০২২ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে যে তাপমাত্রা ছিল, তা ১৮৫০ সাল থেকে ১৯০০ সালের গড় তাপমাত্রা থেকেও ১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। গত বছর বিশ্বজুড়ে প্রতি চারজনের একজন এই তাপপ্রবাহের মুখোমুখি হয়েছেন, যা কমপক্ষে পাঁচ দিন স্থায়ী ছিল। এর প্রভাবে আমরা গত বছর জাপানে দেখেছি উষ্ণতম গ্রীষ্মকাল এবং অস্ট্রেলিয়ায় উষ্ণতম শীতকাল। ভারী বৃষ্টিতে তলিয়েছে ঢাকা, রাজশাহী, নিউইয়র্ক শহর। তাপমাত্রা বাড়ার কারণে বিশ্বব্যাপী বেড়েছে রোগব্যাধির প্রকোপ এবং নানা রকমের প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
যদি একটু ফিরে তাকাই, তাহলে দেখতে পাই যে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে সূর্যাস্তের মতোই অনেক দেশে, অনেক পরিবারে অনেক মানুষেরও জীবনের অস্ত ঘটেছে, আঁধার নেমে এসেছে প্রকৃতি ও পরিবেশে। এ বছরই আমরা সবচেয়ে বেশি বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা রেকর্ড করেছি, পৃথিবীর বুকে অতীতের তুলনায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেশি ঘটেছে। ভূমিকম্প, দাবানল, ঘূর্ণিঝড়, ঝড়, তাপপ্রবাহ, খরা, বন্যা ইত্যাদি দুর্যোগে সারা বিশ্ব বিপর্যস্ত হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যেখানে সাধারণত বৃষ্টি হয় না, সেখানে হয়েছে বন্যা; যেখানে বরফ পড়ে, সেখানে বরফ নেই। ভূমিকম্পের প্রকোপে কেঁপেছে অনেক দেশ; ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস যেন এখন আর কোনো মৌসুম মানছে না। আবহাওয়ার এই বিরূপ ও অস্বাভাবিক আচরণ আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। এটা এমন না যে পৃথিবীতে এসব দুর্যোগ গত বছরই ঘটেছে। অতীতের সব বছরে কোথাও না কোথাও এসব হয়েছে। কিন্তু এসব দুর্যোগের পরিমাণ ও তীব্রতা দিনে দিনে বাড়ছে। ভাবনার বড় বিষয় হলো, এসব দুর্যোগ গত বছরই ঘটেছে সবচেয়ে বেশি। শুধু একটি দেশের দুর্যোগজনিত ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যান থেকেই তা বোঝা যায়। বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে ঘটেছে অন্তত ১৮টি বড় দুর্যোগ, যার প্রতিটিতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১ বিলিয়ন ডলারের ঊর্ধ্বে। প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্রে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগে গড় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপিত হয়েছে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার, বিগত দশকে যার গড় পরিমাণ ছিল বছরে ১২.৮ বিলিয়ন ডলার।
কপ-২৮ জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে তাই এসব জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সহায়তার জন্য গঠন করা হয়েছে ‘ক্ষয়ক্ষতির তহবিল’। এসব তহবিল ব্যবহার করে হয়তো দুর্যোগজনিত ক্ষতি কমানোর প্রয়াস নেওয়া যাবে, কিন্তু সব ক্ষতি কি পূরণ করা যায়? গত বছর বিশ্বে ঘটে যাওয়া দুর্যোগগুলোর কথা বলে শেষ করা যাবে না। উল্লেখযোগ্য কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগের দিকে একটু ফিরে দেখা যাক।
দাবানল: যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপের মাইউতে ৮ আগস্ট ২০২৩ তারিখে শুরু হওয়া দাবানল চলে তিন দিন। সেটিকে বলা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানল হিসেবে। এতে শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে, শহরের ৮০ ভাগ এলাকা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাসিফিক ডিজাস্টার সেন্টার ও ফেডারেল ইমারজেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি যৌথভাবে সেই দাবানলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে ৫.৫২ বিলিয়ন ডলার।
বন্যা: মে মাসের ২ তারিখের রাতে রুয়ান্ডার উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে বন্যা শুরু হলে তাতে নিমেষেই ভেঙে যায় ৫ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি, মারা যায় কমপক্ষে ১২৯ জন। মে মাসে সংঘটিত আকস্মিক বন্যায় কঙ্গোতে মারা গেছে ৪৩৮ জন, উদ্বাস্তু হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। আফ্রিকায় গত বছর ভারী বৃষ্টিপাত ও বন্যা আগের তুলনায় বেশি হয়েছে। ভারতের সিকিম ও উত্তর প্রদেশে এবং চীনেও দেখা দিয়েছিল ব্যাপক বন্যা পরিস্থিতি। লিবিয়ায় ১০ সেপ্টেম্বর ড্যানিয়েল ঝড়ের তাণ্ডবে ভূমধ্যসাগরীয় শহর দেরনায় বৃষ্টি ও বন্যায় ৪৩৫২ জন মারা গেছে বলা হলেও প্রায় ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়, ৮ হাজারের বেশি মানুষ নিখোঁজ হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়: মে মাসের ১৪ তারিখে ঘূর্ণিঝড় মোখা ১৩০ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানে মিয়ানমারে, যাতে প্রাণহানি ঘটে অন্তত ১৪৫ জনের। মালাউতে মার্চে সংঘটিত ঘূর্ণিঝড়ে মারা গেছে ৬৭৯ জন। এ বছর বাংলাদেশেও তুলনামূলকভাবে বেশি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছে।
ভূমিকম্প: নভেম্বরের ৩ তারিখে নেপালে ৫.৬ মাত্রার এক শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে দেশটি। এতে প্রাণ হারায় কমপক্ষে ১৫৭ জন। নেপালে ২০১৫ সালে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্পে প্রাণ হারিয়েছিল প্রায় ৯ হাজার জন। অক্টোবরের ৭ তারিখে সংঘটিত আফগানিস্তানে ৫.৯ মাত্রার ভূমিকম্পে মারা গেছে ১ হাজার ৪৮০ জন, আহত হয়েছে ৯ হাজার ২৪০ জন। মরোক্কোয় ৮ সেপ্টেম্বর ৬.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রাণ হারিয়েছে ২৯৪৯ জন এবং প্রায় ৬ হাজার মানুষ আহত হয়েছে। তবে তুরস্ক ও সিরিয়ায় গত বছর সংঘটিত ভূমিকম্পে প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ৫৫ হাজার মানুষ। সিরিয়া সীমান্তের কাছে তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ৬ ফেব্রুয়ারি শক্তিশালী ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে এই মহাদুর্যোগ নেমে আসে। এটি ছিল তুরস্কের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প এবং মৃত্যুর ঘটনা। এর আগে সে দেশে ১৯৩৯ সালে ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে মারা যায় প্রায় ৩২ হাজার মানুষ। গত বছর আইসল্যান্ডে দেখা গেছে সিরিজ ভূমিকম্পের মতো ঘটনা। দেশটিতে ১৪ ঘণ্টায় ৮০০ বার ভূমিকম্প হয়েছে। যদিও এর তীব্রতা ছিল কম, সে জন্য ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও ছিল কম। কিন্তু এটিও আমাদের জন্য এক সতর্কসংকেত।
তাপপ্রবাহ: গত বছর ইউরোপেও দেখা গেছে চরম বৈরী আবহাওয়া। ইউরোপের অনেক দেশের ওপর দিয়ে গ্রীষ্মকালে বয়ে গেছে চরম তাপপ্রবাহ। এতে ফ্রান্সে ভূগর্ভ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সেখানকার কৃষিতে নেমে আসে শনির দশা। তাপপ্রবাহের প্রভাবে ইতালির গারডা হ্রদে পানির স্তর আগের বছরের এই সময়ের চেয়ে ৭০ সেন্টিমিটার নিচে নেমে গেছে, স্বাভাবিকের চেয়ে আল্পসে ৬৩ শতাংশ কম বরফ পড়েছে। এতে সে দেশে সেচের পানির সংকট দেখা দেওয়ায় ফসল চাষে বেশ সমস্যা হয়েছে, বিশেষত ধান চাষ অনেক কমে গেছে, এমনকি ভেনিসের খালগুলো শুকিয়ে গেছে। স্পেনেও এপ্রিলে লক্ষ করা গেছে তাপপ্রবাহ। অনেক জলাশয়ের পানি শুকিয়ে লবণাক্ত হয়ে পড়েছে। যুক্তরাজ্যে ১৯৯৩ সালের পর গত বছরের ফেব্রুয়ারি ছিল সবচেয়ে শুষ্কতম মাস।
খরা: বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন দেশে গত বছর চরম খরা পরিস্থিতি বিরাজ করেছে। কানাডার বিস্তীর্ণ অঞ্চল পুড়েছে দাবানলে। বিগত ৮০ বছরের মধ্যে মে-জুন মাসে সে দেশে গড় তাপমাত্রা সর্বোচ্চ হওয়ায় সেখানে খরা, জমা বরফ গলে যাওয়া এবং ফসলের খেতে অধিক হারে পঙ্গপালের বা ঘাসফড়িংয়ের আক্রমণ লক্ষ করা গেছে।
সারকথা: জলবায়ু পরিবর্তনের এরূপ ঝুঁকি দিনে দিনে বাড়ছে। আমরা আশা করব, ২০২৪ সাল যেন তুলনামূলকভাবে কম দুর্যোগের বছর হয়। এ জন্য প্রতিটি দেশকেই বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধির লাগাম কষে টেনে ধরতে হবে, বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে হবে জরুরিভাবে। বিবেচনায় নিতে হবে কপ-২৮ সম্মেলনের ঘোষণাগুলো।
লেখক: কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
৮ দিন আগেপাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
৮ দিন আগেভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে দুই চিরবৈরী প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনার পারদ ক্রমেই চড়ছিল। তা তুঙ্গে উঠল এবার পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা দিয়ে। পাশাপাশি সীমান্তেও দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে...
৮ দিন আগেঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫