Ajker Patrika

ইভিএমে অনড় কেন

সম্পাদকীয়
Thumbnail image

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম নিয়ে যেসব সমালোচনা বা বিতর্ক রয়েছে, তার সমাধান না করেই পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ দেড় শ আসনে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনার কথা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের এই ঘোষণায় নতুন করে আলোচনা-সমালোচনার সুযোগ সম্প্রসারিত হলো। মঙ্গলবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে কমিশনের ষষ্ঠ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ইসির অতিরিক্ত সচিব। তবে সর্বোচ্চ ১৫০ হলেও মোট কতটি আসনে চূড়ান্তভাবে ভোট গ্রহণ হচ্ছে, সেই প্রশ্নের উত্তর দেননি তিনি। কমিশন সব দিক বিবেচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেছেন, প্রাপ্যতা সাপেক্ষে অনূর্ধ্ব ১৫০টি আসনে ইভিএমে নির্বাচন করবে ইসি। তিনি এটাও জানিয়েছেন, বর্তমানে ইসির কাছে ১ লাখ ৫০ হাজার ইভিএম আছে। তা দিয়ে ৭০ থেকে ৭৫টি আসনে ভোট করা যাবে। ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট করতে হলে আরও ইভিএম লাগবে।

বাংলাদেশ যে ইভিএম ব্যবহার করে তার একেকটির দাম ২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। ইসি কর্মকর্তার হিসাব অনুযায়ী, দেড় শ আসনে ইভিএমে নির্বাচন করতে হলে আরও দেড় লাখ মেশিনের প্রয়োজন পড়বে। টাকার অঙ্কে যার খরচ দাঁড়ায় ৩ হাজার ৫১০ কোটি টাকা।

আওয়ামী লীগ তথা সরকার যেহেতু ইভিএমের পক্ষে, সেহেতু নতুন ইভিএম কেনায় অর্থসংকট হওয়ার কথা নয়। তবে কেউ এই যুক্তি তুলতে পারেন যে এখন দেশ একটি সংকটকাল অতিক্রম করছে। সরকার ব্যয়সংকোচন নীতি নিয়েছে। তাই এখন বাড়তি সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ইভিএমের জন্য ব্যয় না করে ৭০-৭৫ আসনেই ইভিএমে ভোট করলে ক্ষতি কি? যেহেতু দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ইভিএমে ভোট করার বিরুদ্ধে, সেহেতু ব্যয় হ্রাসের বিষয়টি সরকার বিবেচনা করলে দোষের কি?

ইভিএম নিয়ে বড় সমস্যা হলো এর ব্যবহারে ভোটাররা এখনো অভ্যস্ত হয়ে ওঠেননি। সে জন্য আস্থার ঘাটতি আছে। ধীরে ধীরে মানুষকে অভ্যস্ত করে, আস্থায় এনে তারপর সব আসনে ইভিএম ব্যবহার করলে তো ক্ষতি কিছু নেই। এবারই ইভিএম ব্যবহার না বাড়ালে দেশের নির্বাচনব্যবস্থা তো ভেঙে পড়ার আশঙ্কা নেই। জোর করে বা হুড়োহুড়ি করে কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়া ঠিক নয়।

তা ছাড়া, নির্বাচন কমিশন ঘটা করে বিভিন্ন দল, ব্যক্তি ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে মতবিনিময় করে যদি কারও মতামতকেই গুরুত্ব না দিয়ে শুধু সরকারের চাওয়ার দিকটাকেই বড় করে দেখে, তাহলে মতামতদাতাদের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ করা হয়। নির্বাচন কমিশনের নিজেদের সক্ষমতা আগে বিবেচনা করতে হবে। আইনে কমিশনকে যে ক্ষমতা দেওয়া আছে, তার যথাযথ প্রয়োগ করে মানুষকে নির্ভয়ে, প্রভাবমুক্ত হয়ে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার পরিবেশ নিশ্চিত করাই কমিশনের প্রধান কাজ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত