Ajker Patrika

ফিটনেসবিহীন বাহনে ঝুঁকি

রিয়াদ হোসাইন, কালীগঞ্জ (গাজীপুর)
আপডেট : ২৪ মে ২০২২, ০৮: ৪৮
ফিটনেসবিহীন বাহনে ঝুঁকি

গাজীপুরের কালীগঞ্জ রাজধানী ঢাকার লাগোয়া একটি উপজেলা। অবকাঠামোগত উন্নয়নে কালীগঞ্জ যতটা এগিয়েছে, ঠিক ততটাই পিছিয়েছে পরিবহনব্যবস্থার মানের দিক থেকে। খোদ রাজধানীর সঙ্গে সরাসরি কোনো পরিবহনব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি এখানে। প্রতিদিন হাজারো যাত্রী ফিটনেসহীন বিভিন্ন যানে কালীগঞ্জ-টঙ্গী সড়ক দিয়ে গন্তব্যে পাড়ি দিচ্ছেন। যে কারণে বাড়ছে সড়কে দুর্ঘটনা। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে হতাশা থাকলেও শিগগির হচ্ছে না কোনো সুরাহা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কালীগঞ্জ থেকে রাজধানী ঢাকা বেশি দূরে নয়। ফলে বিভিন্ন কাজে স্থানীয়রা প্রতিদিন যাতায়াত করেন সড়ক পরিবহনে। যে কারণে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সড়কে বাড়ছে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু পরিবহন ব্যবসায়ী নিজেদের ফিটনেসহীন গাড়ি সড়কে চালাচ্ছেন। বিকল্প কোনো পরিবহনব্যবস্থা না থাকায় অনেকটা বাধ্য হয়েই যাত্রীরা এসব পরিবহনে যাতায়াত করছেন। এতে করে বাড়ছে ঝুঁকি। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো সড়ক দুর্ঘটনার খবর যেন নিত্যদিনের স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জানা গেছে, কালীগঞ্জ-টঙ্গী সড়কে প্রতিদিন ২৫-৩০টি লেগুনা এবং ৮-১০টি (কেটিএল) বাস চলাচল করে, এগুলোর একটিরও ফিটনেস নেই। অদক্ষ এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকের দেখাও মেলে এসব পরিবহনে। প্রতিটি লেগুনার ইঞ্জিন পুরোনো হওয়ায় চলতি পথে হঠাৎ করেই তা বন্ধ হয়ে যায়। গাড়ির বডির রং খসে পড়ে গেছে, আসনগুলোর কাপড় ছিঁড়ে গিয়ে লোহার তারকাঁটা বের হয়ে আছে; এমন সব গাড়ির সংখ্যাই এখানে বেশি। কিছু কিছু লেগুনার দরজা পাটের রশি দিয়ে বেঁধেও চালানো হয়। বর্ষার দিনে বৃষ্টির পানি লেগুনার ভেতরে পড়ে। যাত্রীদের ভিজে ভিজে পাড়ি দিতে হয় তাঁদের গন্তব্যে। এত সবের মাঝেও যাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ রয়েছে পরিবহনশ্রমিকদের বিরুদ্ধে।

উপজেলার তুমলিয়া এলাকার বাসিন্দা শরীফ পাঠান বলেন, ‘আমার কর্মস্থল ঢাকার উত্তরায়। তাই আমাকে প্রতিদিনই যাতায়াত করতে হয়। সকালে রওনা দিয়ে গাড়ির জন্য দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। অনেকক্ষণ পরে লেগুনা বা বাস আসে। প্রতিটি বাহনের অবস্থাই খারাপ। সিটগুলো যেমন তেমন, ইঞ্জিনের আওয়াজ শুনলেই ভয় লাগে। মনে হয় যেন এখনই দুর্ঘটনা ঘটবে। আমাদের কিছু করার নেই, এসব পরিবহনে বাধ্য হয়েই উঠতে হয়।’

অপর যাত্রী আশরাফ আলী জানান, তিনি ঢাকায় ব্যবসা করেন। প্রতিদিন যাতায়াত করেন এই সড়কে। তিনি পরিবহনের অবস্থা খারাপ হওয়ার পাশাপাশি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়েরও অভিযোগ তোলেন। যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানো এবং অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনকে দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন তিনি। প্রশাসনের নজরদারির অভাবে এসব যানবাহন দিন দিন বাড়ছে, পাশাপাশি সড়কে দুর্ঘটনার পরিমাণও বাড়ছে।

কালীগঞ্জ থেকে টঙ্গী রুটের লেগুনাচালক রায়হান মিয়া বলেন, ‘আগে হেলপার ছিলাম। পরে উস্তাদের কাছ থেকে গাড়ি চালানো শিখেছি। এখন নিয়মিত গাড়ি চালাই। লেগুনা দেখতে পুরোনো হলেও ইঞ্জিন ভালো আছে। রাস্তার যেই অবস্থা, জ্যামের মধ্যেই দিন চলে যায়। সারা দিনে তিনটা সিঙ্গেল ট্রিপও হয় না। ভালো গাড়ি মালিক কেন নামাইব? সে তো তার জমার টাকাই তুলতে পারব না!’

আরেক চালক কাজী রাজীব জানান, ভাড়া বাড়ার প্রধান কারণ হলো সড়কের চাঁদাবাজি। এটাকে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে ভাড়া অনেক কমে যাবে।

কালীগঞ্জ বাজার বাসস্ট্যান্ডের সুপারভাইজার মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘নতুন গাড়ি যদি কেউ না নামান, কীভাবে যাত্রীসেবা দেব? যা আছে তা দিয়েই চেষ্টা করছি পরিবহনকে সচল রাখতে। আমরা গাড়ির মালিকদের বলি, গাড়ি যেন নিয়মিত পরীক্ষা করে রাস্তায় নামানো হয়।’

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসসাদিকজামান বলেন, ‘ফিটনেসবিহীন যানবাহনের ব্যাপারে শিগগিরই কাজ শুরু করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত