Ajker Patrika

‘বই নষ্ট হয়ে গেছে, পড়ব কী’

ইয়াহ্ইয়া মারুফ, সিলেট
আপডেট : ০২ জুলাই ২০২২, ১৫: ০৩
‘বই নষ্ট হয়ে গেছে, পড়ব কী’

‘বন্যার পানিতে বই-খাতা সব নষ্ট হয়ে গেছে। ঘরে বুকপানি উঠছিল। আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলাম ১০ দিন। যেকোনো দিন পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করবে। পড়ব কী? পরীক্ষাই দিব কীভাবে বুঝতেছি না।’

এসব কথা বলে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার পান্ডারগাঁও ইউনিয়নের হাজী কনু মিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী সানজিদা সনিয়া লাকি।

এই অবস্থা শুধু লাকির নয়, সিলেট-সুনামগঞ্জের অধিকাংশ এসএসসি পরীক্ষার্থীর। এ ছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের বন্যাকবলিত প্রায় ৪ লাখ শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর বন্যায় প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের ক্ষয়ক্ষতির তথ্য নেই বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কাছে। তাঁরা এখনো তথ্য সংগ্রহ করছেন।

সিলেট শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বোর্ডের অধীন থাকা চার জেলায় এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী রয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৪৭৩ জন। এর মধ্যে বন্যাকবলিত জেলা সিলেটে ৪৩ হাজার ৮৪৪ জন ও সুনামগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫২ জন।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের সিলেট বিভাগীয় পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশেষ করে সিলেট ও সুনামগঞ্জের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর বই-খাতা বন্যার পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। সরকারি গুদামেও পর্যাপ্ত বই নেই। সাধারণত প্রতিটি শিক্ষাবর্ষের বই বিতরণের পর সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ মজুত থাকে।

সিলেট নগরীর চালিবন্দরের বাসিন্দা হৃদয় রবি দাস দ্বীপ। সে নগরীর বন্দরবাজার রাজা জিসি হাই স্কুল থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে। তার বইও ভেসে গেছে বানের জলে। দ্বীপ বলে, ‘পরিবারের সবার সঙ্গে ছড়ারপাড় রামকৃষ্ণ বালিকা বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলাম। বাসায় এসে দেখি ঘরে বই-খাতা, জ্যামিতি বক্স কিছুই নেই। সব পানিতে ভেসে গেছে।’

কোম্পানীগঞ্জ থানাবাজার এলাকার সুমাইয়া বেগম। কোম্পানীগঞ্জ থানা সদর মডেল সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে সে। গত ১৫ জুন তাদের ঘরে বন্যার পানি ঢোকে। এতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে তার সব বই-খাতা।

জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ সিলেটের আঞ্চলিক উপপরিচালক জাহাঙ্গীর কবির আহাম্মদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করার জন্য আমরা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি। এ ছাড়া যে যে এলাকা উদ্বৃত্ত বই রয়েছে, তা সংগ্রহ করে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রদানের ব্যবস্থা নিতে বলেছি। তবে সুনামগঞ্জ তো পুরাটাই ক্ষতিগ্রস্ত। সিলেটেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ কারণে উদ্বৃত্ত বইয়ে হবে না। আবার নতুন করে এখন বই ছাপানোও কঠিন। তাই ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের আমরা অনুরোধ করব, সম্ভব হলে তারা যেন সহপাঠীদের কাছ থেকে বই ম্যানেজ করে নেওয়ার চেষ্টা করে।’

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জহিরুল হক বলেন, ‘মজুত থাকা বইয়েরও ৫০ শতাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। এখন ক্ষতি পোষাতে সিলেট অথবা ঢাকা থেকে বই পাঠাতে হবে।’

সুনামগঞ্জ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘প্রাথমিক তথ্যানুযায়ী, আমাদের ছাতক, দোয়ারাবাজার ও সদর উপজেলার শতভাগ মজুত থাকা বই নষ্ট হয়ে গেছে। বাকি উপজেলাগুলোয় ২০ শতাংশ নষ্ট হয়েছে।’

প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ সিলেট বিভাগীয় পরিচালক ড. নাছিমা বেগম বলেন, বন্যায় পুরো বিভাগের ২ হাজার ৮৫৫ টির মধ্যে সুনামগঞ্জের সবগুলো বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানানোর জন্য বলা হয়েছে। প্রয়োজনে আমরা অন্য জেলা থেকে বই এনে তাদের দিব।’

সিলেট-সুনামগঞ্জে গত ১৫ জুন থেকে বন্যা শুরু হয়। ৪০ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রায় দেড় লাখ ঘরবাড়ি। কমতে শুরু করলেও, দুই জেলার বেশির ভাগ এলাকা এখনো প্লাবিত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত