Ajker Patrika

ওষুধের দাম নিয়ে নৈরাজ্য

জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম
আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২: ১০
Thumbnail image

চট্টগ্রাম নগরীর ওষুধের দোকানে দাম নিয়ে নৈরাজ্য চলছে। একই ওষুধের দাম এক দোকান থেকে অন্য দোকানে ক্ষেত্রবিশেষে কয়েক গুণ বেশি রাখা হচ্ছে। এ নিয়ে ভোক্তাদের অভিযোগের অন্ত নেই। এরপরও এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নজরদারি নেই। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের দাবি, অলিগলির ফার্মেসিগুলোতে অনেক সময় নজরদারি সম্ভব হয়ে ওঠে না।

জেলার ফটিকছড়িতে একটি মানসিক রোগীদের ক্লিনিক পরিচালনা করেন মো. রেজাউল করিম। সম্প্রতি নিজ প্রতিষ্ঠানের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ও হাসপাতালের সামনের মেসার্স রাবেয়া ফার্মেসি থেকে ৯ ধরনের ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনেন। এর দিন কয়েক পর পাঁচলাইশের একটি ওষুধের দোকান থেকে একই ওষুধ-সরঞ্জাম কেনেন তিনি। এ সময় হিসাব মিলিয়ে দেখেন, চমেকের সামনের রাবেয়া ফার্মেসিতে তাঁর কাছ থেকে আগেরবার কয়েকগুণ বেশি দাম রাখা হয়েছে।

রেজাউল করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, রাবেয়া ফার্মেসি থেকে হালোপিড ইনজেকশন, পারকিনিল, অফসোনিল, ডরমেটরল, ডিপিএস, অ্যালকোহল প্যাড, হ্যাক্সিসলসহ ৯ ধরনের চিকিৎসা সামগ্রী কেনেন তিনি। সেদিন তাঁর কাছে দাম রাখা হয় ৪ হাজার ১০ টাকা। এর মধ্যে হালোপিড ইনজেকশন এক হাজার ৩৫০ টাকা ও অফসোনিলের দাম ৭০০ টাকা রাখা হয়।

কিছুদিন পর একই ওষুধ পাঁচলাইশের মেসার্স এ্যারোমা ফার্মেসি থেকে ২ হাজার ৩০৯ টাকা দিয়ে কেনেন রেজাউল। হালোপিড ইনজেকশনের দাম সেখানে রাখা হয় ৩২৪ টাকা। আর অফসোনিলের দাম রাখা হয় মাত্র ৮০ টাকা। অথচ রাবেয়া ফার্মেসিতে তাঁর কাছ থেকে যথাক্রমে চারগুণ ও নয় গুণ বেশি দাম রাখা হয়।

এ নিয়ে প্রশ্ন করলে গত ২৩ জানুয়ারি ওই রাবেয়া ফার্মেসি মালিকের সঙ্গে রেজাউল করিমের ঝগড়াও হয়। পরে তাঁর কাছ থেকে ওই দুটি ফার্মেসি থেকে কেনা ওষুধের বিপরীতে দেওয়া রসিদের কপি সংগ্রহ করেন এই প্রতিবেদক। রসিদ নিয়ে এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেসার্স রাবেয়া ফার্মেসির কর্তব্যরত ব্যক্তিরা বেশি টাকা রাখার বিষয়ে সদুত্তর দিতে পারেননি।

চমেকের আশপাশে অন্তত শতাধিক ওষুধের দোকান রয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের কাছ থেকে ওষুধের জন্য বেশির ভাগ দোকানেই বাড়তি টাকা নেওয়া হয়। হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডের চিকিৎসাধীন আছেন সাতকানিয়ার বাসিন্দা আবু মুছা। কিছুদিন আগে তাঁর পিত্তথলির পাথর অপসারণ করা হয়। চিকিৎসকেরা জরুরি ভিত্তিতে কিছু ওষুধ নিয়ে আসতে বলেন। রোগীর স্বজন মো. রফিক চমেকের কাছের একটি দোকান থেকে ওষুধগুলো কেনেন। সেখানে তাঁর কাছ থেকে যে দাম রাখা হয়, দুদিন পর একই ওষুধ আন্দরকিল্লা থেকে অর্ধেকের কম দামে কেনেন।

রফিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাসা আন্দরকিল্লা হওয়ায় হাসপাতালে আসার পথে ওষুধগুলো কেনার পর দেখি—চমেকের পূর্ব পাড়ের ফার্মেসিতে যে ওষুধের দাম ১ হাজার ৫৭০ টাকা রেখেছে, একই ওষুধ আন্দরকিল্লার দোকানে ৮২০ টাকা রেখেছে।’

শুধু চমেকের আশপাশের ওষুধের দোকানই নয়, নগরীর অলিগলিতে থাকা অন্য দোকানের বিরুদ্ধেও রয়েছে এমন অভিযোগ। ওষুধের গায়ে দাম না থাকার সুযোগে রোগীদের কাছ থেকে দাম বেশি রাখা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রে যে ওষুধের নাম লেখা থাকে তার বদলে অন্য কোম্পানির ওষুধও গছিয়ে দেওয়া হয়।

রোগীদের অভিযোগ, পুরো পাতা ওষুধ বিক্রি না করে তিনটা বা চারটা করে ওষুধ বিক্রির প্রবণতাও রয়েছে ফার্মেসিগুলোতে। এতে অনেক সময় ওষুধের মেয়াদ আছে কিনা—তাও বোঝা সম্ভব হয় না। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধও বিক্রি করে দেন দোকানিরা। এতে প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ আবদুর রব মাসুম আজকের পত্রিকাকে বলেন, চিকিৎসকেরা যে কোম্পানির ওষুধ লিখে দেন, ওই গ্রুপের ওষুধ অনেক সময় অন্য কোম্পানিরটি দেওয়া হয়। ভালো কোম্পানির না হলে সেই ওষুধ রোগীর শরীরে কাজ করবে না। তাঁরা সুস্থও হবেন না। এ ছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ খেলে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার সহকারী পরিচালক দিদার হোসেন বলেন, ‘আমরা সাধারণত সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে থাকি। ফার্মেসিগুলোতে অনিয়ম পেলেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। তবে সামগ্রিক বিষয়টি দেখে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর।’

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক সালমা সিদ্দিকা এ বিষয়ে বলেন, ‘চট্টগ্রামের বিভিন্ন অলিগলিতে অনেক ফার্মেসি রয়েছে। সবগুলোতে নজরদারি করা সম্ভব হয়ে উঠে না। তবুও আমরা অভিযোগে পেলেই অভিযান পরিচালনা করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত