Ajker Patrika

চালের দাম আড়তে কমেছে আগেই, খুচরায় বহাল

আয়নাল হোসেন, ঢাকা
Thumbnail image

দেশে চালের মজুত পর্যাপ্ত। সে তুলনায় ক্রেতা কম। আড়ত ও মোকামে চালের দাম কমে এলেও খুচরা তথা ভোক্তা পর্যায়ে কমছে না। খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি, আগের বেশি দামে কেনা চাল শেষ না হওয়ায় তাঁরা কম দামে বেচতে পারছেন না। আবার কাছাকাছি বিভিন্ন দোকানেও দামের তারতম্য দেখা যায়। এর যৌক্তিক কোনো ব্যাখ্যাও দিতে পারেন না দোকানিরা। পাইকারি ও খুচরা বাজারে দামের তারতম্য কমাতে বাজারে নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন ব্যবসায়ী ও বিশ্লেষকেরা।

খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘খুচরা ব্যবসায়ীরা সব সময়ই এমনটা করে থাকেন। খুচরায় একেক দোকানেও দাম একেক রকম। এদের নৈতিক স্খলন হয়েছে। তাঁদের চরিত্র ভালো করতে হবে।’

বনশ্রী বি ব্লকের ৫ নম্বর সড়কের মীর জেনারেল স্টোরে গতকাল মঙ্গলবার প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৭৫ টাকা, নাজিরশাইল ৮০ টাকা এবং লতা ও হাসকি ৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। পাশেই আল্লাহর দান জেনারেল স্টোরে মিনিকেট ৭০ টাকা, আর সূচনা জেনারেল স্টোরে ৭২ টাকা।

দামের এই ফারাক কেন জানতে চাইলে মীর জেনারেল স্টোরের মামুন হোসেন বলেন, ‘আমাদের চালের মান ভালো। ভালো চালের দাম তেমন কমেনি।’ 
আল্লাহর দান স্টোরের নাসির উদ্দিন বলেন, দেশে পণ্যের দাম বাড়লেও পরে আর কমে না। চালের দাম যতটুকু কমেছে, তা-ই যথেষ্ট। 

সূচনা জেনারেল স্টোরের মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘আমরা তো আর লোকসান দিয়ে বিক্রি করুম না।’

আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের দাবি, গত বোরো ও আমন মৌসুমেই বিপুল পরিমাণ ধান-চাল রয়ে গেছে। এবার বোরো মৌসুমে বিপুল পরিমাণ ধান উৎপাদন হয়েছে। ফলে দেশে মজুত ও সরবরাহ পর্যাপ্ত। কয়েকজন আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ী জানান, গত বছর হাওরাঞ্চলে ফসলের ক্ষতি হওয়ায় তখন করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও স্বয়ংক্রিয় চালকলগুলো ধান-চাল সংগ্রহের অসম প্রতিযোগিতায় নেমেছিল। এতে বাজারে চালের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়েছিল। ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষ হতে পারে—এমন আশঙ্কার কথা প্রচার হওয়ায় দেশের অবস্থাসম্পন্ন অনেক মানুষ তিন-চার মাসের চাল একসঙ্গে কিনে রাখেন। এতে দামও বেড়ে যায়। তবে গত দুই মাসে খুচরা বাজার ছাড়া অন্যান্য স্তরে চালের দাম কেজিপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা কমেছে।

বাবুবাজারের আড়তদার আবদুর রশিদ বলেন, ‘বাজারে ক্রেতা না থাকায় চালের দাম প্রতিদিনই কমছে। অনেকে দুই-তিন মাসের চাল একসঙ্গে কিনেছেন। অনেকের চালে পোকা ধরায় তা উল্টো বিক্রির জন্য আমাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। গত দুই বছর উৎপাদন মৌসুমে নগদ টাকা দিয়েও চালকল মালিকদের কাছ থেকে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ পাইনি। কিন্তু এ বছর উল্টো মিলাররা ফোন করে চাল নিতে অনুরোধ করছেন।’

বাদামতলী এলাকার মেসার্স নিউ মুক্তা রাইস এজেন্সির মালিক দ্বীন মোহাম্মদ স্বপন জানান, মোকাম ও পাইকারি বাজারে বিপুল পরিমাণ চাল মজুত আছে। এমনকি কোনো কোনো খুচরা ব্যবসায়ীর কাছেও ৪০-৫০ বস্তা চাল মজুত আছে। তবে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। অনেকেই এখন ৫০ কেজির বস্তার পরিবর্তে ২০-২৫ কেজির বস্তা কিনছেন। দামের ব্যবধান কমাতে বাজারে নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, দেশে চালের সরবরাহে কমতি নেই। বাজার নিয়ন্ত্রণে আইন সংস্কার করা হচ্ছে।

নওগাঁ ধান-চাল আড়তদার সমিতির সভাপতি নীরদ বরণ সাহা বলেন, গত বছর উৎপাদন মৌসুমে দিনে ১২৫-১৫০ গাড়ি ধান বিক্রি হতো। এখন দিনে ২০-২৫ গাড়ি বিক্রি হচ্ছে, তা-ও বাকিতে।

রাজধানীর কয়েকজন পাইকারি ব্যবসায়ী জানান, আগে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ছিল ৭০-৭২ টাকা। বর্তমানে তা ৬০-৬২ টাকায় নেমেছে। কারওয়ান বাজারের বিসমিল্লাহ রাইস এজেন্সির জসিম উদ্দিন জানান, গত দেড়-দুই মাসে চালের দাম বেশ কিছুটা কমেছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, দেশের সার্বিক মুদ্রাস্ফীতির কারণে বাজারে পণ্যের দাম কমছে না। পাইকারি বাজার ও মোকামে চালের দাম কমলেও খুচরায় প্রভাব পড়তে কিছুটা দেরি হয়। তবে আড়ত ও মোকামের সঙ্গে খুচরা পর্যায়ের দাম সমন্বয় করা দরকার বলে তিনি মনে করেন।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক গবেষণা পরিচালক এম আসাদুজ্জামান বলেন, পাইকারি ও খুচরা দামের মধ্যে ব্যবধানের এই প্রথা শত বছরের পুরোনো। এতে রাজনৈতিক অর্থনীতি জড়িত। চালের দাম খুচরা বিক্রেতাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। এটি মূলত মিলার ও পাইকারদের হাতে থাকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত